ভারতে গত ২৭ বছরের মধ্যে রেকর্ডসংখ্যক বৃষ্টিপাতই কাল হল সিলেট সুনামগঞ্জে  

0
940
ভারতে গত ২৭ বছরের মধ্যে রেকর্ডসংখ্যক বৃষ্টিপাতই কাল হল সিলেট সুনামগঞ্জে  
দীর্ঘ সময় পানিতে থেকে শীতে কাঁপছে এক কিশোর।

মিনহাজ তানভীরঃ এক মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফায় বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জের মানুষ দিশেহারা।ভারতে গত ২৭ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের রেকর্ড কাল হল সিলেট সুনামগঞ্জে যার প্রভাব এই সপ্তাহে দেশের নিম্নাঞ্চলে আরও মারাক্তক আকারের আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সিলেট সুনামগঞ্জের বন্যা কবলিত এলাকায় ৫ টি মিশন নিয়ে শুরু করেছে উদ্ধার অভিযান।   

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে জানা যায় গত তিন দিনে বাংলাদেশের উজানে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে প্রায় আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ওই বৃষ্টির পানির ঢল বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সব কটি জেলায় প্রবেশ করেছে। একই সময়ে দেশের মধ্যে ও প্রচুর বৃষ্টি পাতের ফলে এ অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরও ভয়াবহ অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয় প্রশাসন।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের (আইএমডি) বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের চেরাপুঞ্জি বিশ্বের সবচেয়ে বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা জুন মাসে ১২২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর গত তিন দিনে সেখানে প্রায় আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটিও গত ২৭ বছরের মধ্যে তিন দিনে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।

বাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে কৃষকরা! পারাপারে নৌকার অভাব।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, চেরাপুঞ্জিতে আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে।

অন্যদিকে দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রধান নদী তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি দ্রুত বাড়ছে। এরই মধ্যে তিস্তা অববাহিকার চারটি সহ মোট ১২টি জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।

অপরদিকে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সিলেট সুনামগঞ্জের বেশির ভাগ এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। টেলিফোন নেটওয়ার্ক অকার্যকর হয়ে গেছে। অনেক স্থানে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ও বৈদ্যুতিক খুঁটি তলিয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ভয়াবহ বন্যায় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক তলিয়ে গেছে। সারা দেশের সঙ্গে সুনামগঞ্জের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় সিলেট ও সুনামগঞ্জের প্রায় পৌনে দুই লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন রয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বাসাবাড়ির মিটার পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় নগরের উপশহর এলাকায় এরই মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। দক্ষিণ সুরমা বিদ্যুতের সাবস্টেশনে পানি ওঠায় পুরো দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় বৃহস্পতিবার থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে। এ কারণেই ওই সমস্থ এলাকায় নেটওয়ার্ক বিঘ্নিত হয়ে মোবাইলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের সুত্রে আরও জানা গেছে, সিলেটের চার জেলায় পিডিবির অধীন প্রায় সাড়ে চার লাখ গ্রাহক আছেন। এর মধ্যে সিলেটের ১ লাখ এবং সুনামগঞ্জের ৯০ হাজার গ্রাহক বর্তমানে বিদ্যুৎহীন আছেন।

সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ও ২-এর জেনারেল ম্যানেজার দীলিপ চন্দ্র চৌধুরী ও সঞ্জীব কুমার রায় গণমাধ্যমকে জানান, সমিতির সিলেট-১-এর অধীনে থাকা ৪ লাখ ১৩ হাজার গ্রাহকের মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার গ্রাহক এবং সিলেট-২-এর অধীনে থাকা ২ লাখ ১২ হাজার গ্রাহকের মধ্যে অন্তত ৯০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন আছেন। এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের হিসাবে, শুক্রবার সকাল থেকে সিলেট বিভাগের সব কটি নদ-নদীর পানি ও উত্তরাঞ্চলে তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। দেশের বিভিন্ন নদ–নদীর ১০৬টি পয়েন্টের মধ্যে ৮৬টির পানি বাড়ছে, ২০টির কমছে।

বিভিন্ন দলে সেনাবাহিনী কাজ শুরু করে দিয়েছে।

এদিকে সিলেট সুনামগঞ্জের দুর্গত মানুষের মধ্যে মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। রানওয়ে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সিলেট বিমানবন্দরে সব ধরনের ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ হয়ে গেছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে হাঁটু পানি হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়াও পাশের জেলা নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও শেরপুর জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বহু গ্রামে পানি উঠেছে।

শহরে কিছু কিছু এলাকায় ত্রাণ হিসেবে পানি সরবরাহ করতে দেখা গেছে।

গত এক সপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে রংপুরে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চলসহ তিস্তা চরাঞ্চলের কয়েকটি এলাকায় পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫ হাজার বাড়িঘর। বন্যার কারণে এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। খাবার পানি, খাদ্যের তীব্র সঙ্কট দেখা দিলেও বানভাসির জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণের উদ্যোগ নেই বলে অনেকেই অভিযোগ করছে। যদিও প্রশাসন দাবী করছে সকল প্রকার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।