ভারতের কাছে ২৮রানে হেরে বাংলাদেশের বিদায়

    0
    232

    মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন মারমুখী ব্যাটিংয়ে সম্ভাবনা জাগিয়েও ভারতের কাছে ২৮ রানে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিল বাংলাদেশ। আর আসরে ষষ্ঠ জয় তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার পর দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করল ভারত।

    বার্মিংহামের এজবাস্টনে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করে দুই ওপেনার রোহিত শর্মার ১০৪ ও লোকেশ রাহুলের ৭৭ রানের সুবাদে ৯ উইকেটে ৩১৪ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে ভারত। ৩১৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ১২ বল বাকি থাকতেই বাংলাদেশ থেমেছে ২৮৬ রানে।

    বিশাল টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৯.৩ ওভারে দলীয় ৩৯ রানে ফেরেন তামিম ইকবাল। এবারের বিশ্বকাপে এখনও নিজের স্বভাবসূলভ ব্যাটিং করতে পারেননি দেশসেরা এ ওপেনার। ৩১ বলে ২২ রান করে আউট হন তিনি। তামিম ইকবাল আউট হওয়ার পর ৩৫ রানের ব্যবধানে ফেরেন অন্য ওপেনার সৌম্য সরকার। তার আগে ৩৮ বলে চারটি বাউন্ডারিতে ৩৩ রান করেন সৌম্য। তৃতীয় উইকেটে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ৪৭ রানের জুটি গড়তেই বিপদে পড়ে যান মুশফিকুর রহিম। যুজবেন্দ্র চাহালের বলে সুইপ শট খেলতে গিয়ে মোহাম্মদ সামির হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন জাতীয় দলের এই নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান।

    এরপর সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ৪১ রানের জুটি গড়তেই বিপদে পড়ে যান লিটন দাস। আগের বলে হার্দিক পান্ডিয়াকে ছক্কা হাঁকানোর ঠিক পরের শট বলে ক্যাচ তুলে দেন লিটন। সাজঘরে ফেরার আগে ২৪ বলে ২২ রান করেন তিনি।

    ছয় নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে হার্দিক পান্ডিয়ার অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফেরেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ইনিংসের শুরু থেকে দায়িত্বশীল ব্যাটিং করে দলকে খেলায় রেখে ছিলেন সাকিব আল হাসান। পান্ডিয়ার বলে ডাবল রান নেয়ার মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্বকাপে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরির পাশাপাশি চতুর্থ ফিফটি গড়েন বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার।

    দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ের দিনে তার ব্যাটে জয়ের ক্ষীণ স্বপ্ন দেখছিল টাইগার সমর্থকরা। ভালোয় ভালোয় খেলা সাকিব হঠাৎ করেই পান্ডিয়ার বলে ক্যাচ তুলে দেন। তার আগে ৭৪ বলে ছয়টি চারের সাহায্যে ৬৬ রান করেন সাকিব। তার বিদায়ে ৩৩.৫ ওভারে ১৭৯ রানে ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

    সপ্তম উইকেটে ৬৬ রানের জুটি গড়ে দলকে খেলায় ফেরানোর পাশাপাশি জয়ের স্বপ্ন দেখান সাব্বির রহমান রুম্মন ও সাইফউদ্দিন।

    শেষ দিকে জয়ের জন্য ৪২ বলে প্রয়োজন ছিল ৭০ রান। যে স্টাইলে সাব্বির-সাইফউদ্দিন ব্যাটিং করে যাচ্ছিলেন তাতে মনেই হয়েছিল জয় পাবে বাংলাদেশ। কিন্তু ৪৪তম ওভারে জযপ্রিত বুমরাহর বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফেরেন সাব্বির। ৩৬ বলে পাঁচটি বাউন্ডারিতে ৩৬ রান করে সাব্বির আউট হলে দুশ্চিন্তায় পরে যান টাইগার সমর্থকরা।

    এরপর একাই লড়াই করে যান সাইফউদ্দিন। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি মাশরাফি বিন মুর্তজা ও রুবেল হোসেন। যে কারণে ৩৮ বলে ৯টি বাউন্ডারির অপরাজিত ৫১ রান করেও দলকে জয় উপহার দিতে পারেননি এ অলরাউন্ডার।

    ভারতের পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ ১০ ওভারে ৫৫ রান দিয়ে তুলে নেন চারটি উইকেট। ১০ ওভারে ৬০ রান খরচায় তিনটি উইকেট তুলে নেন হার্দিক পান্ডিয়া। একটি করে উইকেট পান যুভেন্দ্র চাহাল, ভুবনেশ্বর কুমার এবং মোহাম্মদ শামি।

    এর আগে দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুলের ব্যাটে দাপুটে শুরু পায় তারা। যদিও শুরুতেই প্রতিপক্ষকে চেপে ধরার সুযোগ তৈরি করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তামিম ইকবালের ভুলে সুযোগটা কাজে লাগেনি বাংলাদেশের। ব্যক্তিগত ৯ রানে মুস্তাফিজের বলে তোলা রোহিতের ক্যাচ নিতে পারেননি তামিম।

    নিজেদের স্বপ্নকেই যেন মাটিতে ফেলে দেন বাংলাদেশ ওপেনার। জীবন ফিরে পাওয়ার সুযোগ পুরোপুরিভাবে কাজে লাগিয়েছেন ভারত ওপেনার। যা বাংলাদেশকে ভুগিয়েছে লম্বা সময়। চলতি বিশ্বকাপে চার ম্যাচে জীবন ফিরে পাওয়া রোহিত তিন ম্যাচেই সেঞ্চুরি করেছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষেও ভুল হয়নি তাঁর।

    ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান তুলে নিয়েছেন চলতি বিশ্বকাপে নিজের চতর্থ সেঞ্চুরি। ৯২ বলে সাতটি চার পাঁচটি ছক্কায় খেলেছেন ১০৪ রানের ঝলমলে এক ইনিংস। অন্য পাশে লোকেশ রাহুলও সমানে ব্যাট চালিয়েছেন। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৭৭ রান। উদ্বোধনী জুটি থেকে রেকর্ড ১৮০ রান পেয়ে যায় ভারত।

    এ সময় বাংলাদেশের বোলাররা কেবল চেষ্টাই করে গেছেন। এই জুটি ভাঙতে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা তাঁর সব বোলারকে দিয়ে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু লম্বা সময় ধরে অবলীলায় ব্যাটিং করে গেছেন রোহিত-রাহুল। সবাই যখন ব্যর্থ, সৌম্য সরকার তখন বাংলাদেশকে কিছুটা স্বস্তি এনে দেন। অনিয়মিত এই বোলারই রোহিতকে সাজঘরের পথ দেখিয়ে দেন।

    রোহিতকে ফেরানোর বাংলাদেশের অন্যান্য বোলাররাও ছন্দ ফিরে পান। কিছুক্ষণ পরই রাহুলকে বিদায় করেন ডানহাতি পেসার রুবেল হোসেন। তবে সবচেয়ে কার্যকর হয়ে ওঠেন মুস্তাফিজ। পুরোনো ছন্দে ভারত শিবিরে আঘাত হানতে থাকেন বাঁহাতি এই পেসার। ৫৯ রান খরচায় তুলে নেন ৫ উইকেট। তাঁর বোলিংয়ের সামনেই মূলত ধুঁকতে হয়েছে ভারতের পরবর্তী ব্যাটসম্যানদের।

    ভারতের দুই উইকেট পড়ার পর মাঝে সাকিব কেবল একটি উইকেট নিয়েছেন। শেষের ৫ উইকেট উঠেছে মুস্তাফিজের ঝুলিতে। এর মাঝেও ঋষভ পান্ত ৪১ বলে ৪৮ রানের দারুণ একটি ইনিংস খেলেন। শেষের দিকে ৩৫ রান করে ভারতকে ৩১৪ রানে পৌঁছে দেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।

    সাকিব ১০ ওভারে ৪১ রান খরচায় তুলে নেন একটি উইকেট। মোসাদ্দেক হোসেন ৪ ওভারে ৩২ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। সৌম্য সরকার ৬ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে তুলে নেন একটি উইকেট। রুবেল হোসেন ৮ ওভারে ৪৮ রানে নেন একটি উইকেট। মাশরাফি ৫ ওভারে ৩৬ রান খরচায় কোনো উইকেট পাননি। সাইফউদ্দিন ৭ ওভারে ৫৯ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। মুস্তাফিজ ১০ ওভারে ৫৯ রানে তুলে নেন পাঁচটি উইকেট।

    পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১৯ বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। আগামী ৫ জুলাই লর্ডসে বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে তিনটায় অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচটি।