ভারতকে ৭৯ রানে হারিয়ে ধারাবাহিক সাফল্যে দেশ

    0
    212

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,জুনঃ বাংলাদেশের ক্রিকেটে এক কালজয়ী দিন। ১০ বছর আগে এই দিনে বিশ্ব ক্রিকেটকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল হাবিবুল বাশারের বাংলাদেশ। কার্ডিফে আশরাফুলের ব্যাটে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।

    তারিখের হিসেবে কার্ডিফ, মিরপুর এক বিন্দুতে মিলে গেল। কালজয়ী না হলেও বৃহস্পতিবার মিরপুরে মাশরাফির বাংলাদেশ দেখাল ‘বড়ত্বপনার’ স্বরুপ। ওয়ানডেতে প্রতিষ্ঠিত শক্তির কাতারে নাম লেখালো টাইগাররা। ভরা বর্ষার মৌসুমে বাংলাদেশের ক্রিকেট তোড়ে ভেসে গেল মহাশক্তিধর ভারত। মিরপুরে বৃহস্পতিবার সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ভারতকে ৭৯ রানে হারাল বাংলাদেশ। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল মাশরাফি বাহিনী।
    প্রথমে ব্যাট করে ইনিংসের দুই বল বাকি থাকতে সবকটি উইকেট হারিয়ে ৩০৭ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে অভিষিক্ত মোস্তাফিজুর রহমানের বোলিং তোপে ৪৬ ওভারে ২২৮ রানে অলআউট হয় ভারত। ম্যাচ সেরা হন ৯.২ ওভারে এক মেডেনসহ ৫০ রানে ৫ উইকেট নেয়া মোস্তাফিজ। দুটো ক্যাচ শুরুতে ছাড়লেও শেষ পর্যন্ত উইকেটের পেছনে পাঁচটি ক্যাচ নিয়ে জয়ে বড় অবদান রাখেন মুশফিকও।

    ৩০৮ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ওপেনিং জুটিতেই ৯৫ রান তুলেছিল ভারত। দ্বিতীয় স্পেলে বোলিংয়ে এসে বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দেন তাসকিন। ১৬তম ওভারে তার বাউন্সারে দুবার জীবন পাওয়া ধাওয়ান (৩০) মুশফিককে ক্যাচ দেন। নিজের পরের ওভারে কোহলিকেও (১) ফেরত পাঠান তাসকিন। এই তরুণের জোড়া আঘাতেই ম্যাচে ফিরে আসে বাংলাদেশ।

    তাসকিনের পর নিজের দ্বিতীয় স্পেলে সাফল্য পান অভিষিক্ত তরুণ পেসার মোস্তাফিজুর রহমানও। স্লোয়ারে বিভ্রান্ত করে এই বাঁহাতি পেসার ফেরান রোহিত শর্মা ও আজিঙ্কা রাহানেকে। ২৬তম হাফ সেঞ্চুরি করা রোহিত ৬৩ রান করে মাশরাফির হাতে ক্যাচ দেন। নাসিরের অসাধারণ ক্যাচে ফিরেন রাহানে (৯)।

    ২৫তম ওভারে ন্যাক্কারজনক কর্মে লিপ্ত হন ভারতীয় অধিনায়ক ধোনি। রান নেয়ার সময় ইচ্ছাকৃত মোস্তাফিজকে ধাক্কা দেন তিনি। ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়েন মোস্তাফিজ। ওই ওভারের বাকি চারটি বল করেন নাসির। অবশ্য ঠিক পরের ওভারেই সাকিবের বলে সাজঘরে ধোনি (৫)। ১২৮ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে বসে ভারত।

    এরপর ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে রায়না-জাদেজা ৬০ রান যোগ করেন। এই জুটি শুধু ভারতের পরাজয়ের ব্যবধানই কমিয়েছে বলতে হয়। ৩৭তম ওভারে পরপর দুই বলে রায়না, অশ্বিনকে (০) দুরন্ত অফ কাটারে আউট করেছেন ব্যথা কাটিয়ে মাঠে ফিরে আসা মোস্তাফিজ। বোল্ড হওয়ার আগে রায়না ৪০ রান করেন। তবে এই তরুণের হ্যাটট্রিক পূর্ণ হতে দেননি ভুবনেশ্বর কুমার।

    নিজের পরের ওভারেই জাদেজাকে সৌম্যর ক্যাচ বানিয়ে অভিষেকেই পাঁচ উইকেটের কৃতিত্ব গড়েন মোস্তাফিজ। জাদেজা ৩২ রান করেন। ওয়ানডে অভিষেকে পাঁচ উইকেট পাওয়া দ্বিতীয় বোলার মোস্তাফিজ। তাসকিনও অভিষেকে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন। সেটি ভারতের বিপক্ষেই, ২০১৪ সালে মিরপুরে।

    ভুবনেশ্বর কুমারকে মাশরাফি ও উমেশ যাদবকে সাকিব আউট করলে শেষ হয় ভারতের ইনিংস। বাংলাদেশের মোস্তাফিজ ৫টি, তাসকিন-সাকিব দুটি করে উইকেট নেন।

    এর আগে টসজয়ী বাংলাদেশের শুরুটা ছিল এক কথায় র্দুদান্ত। তামিম-সৌম্যর ওপেনিং জুটি আশা জাগিয়েছিল বড় স্কোরের। যদিও ইনিংসের মাঝ পথে বৃষ্টির বিরতির কারণে নষ্ট হয় বড় স্কোরের সম্ভাবনা। তামিম, সৌম্য ও সাকিবের তিন হাফ সেঞ্চুরি এবং শেষ দিকে অধিনায়ক মাশরাফির ১৮ বলে ২১ রানের ইনিংসে তিনশো পার হয় বাংলাদেশের স্কোর।

    আকাশে মেঘের আনাগোনা, একাদশে চার পেসারের বিস্ময় নিয়েই শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের ইনিংস। ওপেনারদের ‘শাসন’ মার্কা ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। ১৪তম ওভারে মোহিত শর্মাকে চার মেরে ৩৮ বলে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরিও করে ফেলেন সৌম্য। বাংলাদেশের একশো রান পূর্ণ হয় ওই চারে। কিন্তু হাফ সেঞ্চুরির দুই বল পরই রানআউট হন এই তরুণ। তামিমের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে থেমে যায় সৌম্যর ৪০ বলে ৫৪ রান (৮ চার, ১ ছয়) অনিন্দ্য সুন্দর ইনিংসটি।

    ১০২ রানে থামে ওপেনিং জুটিও। যা ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সেরা ওপেনিং জুটির খেতাব পায়। এর আগে ২০১০ সালে সর্বোচ্চ ৮০ রানের জুটি গড়েছিলেন তামিম ও ইমরুল। সৌম্যর দুর্ভাগ্যজনক বিদায়ের ক্ষণিক পরই নামে বৃষ্টি। ইনিংসের ১৫.৪ ওভারের পর বৃষ্টিতে থেমে যায় ম্যাচ।

    বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ ছিল প্রায় এক ঘণ্টা। বৃষ্টির পর খেলা শুরু হতেই ১০ রানে দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ৩০তম হাফ সেঞ্চুরি করা তামিম ব্যক্তিগত ৬০ রানে (৭ চার, ১ ছয়) মিড অফে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরেন। দলীয় ১২৯ রানে অভিষিক্ত লিটন দাসও (৮) এলবির ফাঁদে পড়েছেন অশ্বিনের বলে। থিতু হননি মুশফিকও। ১৪ রান করে তিনিও অশ্বিনের শিকার হন।

    পঞ্চম উইকেটে দলের হাল ধরেন সাকিব ও সাব্বির। হঠাৎ খেই হারিয়ে ফেলা দলকে কক্ষপথে ফেরায় তাদের ৮৩ রানের জুটি। সাব্বিরকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন জাদেজা।  ৪৪ বলে ৪১ রানের (৫ চার, ১ছয়) ইনিংস খেলেন সাব্বির। বাংলাদেশের তিনশো রানের স্বপ্ন টিকেছিল সাকিবের ব্যাটে। ২৯তম হাফ সেঞ্চুরি করা সাকিব থামেন ৫২ রান করে। সাত নম্বরে এসে নাসির খেলেন ২৭ বলে ৩৪ রানের ইনিংস।

    মাশরাফি একপ্রান্ত আগলে রাখলেও রুবেল, তাসকিনরা আসা-যাওয়ার মাঝেই ছিলেন। ইনিংসের শেষ ওভারেও দুটি চার মারেন মাশরাফি। ভারতের অশ্বিন ৩টি, উমেশ যাদব-ভুবনেশ্বর কুমার ২টি করে উইকেট নেন।