বেনাপোল কাস্টম হাউসে এনজিও কর্মিদের শুল্কফাঁকির মহোৎসব

    0
    243

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৬জানুয়ারী, স্টাফ রিপোর্টার,বেনাপোলঃ বেনাপোল কাস্টমস হাউসের শুল্ক বিভাগে এনজিও কর্মী নামের দালাল সিন্ডিকেটের যোগসাজসে চলছে শুল্কফাঁকির মহোৎসব। নিতিমালানুযায়ী কাস্টমসে এনজিও কর্মী প্রবেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তোয়াক্কা করছেন না বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। বিনিময়ে উৎকোচ আদায় বেড়েই চলেছে বলে দাবি করেন কাস্টমস সংশ্লিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা।

    জানা যায়, বেনাপোল কাস্টমস শুল্ক বিভাগে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা এনজিও কর্মী নামের দালাল সিন্ডিকেটের যোগসাজসে নানা কৌশলে সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট শুল্ক বিভাগের অসাধু কর্মকর্তারা নিজের পকেট ভারী করতেই এনজিও কর্মী নামের দালাল সিন্ডিকেটকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখছেন। কাস্টমসের শুল্ক বিভাগ সমূহে ওই সিন্ডিকেট থাকায় সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বি ত হচ্ছেন। হারাচ্ছেন সাধারণ আমদানি কারক ব্যবসায়ীদের। অনৈতিক সুবিধা দিতে ব্যর্থ হয়ে ইতোমধ্যে অনেক সাধারণ ব্যবসায়ী বেনাপোল বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বলে জানালেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

    তথ্যানুসন্ধানে আরো জানা যায়, কাস্টমসের ২, ৩ ও ৪ নং গ্রুপের কর্মকর্তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তাদের যোগসাজে বহিরাগত হারুন, হোসেন আলী ও মাহাবুব গং ধরাকে সরাজ্ঞান করে ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে ফেলছেন। এরা সারাক্ষণ ওই সকল গ্রুপে অবস্থান নিয়ে নানা কৌশলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজে শুল্কফাঁকির পন্থা অবলম্বনে ব্যস্ত থাকে। এমনকি ওই সিন্ডিকেট পণ্যর এসএস কোড পরিবর্তন করেও শুল্কফাঁকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। যদিও ওই সকল গ্রুপের দায়িত্বপূর্ণ অভিযুক্তরা তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন।

    এদিকে, ওই সিন্ডিকেটের অন্যতম মাহবুব পাসপোর্ট যাত্রীদের থেকে আটক করা মালামাল ছাড় করাতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দোহায় দিয়ে লুটে খাচ্ছেন।

    নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মাহবুব কর্মকর্তাদের আস্থাভাজন। ওর ইচ্ছামত টাকা না দিলে আটক হওয়া যাত্রীর মালামালা ছাড় হয় না। মাহবুব ভয়ভীতি দেখিয়ে আটককৃত মালামালের সংখ্যা কমিয়ে মাল ফেরত প্রদান করছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েও অজ্ঞাত কারণে কেউ প্রতিকার পাচ্ছেন না।

    শুধু পাসপোর্ট যাত্রীদের আটকানো মালামালই নয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের আমদানিকৃত মালামালের ক্ষেত্রেও ঘটছে এমন ঘটনা। আর ওই সিন্ডিকেটের সাথে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব ভূলে পকেটস্থ করেছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। এতে ক্ষতিগ্রস্থ ও হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা।

    এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ ডিসেম্বর যশোরের নওয়াপাড়ার মজুমদার ট্রেডার্সের ভারত থেকে আমদানিকৃত ১শ’ মেট্রিকটন চিনিগুড়া (আতপ) চাউল নন বাসমতি হিসাবে কোড পরিবর্তন পূর্বক বিল- ৭২৩৪৩ অনুযায়ী সি এন্ড এফ ‘রাতুল এন্টার প্রাইজের’ মাধ্যমে ছাড় করার সকল ব্যবস্থা তৈরী হয়ে যায়। যেখানে শুল্কায়ক করা হয় মাত্র ৩৯০ ডলার। পরবর্তিতে গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে তা ভেস্তে গেলে প্রকৃত শুল্কায়ন হয় ৫৪০ ডলারে। এনিয়ে অভিযোগ ওঠে কাঁচামাল সেডের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইন্সপেক্টর আলমগীর হোসেন এর দিকে। অনৈতিক সুবিধা নিয়েই তিনি ওই মালামাল ছাড়া দিয়েছিলেন। সাধারণের অভিমত তানা হলে গোয়েন্দারা জানলেও পরিদর্শন করা মালামাল কিভাবে অন্য কোডে চালান হয়ে বের হচ্ছিল। সরকার বি ত হচ্ছিল ১৫০ ডলারের। এইভাবে চলছে শুল্কফাঁকির মহোৎসব।

    অভিযোগ রয়েছে কাঁচামাল আমদানি হলে পরিদর্শনের আগেই ওই ইন্সপেক্টরকে কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা না দিলে তিনি পরিদর্শন পরিক্ষিত স্বাক্ষর করেন না। ব্যবসায়ীদের অভিমত ওটা এখন ওপেন সিক্রেট।

    তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ফাইল প্রতি সংশ্লিষ্ট সুপারকে ২ হাজার ও ইন্সপেক্টরকে ১ হাজার করে টাকা দিতে হয়। বৈধভাবে মালামাল আমদানি করে ওই টাকা না দিলে সাধারণ ব্যবসায়ীরা চরম হয়রানির স্বীকার হয়ে থাকে। যদিও সাধারণ ব্যবসায়ীরা এর থেকে পরিত্রাণ চেয়েও পায়নি বলে জানিয়েছে সূত্র। শুল্কায়নের সুপারের পাসওয়ার্ড হরহামেশাই ওই চক্রের সদস্যরা ব্যবহার করে থাকেন বলে সূত্রের দাবি।

    এদিকে, ৩ নং গ্রুপের এনজিও কাম দালাল সিন্ডিকেট মূল হোতা হোসেন আলীর নামে দূর্ণীতি দমন কমিশনের এক মামলায় স্থানীয় একটি সি এন্ড এফ‘র সাথে জড়িয়ে আছে। অধিক পরিমান উৎকোচ আদায়েই তাদেরকে ব্যবহার করা হয় বলে জানা গেছে।

    অভিযোগ উঠেছে এ সুযোগে ওই সিন্ডিকেট অসাধু সি এন্ড এফ‘দের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের থেকে অতিরিক্ত উৎকোচ আদায় করে থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। আর অতিরিক্ত উৎকোচ ও ঘুঘের প্রেক্ষিতে দেশের বৃহৎ স্থলবন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন প্রকৃত সাধারণ ব্যবসায়ীরা।

    এর মধ্যে কোন কোন গ্রুপের সুপারের বিরুদ্ধে পূর্বে স্বর্ণচোরা চালানে সহযোগিতাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। কর্তৃপক্ষের আস্থাভাজন হওয়ায় কেউ এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না।

    ওই সূত্রের দাবি, কাস্টমসের কতিপয় ওই অসাধু কর্মকর্তাদের চিহ্নিত না করতে পারলে বেনাপোল থেকে সাধারণ ব্যবসায়ীগণ তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিবেন। যদিও ইতোমধ্যে বেনাপোল বন্দরের ব্যস্ততা কমেছে কয়েকগুণ। হারিয়েছে বড় বড় আমদানি রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। যদিও ব্যবসায়ীরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে এ ব্যাপারে সহসা মুখ খুলতে চাইছেন না।

    এদিকে, নাম প্রকাশ না করা শর্তে সি এন্ড এফ এ্যাসোসিয়েশনের এক উর্দ্ধতন নেতা জানিয়েছেন, আমরা চায় অচিরেই কাস্টমস থেকে এনজিও কর্মী প্রবেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করা হোক। তাতে ব্যবসায়ীরা স্বস্তিতে আমদানি রপ্তানি করতে পারবেন।

    কথা হয় বেনাপোল কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার ফিরোজ উদ্দিনের সাথে। এসময় তিনি বিষয়টা দেখবেন বলে জানিয়েছেন। ঘটনার সত্যতা জেনে তিনি ওই চক্রের কয়েক সদস্যকে সরিয়েছেনও।

    কিন্তু মূল হোতারা রয়ে গেছে বহাল তবিয়্যাতে। তাদের ভাবখানা দেখে বোঝার উপায় নেই দীর্ঘ দিনে তারা কর্মকর্তাদের সংস্পর্শে থেকে বনে গেছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে ওই সকল সিন্ডিকেট সদস্য ও কতিপয় কাস্টমস কর্মকর্তাদের অবৈধ আয়ের পরিমান।

    এ ব্যাপারে বেনাপোল কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার ফিরোজ উদ্দিন জানিয়েছেন, অভিযোগ সঠিক হলে অবশ্যই তুলে ধরবেন। এছাড়া কর্তৃপক্ষ সজাগ রয়েছেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলেই সংশ্লিষ্ঠদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।