বেনাপোলে সাংবাদিকদের ফেন্সিডিল দিয়ে চালানের হুমকি!

    0
    211

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৯জুন,এম ওসমান: বেনাপোল আর্ন্তজাতিক চেকপোস্ট দিয়ে ১৩ জুন পাঁচার হওয়া ৪৬ পিছ স্বর্ণের বারসহ দুই পাসপোর্ট যাত্রী ভারতীয় গোয়েন্দাদের হাতে আটকের ঘটনায় চেকপোস্টের সহকারী কমিশনার ফরহাদ আল হাসানকে বদলী করেছেন কর্তৃপক্ষ। তবে, ঘটনার নায়ক সুপার উত্তম কুমার বহাল তবিয়তে থাকায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে খোদ কাস্টমস কর্মচারীদের মনে। বৃহস্পতিবার সকালে বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমসে যোগ দিয়েছেন নবাগত সহকারী কমিশনার মাহাবুব হাসান। এর আগেও তিনি বেনাপোল চেকপোষ্ট কাস্টমসে দ্বায়িত্ব পালন করেছিলেন।

    এদিকে বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমসের সহকারি কমিশনার বদলি হওয়াকে কেন্দ্র করে এলাকায় ধুম্রজাল   সৃষ্টি হয়েছে। চায়ের স্টলসহ খন্ড খন্ড আলাপ চারিতায় কাস্টমস কর্মচারিরা সুপার উত্তম কুমার ঘোষের বিষয়ে অবাক হয়েছেন।
    নাম প্রকাশ না করার শর্তে চেকপোস্টে কর্মরত কয়েক কাস্টমস সিপাহী বলেন, এসি স্যার এখানে সব সময় থাকেন না। থাকেন সুপার উত্তম ঘোষ। তিনি সারাদিন সিপাই ও ইন্সপেক্টরদের সাথে থেকে পাসপোর্ট যাত্রীদের হয়রানী করেন। অহেতুক একটু বোকা ধরণের যাত্রীদের ব্যাগ-ব্যাগেজ আটকে দিয়ে ছোট ঘরে ঢোকাতে বলেন। পরে পাশে থাকা পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সর্বনিম্ন ৫’শ থেকে ১০হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে ছাড়েন।

    এ সাথে মাঝে মধ্যে তার অফিস রুমে ভিআইপি কিছু মেহমান আসে। ওই সময় তিনি তাদের আপ্যায়নে মরিয়া হয়ে ওঠেন। সাথে করে নোম্যান্সল্যান্ডে গিয়ে নিজের মেহমান দাবি করে দু’দেশের গেটে দ্বায়িত্বরত কর্তাদের বলে ভারতে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু এদিন ৪৬পিছ স্বর্ণের বারসহ সুপার উত্তম স্যারের দুইজন মেহমান ওপাশে আটক হওয়ায় স্থানীয় গোয়েন্দা-কাস্টমসসহ সকল মহলের দৃষ্টি এখন সুপার স্যারের দিকে।
    তবে, সুপার উত্তম কুমার সমাদ্দার নিজেকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারের উচ্চ পদস্থ্য এক কর্মকর্তার দোহায় দিয়ে বলে বেড়াচ্ছেন, তিনি আমার আত্মীয়। আমাকে শাস্তি বা বদলি দেওয়ার ক্ষমতা বেনাপোল কাস্টমস হাউস রাখে না।
    এ সকল কাসটমস সদস্যরা আরো বলেন, সুপার স্যাারের উপরে ক্ষমতা থাকার কারণে ৪ কেজি ৬’শ গ্রাম স্বর্ণসহ তার মেহমান আটক হলেও উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে বদলি করা হলো সহকারি কমিশনার স্যারকে আর বহাল তবিয়তেই রয়ে গেলেন দূর্ণিতীবাজ সুপার উত্তম সমাদ্দার।
    এদিকে গত শনিবার(১৩ জুন) বিকাল সাড়ে ৫ টার সময় ওই যাত্রীরা বেনাপোল চেকপোষ্ট ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস হয়ে ভারতে প্রবেশ করার সাথেই আটক হওয়ায় পর্যায়ক্রমে সকল স্থানীয় দৈনিক, জাতীয় ও অনলাইন পত্রিকাগুলো স্বর্ণ পাচারের নিরাপদ রুট বেনাপোল এবং সহযোগিতা করার তালিকায় অভিযোগের তীর চেকপোস্ট কাস্টমস সুপার উত্তম কুমার ঘোষের দিকে রেখে সংবাদ প্রকাশ করেন। তাতে, রাগ আর ক্রোধে ফেটে পড়েন উত্তম কুমার। সেদিন স্থানীয় দৈনিক কল্যাণ পত্রিকার প্রতিনিধি ইমিগ্রেশনে প্রবেশ করলে তার নাম কি এবং সাংবাদিক পরিচয় শুনে তার শরীর তল্লাশী করে অপমান করেন। বলেন এখানকার সাংবাদিকরাই স্বর্ণ পাঁচার করে। এসাথে অপমান করা হয় আরো অনক সাংবাদকদের। ফলে, সম্মান হারানোর ভয়ে কোন সংবাদকর্মী চেকপোস্ট কাস্টমস এলাকায় প্রবেশ করছেন না।
    এদিকে, তার কাছ থেকে বিভিন্ন অবৈধ সুবিধা নেওয়া স্থানীয় এক সুনাম ধণ্য পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দানকারি শার্শা থানার উলাশী ইউনিয়নের এক বিতর্কিত বিএনপি নেতা ওরফে বেনাপোলের এক সিএন্ডএফ কর্মচারিকে ডাকেন সুপার উত্তম। বলেন, তোমার পত্রিকায় আমার বিপক্ষে সংবাদ প্রকাশ করেছে। এখন তোমার পত্রিকাসহ সকল পত্রিকার সংবাদ উল্টে দিতে হবে বলে চুক্তিতে রফাদফা করেন তার সাথে। পরে ইমিগ্রেশন কাস্টমসে দাড়িয়ে বলেন, এখন থেকে আমার অফিস আর খুলব না। এখানে কোন ভিআইপি বসবে না আর সাংবাদিক দিয়ে সাংবাদিক ধরা হবে। আমি সাংবাদিকদের দেখে নেবো। এবার থেকে বেনাপোল ইমিগ্রেশন এলাকায় কোন সাংবাদিকদের পেলে ফেন্সিডিল দিয়ে চালান দেবো।
    শুনেছি কাকের মাংশ কাক খায় না। তাহলে সিএন্ডএফ এজেন্টের কর্মচারি হয়েও যে পত্রিকার সংবাদকর্মী পরিচয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে আবার সে পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিকের সংবাদ উল্টে উত্তমের পক্ষে সংবাদ প্রকাশিত করা এটা কি চারটে খানিক ব্যাপার? বললেন বেনাপোলের সকল সাংবাদিক সমাজ।
    এ বিষয়ে বেনাপোল প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সবুজ বলেন, বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) স্থানীয় ওই পত্রিকায় যে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে এটা খুবই দুঃখ জনক। এ বিষয়ে আমি ওই প্রতিনিধিকে ধিক্কার জানিয়েছি।
    এ বিষয়ে বেনাপোল বন্দর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক বলেন, ১৩ই জুন স্বর্ণসহ পাঁচারকারি আটকের ঘটনায় যে পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার সুপার উত্তম কুমার সমাদ্দারকে দায়ী করে এবং তার বিভিন্ন কূকীর্তি বর্ণণা করে সংবাদ প্রকাশ করলো তার ঠিক একদিন পর সুযোগ বুঝে ওই পত্রিকারই স্থানীয় প্রতিনিধি সকল ইলেকট্রনিক্স এবং প্রিন্ট মিডয়ার সাংবাদিকদের স্বর্ণ পাঁচারকারি আখ্যা দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলো তা সাংবাদিক সমাজে ব্যাপক ক্ষোভের সৃস্টি হয়েছে।
    অপরদিকে বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমসের সহকারি কমিশনারের বদলি ও যোগদানসহ সুপারের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগের বিষয়ে জানতে ফোন দেওয়া হয় সুপার উত্তম কুমার সমাদ্দারের ফেনে। কথা হয়। সাংবাদিক পরিচয় শুনতেই কে………..আওয়াজ তুলেই লাইনটি কেটে দেন।