বেনাপোলে কাস্টমসে ৬ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ২১১ কোটি টাকা

    0
    215

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১১জানুয়ারী,এম ওসমান, বেনাপোলঃ  দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল কাস্টম হাউজে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম আদায় হয়েছে ২শ’ ১১ কোটি ২৯ লাখ টাকা। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ১শ’ ৪৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

    এর মধ্যে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৫শ’ ২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে এক হাজার ২শ’ ৯১ কোটি ১৭ লাখ টাকা।

    বেনাপোল কাস্টম সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ২শ’ ৪৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ১শ’ ৯০ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আগস্টে ২শ’ ৫২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ২শ’ ৪৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

    সেপ্টেম্বরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২শ’ ৬৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, আহরণ ২শ’ ৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। অক্টোবরে লক্ষ্যমাত্রা ২ শ’ ৪৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকার বিপরীতে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ২ শ’ ৩২ কোটি ২১ লাখ টাকা। নভেম্বরে রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ শ’ ৫৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আহরণ হয়েছে ২ শ’ ১১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ শ’ ৩৭ কোটি ৭৯ কোটি টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে ২ শ’ ১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

    সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, রাজস্ব আদায় বাড়াতে গিয়ে আমদানি করা সব পণ্যের শুল্কমূল্য কয়েক গুণ বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি নানামুখী হয়রানির ফলে আমদানিকারকরা ব্যবসায়িক সুবিধার্থে বেনাপোল বন্দর ছেড়ে পার্শ্ববর্তী মংলা, হিলি, সোনামসজিদ, বুড়িমারি ও ভোমরা স্থলবন্দর ব্যবহার করছেন। ফলে বেনাপোল কাস্টমসে দেখা দিয়েছে রাজস্ব ঘাটতি।

    জানা গেছে, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আগে প্রতিদিন ৫শদ ট্রাক পণ্য আমদানি হতো। বর্তমানে আমদানি হচ্ছে তার অর্ধেকের কম। গত ৬ মাসে আনুমানিক ১০ হাজার টন পণ্য কম আমদানি হয়েছে বলে কাস্টম সূত্রে জানা গেছে।

    বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি কামাল হোসেন আমাদের প্রতিনিধিকে বলেন, কাস্টম কর্মকর্তাদের হয়রানির কারণে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমে গেছে। আগে প্রতিদিন আমরা প্রায় ৫শ’ ট্রাক পণ্য পরিবহন করতাম। এখন তা কমে এসেছে ১শ’ ট্রাকে। কাজ না থাকায় অফিসের স্টাফরা এখান থেকে চলে যাচ্ছেন।

    যশোরের আমদানিকারক আল আমিন এন্টার প্রাইজের মালিক মিজানুর রহমান জানান, আগে দু’একদিনেই বেনাপোল দিয়ে সব ধরনের পণ্য ছাড় নেয়া যেত। এখন সময় লাগে কমপক্ষে ৭ থেকে ১০ দিন। কাস্টমসের হয়রানির কারণে শুল্ক বেড়ে গেছে তিনগুণ। ডিউটি দিয়ে পণ্য ছাড়িয়ে লোকসান গুণতে হচ্ছে।

    অন্যদিকে, চোরাচালানের মাধ্যমে আসা পণ্য কম মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। ফলে এখন বেনাপোলের পরিবর্তে অন্য স্থলবন্দর ব্যবহার করছি।

    বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ্ব নুরুজ্জামান আমাদের প্রতিনিধিকে জানান, বেনাপোল স্থলবন্দর ধ্বংস করার জন্য একটি মহল গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। বেনাপোল কাস্টমস কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই আমদানি করা পণ্যের শুল্কায়ন মূল্য বৃদ্ধি এবং ইচ্ছামতো এইচএস কোড পরিবর্তন করছেন। আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে তার উপর জরিমানা আদায় করছে। এসব কারণে আমদানিকারকরা অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছে।

    ব্যবসায়ীদের এ ধরনের অভিযোগ মানতে নারাজ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কাস্টমস কমিশনার এএফএম আব্দুল্লাহ খান বলেন, চলতি অর্থবছরের শুরুতে ঈদ ও পূজাসহ বিভিন্ন বন্ধের কারণে ভারত থেকে পণ্য আমদানি কম হওয়ায় রাজস্ব আহরণ কিছুটা কম হয়েছে। এছাড়া অনেক ব্যবসায়ী পণ্য এনে বিক্রি করতে না পারায় আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। ঘাটতি পূরণে আমরা সচেষ্ট রয়েছি। আশা করছি, পরিস্থিতি খুব তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।