বেনাপোলে ওভারটাইম ও হলিডে চার্জ আদায়ের অভিযোগ

    0
    412

    আমদানী-রফতানী বানিজ্য ঘাটতির আশঙ্কা

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৮আগস্ট,এম ওসমান,বেনাপোলঃ  আমদানি-রফতানি বাণিজ্য গতিশীল করতে ও বন্দরের পণ্যজট কমাতে সরকারের সিদ্ধান্তে ২৪ ঘন্টা কাস্টমস ও বন্দর খোলা রেখে কাজ করার নির্দেশ দিলেও বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ওভারটাইম, হলিডে ও নাইট চার্জ আদায়ের অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন সরকার যেখানে ২৪ ঘন্টা বন্দর খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে সেখানে এসব চার্জ প্রযোজ্য হবে কেন।

    ব্যবসায়ীরা বলছেন, এসব চার্জ আদায় করা হলে তারা ২৪ ঘন্টা কাজ করতে নিরুৎসাহিত হবেন। এতে সরকারের লক্ষ্য অর্জিত হবে না।

    এদিকে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বন্দরে বিভিন্ন ধরনের চার্জ সরকার নির্ধারিত ট্যারিফ অনুযায়ী নেওয়া হয়। তারা তা পরিবর্তন করতে পারেন না। সরকার ছুটির দিনে বন্দর খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু ওভারটাইম, হলিডে, নাইটচার্জ নিয়ে কোনো নির্দেশনা দেননি।

    বাংলাদেশ ও ভারতের স্থল বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে হয়ে থাকে। এই বন্দর দিয়ে বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি-রফতানি হয়।

    বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট ও বন্দর ব্যবহারকারী সূত্রে জানা গেছে, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যে গতিশীলতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কাস্টমস ও বন্দর ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার কার্যক্রম চালু করা হয় ১ আগস্ট থেকে। সে লক্ষে উভয় দেশের কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষ সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে কার্যক্রম চালাচ্ছে।

    ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্দর ও কাস্টমস ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। এর পরিপূর্ণ সুফল পেতে প্রতিদিন ভারত থেকে ৮শ’ থেকে ১ হাজার পণ্যবাহী ট্রাক বেনাপোলে প্রবেশ করতে হবে। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় ও স্থান স্বল্পতার কারণে এ পরিমাণ পণ্য বন্দরের অভ্যন্তরে রাখা সম্ভব হবে না। এ মুহূর্তে বন্দরের ধারণক্ষমতা ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টন। আর পণ্য রয়েছে দুই লাখ টন। ক্রেন ও ফর্ক লিফটের মতো যন্ত্রাংশ নষ্ট থাকায় পণ্য লোড-আনলোডে সমস্যা হচ্ছে। অবিলম্বে বন্দরের এসব সমস্যা দূর করার তাগিদ দেন সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী নেতারা।

    কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতিদিন ৫টার পর প্রতিটি পণ্যচালানের বিপরীতে অলিখিত ৫০০ টাকা ওভারটাইম আদায় করছে। এছাড়া বন্দর চার্জের সাথে ১২৫৭ টাকা ১১ পয়সা হলিডে চার্জ ও ৭১৮ টাকা ৩৭ পয়সা নাইট চার্জ হিসেবে আদায় করে নিচ্ছে।

    এমনও দেখা গেছে একটি পণ্য চালানে বন্দর চার্জ এসেছে মাত্র ৫০০ টাকা সেখানে ৫টার পর কাজ করলে চার্জ দিতে হচ্ছে প্রায় ৩ হাজার টাকা। আর এ কারণে অনেক আমদানিকারক বন্দরের চার্জের কারণে কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করছেন।

    বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের বন্দর বিষয়ক সম্পাদক শাহাবুদ্দিন জানান, সরকারি নির্দেশে ২৪ ঘন্টা কাজ করলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ এসব চার্জ নিলে ব্যবসায়ীরা ছুটির দিনে কাজ করতে নিরুৎসাহিত হবেন। এতে করে সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবেনা। সেই সাথে সরকারের ছুটির দিনে খোলা রাখার সিদ্ধান্ত ভেস্তে যাবে।

    বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান স্বজন জানান, বন্দর সচলের উদ্যোগ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নানা চার্জের কারণে ব্যাহত হচ্ছে। সেই সাথে সরকারের ২৪ ঘন্টা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত ভেস্তে যাচ্ছে। রাষ্ট্রের স্বার্থে সরকারের বিশেষ ঘোষণায় সবাই কাজ করতে চাইলেও বন্দর কর্তৃপক্ষের লোকজন কাজ করতে চায় না।

    ওভারটাইম, হলিডে চার্জ, নাইট চার্জ ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে না নিলেও বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ তা আদায় করছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা প্রধান কার্যালয়ের অজুহাত দেখায়। এ ব্যাপারে এসোসিয়েশনের পক্ষে মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে পত্র পাঠানো হয়েছে।

    এ ব্যাপারে যশোর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি ও আমদানিকারক মিজানুর রহমান খান বলেন, বেনাপোল বন্দর ও কাস্টমস ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার সরকারি সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। তবে ছুটির দিনে পণ্য আমদানিতে অতিরিক্ত চার্জ নেয়া হলে তা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এর ফলে সরকারের উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই তিনি ছুটির দিনে এসব চার্জ আদায় না করার দাবি করেন।

    ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স ল্যান্ডপোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, সরকারের নতুন উদ্যোগ ভেস্তে যাবে যদি বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের হলিডে, নাইট শিফট ও ওভারটাইম চার্জ নেয়া বন্ধ না করে।

    এ ব্যাপারে বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মো: রেজাউল ইসলাম জানান, বন্দরে বিভিন্ন ধরনের চার্জ সরকার নির্ধারিত ট্যারিফ অনুযায়ী নেয়া হয়। আমরা তা পরিবর্তন করতে পারি না। সরকার আমাদের ছুটির দিনে বন্দর খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু ওভারটাইম, হলিডে, নাইটচার্জ নিয়ে কোনো নির্দেশনা দেননি।

    ব্যবসায়ীরা চাইলে সরকারের কাছে হলিডে, নাইট শিফট ও ওভারটাইম চার্জ মওকুফের আবেদন করতে পারেন। সরকার মওকুফ করলে আমরা আর এসব চার্জ নেব না।