বেনাপোলে অনির্দিস্টকালের জন্য আমদানি-রফতানি

    0
    244

    বন্ধের হুমকি দিয়েছে বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনগুলো
    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৫নভেম্বর,এম ওসমান, বেনাপোল : বেনাপোল বন্দর থেকে খালাশ করা আমদানিকৃত বৈধপণ্য মাঝপথে বিজিবি কর্তৃক আটক করে হয়রানির প্রতিবাদে এই বন্দর দিয়ে অনির্দিস্টকালের জন্য আমদানি-রফতানি বন্ধের হুমকী দিয়েছে বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনগুলো।

    বিজিবির হয়রানির কারনে ইতিমধ্যে বেনাপোল বন্দর দিয়ে পন্য আমদানি কমে গিয়ে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ধ্বস নামতে শুরু করেছে। বৈধপথে পন্য আমদানি বন্ধ করে একটি মহল অবৈধপথে পন্য আমদানিকে উৎসাহীত করছে প্রত্যক্ষভাবে।

    গত ২৩ নভেম্বর রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও অদালতে ঝুলে থাকা রাজস্ব সংক্রান্ত মামলা গুলো দ্রুত নিস্পওির লক্ষ্যে আসা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের কাছে ব্যবসায়ীরা বিজিবির হয়রানির অভিযোগ’র তথ্য তুলে ধরলে রাজস্ব বোর্ডের মেম্বার (কাস্টমস)  ফরিদ উদ্দিন জানান, বৈধ রুটে আমদানি করা কোন পন্য চালান আটক করার বৈধতা নেই বিজিবির। তবে বিজিবি যদি কোন ইনফরমেশন পায় তাহলে তাৎক্ষনিকভাবে তারা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কমিশনারকে অবহিত করবেন। কমিশনরাই পন্য চালানটি পুন: পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যদি কোন অনিয়ম পান তাহলে কাস্টমস এ্যাক্ট অনুয়ায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

    ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত বৈধ পন্য রাজস্ব পরিশোধ করে বন্দর থেকে খালাশ নেয়ার পর বিজিবির হয়রানির কারনে আমদানি কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। গত ৩ নভেম্বর  তারিখে ঢাকার আমদানিকারক মেসার্স তানজিম এন্টারপ্রাইজ, ভারত থেকে ২৪৯ প্যাকেজ থান কাপড় আমদানি করেন, যার কাস্টমস বি/ই নাম্বার -৬০৭৯৬ তারিখ :-৩/১১/১৫ইং।

    পন্য চালানটি কাস্টমস এর সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ১৭ লক্ষ ৬৫ হাজার ৩০৭ টাকার রাজস্ব পরিশোধের পর ঢাকায় যাওয়ার মাঝ পথে বিজিবি সদস্যরা পন্য চালানটি আটক করেন। তিনদিন পর বেনাপোল কাস্টমস হাউসে জমা প্রদান করেন। পরে কাস্টম ও বিজিবি যৌথ পরীক্ষা করে পন্য চালানের ঘোষিত পরিমান ও সংখ্যা সঠিক পাওয়া যায়।

    একই দিনে ঢাকার আমদানিকারক আনাম এন্টারপ্রাইজ ভারত থেকে ২৮০ প্যাকেজ থান কাপড় আমদানি করেন। যার কাস্টমস বি/ই নং- ৬০৬৯৬ তারিখ:- ৩/১১/১৫ইং। যেখানে ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ২১৭ টাকার রাজস্ব পরিশোধ করে ঢাকায় যাওয়ার পথে বিজিবি সদস্যরা মাঝ পথে তা আটক করেন। কোন গড়মিল না পাওয়ার পরও কাস্টমস হাউসে জমা প্রদান করে বলে সংশ্লিস্ট সিএন্ডএফ  এজেন্ট’র মালিক সেলিম জানান।
    তবে ২৬ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, পন্যচালানটি থান কাপড় হিসেবে আমদানি করা হলেও মুলত: এ গুলো শাড়ী হিসেবে ব্যবহার হবে। এতে সরকারে রাজস্ব ফাকি দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে এ ক্ষেত্রে রাজস্ব ফাকির কোন ঘটনা ঘটেনি।

    কারন থান কাপড় কেটে জামা ও থ্রিপিচ তৈরী করা যায়। যদি থানে ১২ হাত পরপর ব্লাউজ পিচ সহ মার্জিন করা থাকে তাহলে এটিকে শাড়ি হিসেবে ধরা হবে।

    বেনাপোল কাস্টমস এর সহকারী কমিশনার ড. সিরাজুল ইসলাম জানান, ভারত থেকে যে সব কমার্শিয়াল আইটেম আমদানি হয় তার মধ্যে কাপড় আমদানি খাতে সরকার প্রতিদিন প্রায় ৩/৪ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে থাকে।

    আমদানিকৃত থান কাপড় যথাযথ রাজ্স্ব আদায় করেই খালাশ দেয়া হয়ে থাকে। সাধারনত ২০/৩০ মিটারের থান কাপড়ে যদি কোথাও কোন মার্জিন করা না থাকে তাহলে সেটাকে শাড়ী হিসেবে শুল্কায়ন করার কোন সুযোগ নেই। যদি কাপড়ে মার্জিন করা থাকে তাহলে  শাড়ি ফেব্রিকস হিসেবে প্রতিকেজি ৪.৫০ মার্কিন ডলারে শুল্কায়ন করা হয়ে থাকে। যদি পাতলা জর্জেট থান কাপড়ে মার্জিন থাকে তাহলে সেটাকে ওড়না ফেব্রিকস হিসেবে প্রতিকেজি ৩.২০ মা: ডলারে শুল্কায়ন করা হয়।

    বাংলাদেশের অন্যাণ্য কাস্টম হাউসের চেয়ে বেনাপোলে এ জাতীয় পন্য বেশী মুল্যে শুল্কায়ন করা হচেছ। সেখানে ক্যাটগারি করে এ জাতীয় পন্যের শুল্কায়ন করা হয় না।
    বেনাপোল কাস্টম কর্তৃপক্ষের জোর করে মূল্য বৃদ্ধির প্রবনতা ও বন্দর থেকে খালাশকৃত পন্যের মাঝ পথে বিজিবি কর্তৃক হয়রানির কারনে আমদানিকারকরা বেনাপোল বন্দর দিয়ে পন্য আমদানি বন্ধ করে চেরাই পথে পন্য আমদানি করছে। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হাতছাড়া হচেছ।

    ভারত থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে কম সময়ে দ্রুত পণ্য আমদানি করা সম্ভব। আগে এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন আমদানি হতো প্রায় পাঁচশ ট্রাক মালামাল। বর্তমানে আমদানি হচ্ছে তার অর্ধেক। বেনাপোল বন্দরের চিরচেনা উচ্চ শুল্কহারের পণ্যগুলো অধিকাংশ এখন আমদানি হচ্ছে মংলা, সোনামসজিদ ও বুড়িমাড়ি বন্দর দিয়ে।

    জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বেনাপোল  কাস্টম হাউসে চলতি ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারন করে। কিন্ত গত ৬ মাসে  ১১৬ কোটি টাকার রাজস্ব আয় কম হয়েছে।
    ফল, পেয়াজ, চাল, মাছসহ পচনশীল পণ্য চলে গেছে ভোমরা ও সোনামসজিদ বন্দরে। বেনাপোল কাস্টমসের সাথে অন্য সব শুল্ক স্টেশনগুলোর সাথে অভিন্ন মূল্যে শুল্কায়ন না হওয়ায় আমদানিকারকরা তাদের সুবিধার্থে অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছে বলে জানান সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ীরা।
    এ ছাড়াও বেনাপোলে রয়েছে ভারতের সাথে বিশাল সীমান্ত এলাকা। যা পুরোপুরি রক্ষিত নয়। বিজিবি ও পুলিশকে ম্যানেজ করে চোরাকারবারীরা এসব সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার পণ্য সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। কাস্টম কর্মকর্তারা যদি হয়রানি বন্ধসহ শুল্কায়ণ মুল্য বৃদ্ধি না করতো তাহলে চোরা পথে পণ্য আসা বন্ধের সাথে সাথে এ বন্দর দিয়ে আমদানি বৃদ্ধি পেতো আর বাড়তো সরকারের রাজস্ব আয়।
    আমদানি রফতানি কারক সমিতির সহ সভাপতি আমিনুল হক আনু জানান, বেনাপোল কাস্টমস হাউসে রাজস্ব বোর্ড সম্প্রতি তিন জন সৎ ও দক্ষ অফিসার নিযোগ দিয়েছেন। বর্তমানে পন্য চালান স্বচ্ছতার সাথে পরীক্ষা করে মূল্য বৃদ্ধির কারনে আমদানিকারকরা এই বন্দর ছেড়ে মংলা, সোনামসজিদ, বুড়িমাড়ি ও ভেমারা বন্দরে চলে গেছে।

    একদিকে কাস্টমস এর কড়াকড়ি অনদিকে বিজিবির হয়রানি সব মিলিয়ে বেনাপোল বন্দরে অমদানি রফতানি বানিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বিজিবি চোরাচালানের মাধ্যমে আসা পন্য আটক না করে বৈধ পথে আমদানি করা পন্য আটকের নামে হয়রানি করছ্।ে তাছাড়া বিজিবি এ পর্যন্ত ৩২ টি চালান আটক করলেও  একটিতেও শুল্ক ফাকির কোন ঘটনা উৎঘাটন করতে পরেনি।
    বেনাপোল কাস্টম সিএন্ডএফ এজেন্ট  এসোসিয়েশনের  সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, বর্তমানে বেনাপোল কাস্টম হাউসে অনিয়মের কোন সুযোগ নেই। বেনাপোল কাস্টমস হাউসকে মডেল হিসেবে গন্য করে অন্যান্য কাস্টমস হাউসে শুল্কায়ন করা হচ্ছে। বেনাপোল বন্দরকে ধ্বংস করার জন্য একটি মহল জোর তৎপরতা চালাচেছ। বৈধ রুটে আমদানি করা পন্য চালান বিজিবি’র এককভাবে তল্লাশীর কোন আইনী সুযোগ নেই। যদি কোন চালানে গোপন সংবাদ থাকে তাহলে কাস্টমসকে সাথে নিয়েই ইনভেন্ট্রি করতে হবে।

    তবে মুল্যের বিষয়ে অন্যন্য কাস্টমস হাউস বেনাপোল কাস্টমস হাউসকে অনুসরন করলে এই বন্দরের মাধ্যমেই আমদানি রফতানি বেড়ে যাবে অনেকাংশে।
    বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার এ এফএম আব্দুললাহ খান জানান, কাস্টম হাউসে মুল্য বৃদ্ধির কারনে কমার্শিয়াল আইটেম’র আমদানি কমে গেছে। তবে অন্যন্য শুল্ক স্টেশন দিয়ে এ জাতীয় পণ্য খালাশ হচ্ছে।

    তাছাড়া চোরাচালানের মাধ্যমে এসব পন্য আসায় সরকার একদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে এবং অবৈধ ভাবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হচেছ। রাজ্স্ব আয় কমে গেলেও গ্রোথ বেড়ে ১৩ শতাংশে উন্নিত হয়েছে। তবে যে পর্যন্ত মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে তাতে আর পন্যের মুল্য বৃদ্ধি করা হবে না। সার বিশ্বে পেট্রলিয়াম জাত পন্যের মুল্য কমে যাওয়ায় পন্যের মূল্যও  কমে গেছে আন্তর্জাতিক বাজারে।