বিশ্বে ‘ইসলাম ও সন্ত্রাস’ বিষয়কে প্রথম পাঠ্য করল সুন্নি প্রতিষ্ঠান

    1
    336

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৭আগস্টঃ চতুদর্শ শতাব্দির মুজাদ্দিদ কলম সম্রাট আলা হযরত ইমাম আলা হজরত  আহমদ রেযা খাঁন মুহাদ্দীসে ফাজেলে বেরলভী (রহঃ) হচ্ছেন গোটা মুসলিম জাহানের উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার ই প্রতিষ্ঠিত ভারতের  বেরেলি শরিফে আলা হজরত দরগাহ সম্প্রতি একটি বিষয় পাঠ্য হিসেবে চালু করেছে। বিষয়টির নাম  হচ্ছে “ইসলাম ও সন্ত্রাস”। সারা পৃথিবীতে  কিছু সন্ত্রাসী ও জঙ্গি সংগঠন  ইসলামকে ব্যবহার করে  ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে, এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের সচেতন করার লক্ষ্যে চালু করা হয়েছে বিষয়টি। স্নাতক শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে পড়তে পারবেন। এর মাধ্যমে তাঁরা জানতে পারবেন আসলে পবিত্র কোরআনে কী বলা হয়েছে এবং সন্ত্রাসী দলগুলো সেই বিষয়কে কীভাবে উপস্থাপন করছে।

    “ইসলাম ও সন্ত্রাস” বিষয়ের মাধ্যমে আলেমরা শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করবেন, কীভাবে কোরআন-হাদিসের আসল বাণীগুলো বিকৃত করে সন্ত্রাসী দলগুলো নিজেদের মতো করে তৈরি করছে ইসলামের নামে নতুন আইন। আলা হজরতের  জামেয়া রেজভিয়া মানজার এ ইসলাম মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য এ বিষয়ের ওপর নিয়মিত কর্মশালার আয়োজন করবে। কর্মশালাগুলোতে বোঝানো হবে-কীভাবে ধর্মের অপব্যবহার করে সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কীভাবে তরুণদের প্রভাবিত করা হচ্ছে ধর্মের নামে।
    ১৯০৪ সালে আলা হজরত ইমাম আহমেদ রেজা খান ফাজেলে বেরলভী (রহঃ) মানজার এ ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক হাজার ২০০ জন।
    “ইসলাম ও সন্ত্রাস” বিষয়ের প্রধান ও মাদ্রাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মুফতি মোহাম্মদ সালেম নুরি বলেন,”অনেক জঙ্গি সংগঠন যেমন-আইএসএল, আল-কায়েদা ও তালেবানরা হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে ভুল মত প্রচার করছে। এর মাধ্যমে তারা তরুণদের তাদের দলে ভেড়ানোর জন্য প্রভাবিত করছে। ধর্মীয় বইগুলোর আসল ভাষা হচ্ছে আরবি। এর অনুবাদ করতে গিয়ে তা বিকৃত করে ফেলে তারা। পরে ভুল বাণী শোনায় ভক্তদের। এই বিষয়টিতে আমরা প্রকৃত ধর্মীয় কিতাবাদিতে (পুস্তকে) কী বলা আছে এবং সন্ত্রাসী দলগুলো কী অনুবাদ করছে, তা দেখাব। আমরা শিক্ষার্থীদের ইসলামের আসল বাণী শোনাব এবং তাদের দেখাব-কীভাবে আসল বাণীগুলো অন্যভাবে ভিন্ন খাতে প্রচার করা হচ্ছে।”

    বেরলভী  শরিফের দরগা আলা হজরতের চেয়ারপার্সন হজরত সুবহান রেজা খান বলেন, ‘ইসলামের নামে সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে ইসলামের দুর্নাম হচ্ছে। আমাদের মাদ্রাসার মাধ্যমে আমরা ইসলামে আসল বাণী সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই।’
    মাদ্রাসার প্রধান মুফতি আহসান রেজা কাদরী বলেন, ‘বর্তমান সময়ে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে। তাদের অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়, এর মধ্যে প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর প্রভাব থেকে নিজেদের মুক্ত রাখা। এই সংগঠনগুলোর ভুল প্রচারণার বিরুদ্ধে যেন তারা কথা বলতে পারে, এ জন্য আমরা আমাদের মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের তৈরি করছি।’
    বুধবার থেকে শুরু হওয়া ফাজিল (স্নাতক) পর্যায়ে এই বিষয়ের ৮জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। মাদ্রাসাটি আরও বেশি শিক্ষার্থী আশা করছে। যাঁরা এই বিষয়ে পড়তে আগ্রহী নন বা ভর্তি হননি, তাঁদের জন্যও মাদ্রাসাটি নিয়মিত এই বিষয়ের ওপর কর্মশালা পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাতে এই বিষয়টির গুরুত্ব শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারেন।

    উল্লেখ্য-জামেয়া রেজভিয়া মানজার এ ইসলাম মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা চতুদর্শ শতাব্দির মুজাদ্দিদ কলম সম্রাট আলা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত  আহমদ রেযা খাঁন মুহাদ্দীস ফাজেলে বেরলভী (রহঃ)।যিনি ১৩১৮ হিজরীতে উলামায়ে হিন্দের পক্ষ থেকে শতাব্দীর মুজাদ্দিদ হিসেবে উপাধি অর্জন করেন। আলা হযরত (রহঃ) জ্ঞান-বিজ্ঞানের ৫৫টি শাখা প্রশাখার উপর প্রায় দেড় হাজার কিতাব রচনা করেছেন। অবশেষে ১৩৩৪ হিজরীতে শুক্রবার বাদ জুমা ২টা ৩৮ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন। তিনি এমন একজন  ব্যক্তি ছিলেন – যার সম্পর্কে “হায়াতে আলা হযরত (রহঃ)” এর ১ম খন্ডের ৯২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, তিনি জাগ্রত অবস্থায় রাসুল (দঃ) এর দর্শন লাভ করেছেন। তার জীবনে অসংখ্য কারামত রয়েছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশে ও আলা হজরতের ধর্শন (মাসলাক) ভিত্তিক শতাধিক সুন্নি  মাদ্রাসা পরিচালিত হচ্ছে।এর মধ্যে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ষোলশহর  জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা ও রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর আলিয়া মাদ্রাসাসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান  উল্লেখ যোগ্য।