বিশ্বের সবচেয়ে বড় খেজুর বাগানের মালিক পরপারে

    0
    267

    আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ সৌদি আরবের অনন্য দানশীল ব্যক্তি শেখ সুলায়মান আল রাজী আর বেঁচে নেই। দু’হাতে তার দানের কথা কিংবদন্তি হয়ে আছে। বিশ্বের বড় ইসলামি ব্যাংক ও বড় খেজুর বাগানের মালিক ছিলেন তিনি। পুরো রমজান মাসে এ বাগানের খেজুর দিয়েই মক্কা মদিনার রোজাদারদের ইফতার করানো হয়।

    সৌদি নিউজ এজেন্সি এসপিএ তাদের এক প্রতিবেদনে এ কথা জানায়। গত মঙ্গলবার (৩০ জুন) তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৯৭ বছর।

    পরিশ্রম কিভাবে একেবারে শূন্য থেকে তাকে মাল্টি বিলিয়নিয়ার তথা বিশ্বের ১২০তম ধনী মানুষে পরিণত করেছে এবং দু’হাতে দান করে তিনি কেমন আনন্দ পেতেন তা এক অনুপম আশা জাগানিয়া গল্প।

    সুলায়মান আল রাজী ছিলেন সৌদির এক অতি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। শৈশবে স্কুলে পড়ার সময় এক শিক্ষা সফরে যেতে পরিবারের কাছে কান্নাকাটি করেও এক রিয়াল জোগাড় করতে পারেননি। কারণ এক রিয়াল দেয়ার মতো সামর্থ্য তার পরিবারের তখন ছিল না। শিক্ষা সফরের একদিন আগে ফিলিস্তিনি ক্লাশ শিক্ষক স্কুলে প্রশ্নের সঠিক জবাব দেয়ায় তাকে এক রিয়াল উপহার দেন। মুহূর্তেই তার প্রবল কান্না পরম আনন্দে পরিণত হয়। তিনি সহপাঠীদের সাথে শিক্ষা সফরে যেতে সুযোগ পান।

    কর্মজীবনে যোগদানের জন্য ৯ বছর বয়সে তিনি স্কুল ছেড়ে দেন। প্রথমেই বন্দরে মাল ওঠানো নামানো অর্থাৎ পোর্টারের কাজ করেন। এরপর দিনমজুর, শ্রমিক, বাবুর্চি, ওয়েটার, দোকান কর্মচারীর কাজ করেন। উপার্জনের অর্থ দিয়ে মুদি দোকান দেন। বিয়ের খরচের জন্য দোকান বিক্রি করে দেন। তারপর ভাইয়ের সাথে একত্রে ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৭০ সালে ভাইয়ের কাছ থেকে আলাদা হয়ে একা কারেন্সি ট্রেডিং (মুদ্রা বিনিময়) ব্যবসা শুরু করেন। প্রথমে সৌদি আরবে ৩০টি শাখা এবং পরে মিশর, লেবানন ও জিসিসি দেশগুলোতেও শাখা খুলেন। বদলে যায় ভাগ্যের চাকা। প্রতিষ্ঠা করেন আল রাজী ব্যাংক ও আল রাজী ইসলামি গ্রুপসহ আরো অন্য ব্যবসা।

    বিশ্বের সবচেয়ে বড় খেজুর বাগানটি তার। এ বাগানে ২ লাখ খেজুর গাছ আছে। মধ্য সৌদি আরবের আল কাসিম প্রদেশে অবস্থিত এ বাগানের আয়তন প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর। এ বাগানে ৪৫ ধরনের খেজুর আবাদ হয়। ১৯৯০ সালে এখানে গম এবং তরমুজও করা হতো। কিন্তু ১৯৯৩ সালের পর শুধু খেজুর ফলানো হয়। বাগানটি গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান করে নেয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে শেখ সুলায়মান আল রাজী এ বাগানটি আল্লাহর রাস্তায় পুরোপুরি ওয়াকফ করে দিয়ে দেন। রমজানে কাবা শরীফ ও মসজিদে নববী এবং অন্য মসজিদসমূহে এ বাগানের খেজুর দিয়েই ইফতার করানো হয়। মুসলিম দেশগুলোতে এ বাগানের খেজুরই উপহার হিসেবে পাঠানো হয়। এর আয় দরিদ্রদের জন্য ব্যয় করা হয়।