বিশ্বস্ত বন্ধুর মত রোগীদের পাশে থাকুনঃপ্রধানমন্ত্রীর

    0
    194

    আমারসিলেট24ডটকম,০৪মেঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসকদের প্রতি বিশ্বস্ত বন্ধুর মত রোগীদের পাশেদাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকদের হাতের স্পর্শ, একটুসহানুভূতি রোগীর মনোবলকে অনেক বাড়িয়ে দেয়’।
    চিকিৎসকদের কাছে দেশ ও জাতির অনেক প্রত্যাশা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীবলেন, ‘শুধু চিকিৎসা দেয়াই নয়, আপনাদের মুখের কথাও রোগীকে অনেক সুস্থ করেদেয়। তাই আপনাদের কাছে দেশের মানুষের অনেক প্রত্যাশা।’
    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রেবাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস্ এন্ড সার্জনস্ (বিসিপিএস)-এর ১২তম সমাবর্তনঅনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
    অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদমালেক এমপি। সভাপতিত্ব এবং সমাবর্তন বক্তৃতা করেন বিসিপিএস-এর সভাপতিঅধ্যাপক এস.এ.এম গোলাম কিবরিয়া।
    স্বাগত বক্তৃতা করেন বিসিপিএর-এর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসান।ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিসিপিএস-এর সহ-সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা।
    এর আগে প্রধানমন্ত্রী সমাবর্তন গাউন পরে শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দিয়েঅনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেন। অনুষ্ঠানে তিনি৬ প্রবীণ চিকিৎসকের হাতেবিসিপিএস-এর অনারারী ফেলোশীপ তুলে দেন। এছাড়া ৬ তরুণ কৃতি ফেলোকে স্বর্ণপদকএবং এফসিপিএস ও এমসিপিএস পরীক্ষায় উত্তীণ ২০ শিক্ষার্থীর হাতে সনদপত্রতুলে দেন।
    ফেলোশীপ ও পদক প্রদানের অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিসিপিএর-এর অনারারী সেক্রেটারী অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া।
    আজকের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মোট ৯২৪ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সনদপত্র গ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে ১৬ দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞকে ফেলোশীপ দেয়া হয়।
    সনদপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আশা করব, চিকিৎসাসেবার মাধ্যমে আর্ত, পীড়িত ও দরিদ্র মানুষের মুখে আপনারা হাসিফোটাবেন। দেশ ও জাতির সেবায় এবং মানবতার কল্যাণে নিজেদেরকে উৎসর্গ করবেন।’
    তিনি বলেন, ‘আপনারা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। আপনাদের এ অর্জনের পিছনে দেশেরসাধারণ মানুষের অনেক অবদান রয়েছে। তাই আপনাদের দায়িত্ব সাধারণ জনগণকেস্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা’।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের প্রতিটিসেক্টরকে নতুন করে ঢেলে সাজান। তিনি স্বাস্থ্যখাতকে বিশেষ গুরুত্বদিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন দেশের সাধারণ মানুষ যেন উন্নত চিকিৎসা পায়।এ কারণেই দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির জন্য তিনি এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগড়ে তুলেছিলেন।
    তিনি বলেন, বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস্ এন্ড সার্জনস্ (বিসিপিএস) চিকিৎসাক্ষেত্রে বর্তমানে দেশের অন্যতম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জাতির পিতাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে এ কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
    শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিসিপিএস পোস্ট গ্রাজুয়েট পরীক্ষা, প্রশিক্ষণ, গবেষণা, কর্মশালা ও সেমিনারসহ অসংখ্য কর্মকান্ডের মাধ্যমে দেশেস্নাতকোত্তর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি করে স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নেতাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
    তিনি বলেন, এ কলেজ থেকে এ পর্যন্ত ৪ হাজার ১৭৩ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফেলোশীপ (এফসিপিএস) এবং ২ হাজার ২৯৫ জন চিকিৎসক মেম্বারশীপ (এমসিপিএস) অর্জনকরেছেন।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্ত এফসিপিএস ও এমসিপিএসবিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও অন্যান্য স্বাস্থ্যপ্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আশাপ্রকাশ করেন, বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস্ এন্ড সার্জনস্ সাফল্যের এধারাবাহিকতা রক্ষা করবে।
    গত পাঁচ বছরে দেশের স্বাস্থ্যখাতের আমূল পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে শেখহাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে দেশের স্বাস্থ্যসেবারউন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিয়েছে।
    তিনি বলেন, তাঁর সরকার একটি যুগোপযোগী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করেছে। প্রায়১৫ হাজার ৬০০ কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণ করেছে।এসব ক্লিনিক থেকে ১২ কোটি গ্রামীণ দরিদ্র মানুষ সেবা গ্রহণ করছে।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে তাঁর সরকার এই কমিউনিটি ক্লিনিকস্থাপনের কাজ শুরু করেছিল। কিন্তু বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় এসেএগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল।
    তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রীর যুক্তি ছিল এর মাধ্যমে যদি মানুষ চিকিৎসা সেবাপায়, তাহলে তারা সব সময়ই নৌকায় ভোট দেবে। এ জন্য তিনি কমিউনিটিহাসপাতালগুলো বন্ধ করে দেন।
    ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠী এখনটেলিমেডিসিন ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রামে থেকেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, উপজেলা পর্যায় পর্যান্ত সকল হাসপাতালে ওয়েব ক্যামেরা ওইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়েছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ২৪-ঘণ্টাস্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকেআরো আধুনিক ডিজিটাল নেটওয়ার্কে যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
    সর্বত্র চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর সরকারঢাকার কুর্মিটোলা ও খিলগাঁওয়ের মুগদায় ৫০০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল, শ্যামলীতে টিবি হাসপাতাল, ফুলবাড়িয়ায় সরকারী কর্মচারী হাসপাতাল এবংআগারগাঁও-এ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্স ও শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবমেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতালসহ বিভিন্ন জেলায় ২৪টি হাসপাতালনির্মাণ করেছে।
    শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার স্বাস্থ্য শিক্ষার প্রসারে সরকারী ৬টিসহ ২০টিনতুন মেডিকেল কলেজ, ১১টি ডেন্টাল কলেজ, ৪৭টি ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজী, ৭২টি মেডিকেল এসিসটেন্ট ট্রেনিং স্কুল, ১০টি নার্সিং কলেজ এবং ৩১টি নার্সিংট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপন করেছে।
    স্বাস্থ্য খাতে ১২ হাজার নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৫হাজারেরও বেশি এডহক চিকিৎসকের চাকুরি স্থায়ী করা হয়েছে। ৬ হাজার ৫৯২ জনচিকিৎসক এবং ৫ হাজার ৭৪৮ জন নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ৮ হাজার চিকিৎসককেপদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
    তিনি বলেন, তাঁর সরকার নার্সদের পদমর্যাদা ৩য় শ্রেণী থেকে ২য় শ্রেণীতে উন্নীত করেছে। স্বাস্থ্য সহকারি পদে ১৭ হাজার কর্মচারিসহ প্রায় ৭৫ হাজারজনবল নিয়োগ দিয়েছে। ১৩ হাজার ৫০০ জন কমিউনিটি হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডার নিয়োগদেওয়া হয়েছে।
    শেখ হাসিনা স্বাস্থ্যখাতে তাঁর সরকারের সব ধরণের সহযোগিতা অব্যাহত রাখারআশ্বাস দিয়ে বলেন, একটি সুস্থ্য সবল জাতি গঠনে তাঁর সরকারের অঙ্গীকারবাস্তবায়নে চিকিৎসকরা কাজ করে যাবেন এটাই তাঁর প্রত্যাশা।
    তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালেরমধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত করতে তাঁর সরকার কাজ করেচলেছে। এই লক্ষ্য অর্জনে তিনি চিকিৎসকদের সহযোগিতা চান।বাসস।