বিমান বাহিনীকে কার্যকর বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলব ইনশাআল্লাহ

    0
    258

    আমারসিলেট24ডটকম,৩১ডিসেম্বরঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমরা বিমান বাহিনীকে আরও আধুনিক করে কৌশলগত দিক থেকে একটি সুদৃঢ়-শক্তিশালী ও কার্যকর বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলব ইনশা আল্লাহ। আজ বুধবার সকালে যশোরে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিএএফ ঘাঁটিতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

    এ সময় তিনি জাতীয় নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা ও আন্তর্জাতিক শান্তি মিশনে এই বাহিনীর সদস্যদের অবদানের প্রশংসা করেন।
    প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একটিমাত্র এলুয়েট হেলিকপ্টার ও অটার বিমানের সাহায্যে মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে চল্লিশটিরও বেশী সফল আক্রমণ পরিচালনা করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের বিমান বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সহমর্মিতার বার্তা নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে জাপান, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, চীন, ভারত, মালদ্বীপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

    প্রধানমন্ত্রী  আরও বলেন, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা, সমুদ্রসীমা, পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বিক পরিস্থিতি ও দুর্যোগ মোকাবেলার বিষয়গুলো বিবেচনায় এনে জাতির পিতা চট্টগ্রামে জহুরুল হক ঘাঁটির গোড়াপত্তন করেন। গত ৮ নভেম্বর আমরা এ ঘাঁটিকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান করেছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে, জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর উন্নয়নে অবদান রেখেছে।

    ১৯৯৬ সালে আমরা বিমান বাহিনীতে চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান মিগ-২৯, সি- ১৩০ পরিবহন বিমান এবং উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন আকাশ প্রতিরক্ষা রাডার সংযোজন করি।
    শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাদারিত্ব বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রশংসা কুড়িয়েছে। অনেক সীমাবদ্ধতা স্বত্বেও জাতিসংঘের নিরাপত্তা কার্যক্রমের অধীনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রতি বছর প্রায় ৪ হাজার উড্ডয়ন ঘণ্টা সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করে যাচ্ছে।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পরিবহন বিমানের কন্টিনজেন্ট বৃদ্ধি এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আমাদের বিমান বাহিনীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমান বাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, কঠোর পরিশ্রম, শৃঙ্খলা এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সামরিক প্রশিক্ষণের প্রাথমিক ধাপ সফলতার সঙ্গে শেষ করে আজ আপনারা কমিশন পেতে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, এটি অত্যন্ত আনন্দের। অত্যন্ত গর্বের। আমি কমিশনপ্রাপ্ত সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।

    এ সময় বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যার বলিষ্ঠ ও আপসহীন নেতৃত্বে আমরা অর্জন করেছি মহান স্বাধীনতা।
    প্রধানমন্ত্রী  জাতীয় চার নেতাকে স্মরণ করে বলেন, আমি স্মরণ করছি, জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, এম মনসুর আলী ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে। স্মরণ করছি, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানসহ মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী বিমান বাহিনীর সব সদস্যকে।

    মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ, দুই লাখ নির্যাতিত মা-বোনকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

    সেই সঙ্গে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও স্বজন হারানো পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তিনি। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ঐহিত্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস।

    মুক্তিযুদ্ধে বিমান বাহিনীর সদস্যরা যুদ্ধের প্রয়োজনীয় উপকরণ ছাড়াই শুধু একটি এলুয়েট হেলিকপ্টার, একটি ডিসি-৩ এবং একটি অটার বিমান নিয়ে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করেন।
    আধুনিক বিমান বাহিনীর উদাহরণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যে কোনো জাতির জন্য একটি শক্তিশালী, পেশাদার ও আধুনিক বিমান বাহিনী অপরিহার্য। একথা অনুধাবন করে জাতির পিতা স্বাধীনতার পর পরই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের আর্থিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও একটি দক্ষ ও চৌকস বিমান বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন।অতি অল্প সময়ের মধ্যে বিমান বাহিনীর জন্য বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। বিদেশ থেকে আধুনিক সমরাস্ত্র সংগ্রহ করেন।

    তিনি ১৯৭৩ সালে সে সময়ের অত্যাধুনিক মিগ-২১ সুপারসনিক ফাইটার স্কোয়াড্রন, এমআই- ৮ (এমআইএইট) হেলিকপ্টার, এএন-২৪ পরিবহন বিমান এবং এয়ার ডিফেন্স রাডার বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে সংযোজন করেন বলে ও প্রধান মন্ত্রী উল্লেখ করেন।