বিমান নিখোঁজ,কোথায় খোঁজা হচ্ছে?

    0
    194

    আমারসিলেট24ডটকম,১৫মার্চঃ মার্কিন নৌবাহিনীর এক কম্যান্ডার বলেন, ছিল দাবার বোর্ড, হয়ে উঠছে ফুটবল মাঠ ! ঠিক এই ভাবেই পরিস্থিতিটা বর্ণনা করছেন কম্যান্ডার। এমএইচ ৩৭০-কে কোথায় কোথায় খোঁজা হবে, রোজই সেই মানচিত্রটা বদলাচ্ছে। শুধু বদলাচ্ছেই না, বহরও বাড়ছে। সে দিকে তাকিয়েই এই মন্তব্য কম্যান্ডারের। মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিশামুদ্দিন হুসেনও ঠিক একই ভাবে বলছেন, “সাধারণত সময় এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে তদন্তের পরিসর ছোট হয়ে আসে। এ ক্ষেত্রে হচ্ছে ঠিক উল্টো।”

    তল্লাশি শুরু হয়েছিল তাইল্যান্ড উপসাগরে। তার পর মালাক্কা প্রণালী হয়ে আন্দামান সাগর। শুক্রবার পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে সার্চলাইট আরো পশ্চিমে সরে এ বার ভারত মহাসাগরে পড়েছে। এ দিন নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ সংলগ্ন এলাকায় ব্যাপক খোঁজাখুঁজি শুরু করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী। ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র হরমীত সিংহ জানিয়েছেন, দু’টি বিমান আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের স্থলভূমিতে এ দিন খোঁজাখুঁজি চালিয়েছে। দু’টি জাহাজ দ্বীপপুঞ্জের পূর্ব দিকে অনুসন্ধান চালিয়েছে। পাশাপাশি পূর্ব চিন সাগরেও তল্লাশি চলছে।

    কেন ক্রমশ পশ্চিমে সরছে অনুসন্ধানের পথ?
    মালয়েশিয়ার সামরিক রেডারে শনিবার রাত দু’টো ১৫-য় একটি বিমানের গতিপথ ধরা পড়েছিল বলে আগেই জানানো হয়েছিল। এ দিন সংবাদসংস্থা রয়টার্স দাবি করেছে, ওই রেডারে ধরা পড়া সব তথ্য তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু বিশ্বস্ত সূত্রে রয়টার্স জেনেছে রাত সওয়া দু’টোর পর আকাশপথের নির্দিষ্ট রুটম্যাপ (বিমানের পরিভাষায় যাকে বলে, নেভিগেশনাল ওয়েপয়েন্ট) মেনেই বিমানটি এগিয়েছিল। আন্দামান সাগর থেকে ভারত মহাসাগর হয়ে পশ্চিম এশিয়া বা ইউরোপের দিকে যাওয়ার রাস্তা নিয়েছিল সে। আরও স্পষ্ট করে বললে, নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের দিকেই ছিল তার অভিমুখ। অর্থাৎ উত্তর-পূর্বে বেজিংমুখী হওয়ার বদলে সেটি উড়েছিল সম্পূর্ণ উল্টো দিকে।

    এখান থেকেই ফের জোরদার হচ্ছে অন্তর্ঘাত এবং ছিনতাইয়ের সম্ভাবনা। নাম না করে যে সূত্রের ভিত্তিতে এই দাবি করেছে রয়টার্স, তাঁদের মতে বিমানেরই কেউ উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে অভিমুখ ঘুরিয়ে দিয়েছিল। এমন কেউ যিনি রীতিমতো প্রশিক্ষিত। এমনও ভাবা হচ্ছে, রীতিমতো পোক্ত হাতে ইচ্ছে করেই তিনি এটিসি-র সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তিনি কে, কেনই বা এমন করলেন, তা অবশ্য জানা নেই। পাইলট নিজেই কি কোনও নাশকতার চক্রান্তে জড়িত ছিলেন, নাকি তাঁর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে তাঁকে দিয়ে কাজ করানো হচ্ছিল, নাকি ককপিটের দখল নিয়েছিল ছিনতাইবাজরা সব রকম সম্ভাবনাই থাকতে পারে।

    এটিসি-র সঙ্গে শেষ যোগাযোগের পরেও এমএইচ ৩৭০-র সঙ্কেত উপগ্রহগুলিতে ধরা পড়েছিল আরও ঘন্টা চারেক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যোগাযোগের সব রাস্তা তখনও বন্ধ ছিল না। ওই সঙ্কেতগুলো থেকেই এখন ভৌগোলিক অবস্থানটা বের করার জন্য প্রাণপাত করছেন গোয়েন্দারা। কিন্তু ওই সঙ্কেত জল বা স্থল যে কোনও জায়গা থেকেই আসতে পারে। ফলে বিমানটি ঠিক কোথায় ছিল, তা নিশ্চিত করে বলা সহজ কাজ নয়।

    আবার আন্তর্জাতিক পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মাইক গ্লিন সংবাদসংস্থা এপি-কে বলেছেন, পাইলটের আত্মঘাতী হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ১৯৯৭ সালে সিঙ্গাপুর থেকে জাকার্তাগামী একটি বিমান এবং ১৯৯৯ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে কায়রোগামী একটি বিমানের উদাহরণ দিচ্ছেন তিনি। দু’বারই পাইলট নিজেই সব যোগাযোগের উপায় বন্ধ করে দিয়ে বিমান সমেত ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মঘাতী হয়েছিলেন। এমএইচ ৩৭০-এর ক্ষেত্রেও এমন কিছু ঘটে থাকতে পারে বলে মনে করছেন গ্লিন। সে ক্ষেত্রে হয়তো পাইলটই ইচ্ছে করে বিমানটি নিয়ে নিকোবরের দিকে এগিয়ে গিয়ে থাকবেন।

    কিন্তু রয়টার্সের খবরের সঙ্গে চিনের দাবি অবশ্য মিলছে না। তারা বরং এ দিন নতুন তত্ত্ব দিয়ে বলেছে, শনিবার রাতে মালয়েশিয়া এবং ভিয়েতনামের মাঝে পূর্ব চিন সাগরের একটি এলাকায় সমুদ্রগর্ভে কম্পন হয়। যে এলাকায় কম্পনটি হয়েছে, সেটি বিমানের সর্বশেষ অবস্থান থেকে মাত্র ১১৬ কিলোমিটার দূরে। তা ছাড়া যে সময় কম্পনটি হয়, তার দেড় ঘণ্টা আগেই মালয়েশিয়ান এটিসি-র সঙ্গে শেষ বারের মতো যোগাযোগ হয়েছিল বিমানের। সব মিলিয়ে চিনের ধারণা, বিমান ভেঙে পড়ে সমুদ্রগর্ভের তলায় চলে যাওয়াতেই ওই কম্পন হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে নিকোবরের দিকে যাওয়ার তত্ত্ব খাটছে না।

    অপর দিকে মালয়েশিয়ান প্রশাসনের দাবি, শেষ যোগাযোগের চার-পাঁচ ঘণ্টা পরও উপগ্রহে বিমানটি থেকে পাঠানো সঙ্কেত ধরা পড়েছিল। মার্কিন গোয়েন্দা দফতরের বিশেষজ্ঞদের দাবি, অন্য কোনো বিমানেরই পাঠানো সঙ্কেতের সঙ্গে ওই সঙ্কেতের মিল নেই। অতএব অনুমান করাই যায়, যে সেটি নিখোঁজ এমএইচ ৩৭০ থেকেই এসেছে। আর সেই সঙ্কেতও বলছে, মালয়েশিয়ার পশ্চিম উপকূলেই উড়েছিল বিমানটি। ফলে রহস্যের তল এখন ভারত মহাসাগরেই মিলবে বলে আশা করছেন তারা। সূত্রঃ ইন্টারনেট