বিএনপি নেতৃত্বাধীন সমাবেশকে কেন্দ্র করে নিহত ৬

    0
    240

    আমার সিলেট  24 ডটকম,অক্টোবর গত কাল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশকে কেন্দ্র করে র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংঘর্ষে ছয় জন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও আহত হয়েছেন পুলিশ ও সাংবাদিকসহ শতাধিক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।

    নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে কক্সবাজারে চকরিয়ায় ৩, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে ২, নীলফামারীর জলঢাকায় ১ জন নিহত হয়েছেন।কক্সবাজারের চকরিয়ায় ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল করায় বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের গুলিতে বিএনপির তিন নেতাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়েছে অর্ধশত নেতাকর্মী। শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে চকরিয়ায় চিড়িঙগা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।আশঙ্কাজনক অবস্থায় গুলিবিদ্ধ তিন কর্মীকে চকরিয়া জমজম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

    স্থানীয়রা জানান, রাজনৈতিক সহিংসতা এড়াতে বৃহস্পতিবার থেকে চকরিয়া বাজারে স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে সব ধরণের সভা-সমাবেশ মিছিল নিষিদ্ধ করে। তবে শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চকরিয়া চিড়িঙ্গা বাজারে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ফলেএ ঘটনা ঘটে।

    প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিজিবি সদস্যরা ওই মিছিলে বাধা দেয়ার এক পর্যায়ে গুলিবর্ষণ করে। এসময় মিছিলে অংশ নেয়া নেতাকর্মীরা গুলিবিদ্ধ হয়। এসময় ঘটনাস্থলেই বাদশা, মিজানুর ও শাহেদ নিহত হয়। এসময় গুলিবিদ্ধ আরো তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়।বিএনপি কর্মী নিহতের ঘটনায় পুরো চকরিয়া বাজারে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে বিজিবি-বিএনপি নেতাকর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নেয়।
    চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে বিএনপি-আওয়ামী লীগ-পুলিশ সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় ৩ পুলিশ ও এক সাংবাদিকসহ ২৫ জন আহত হয়েছেন।নিহত নেতাকর্মীরা হলেন- বড়ালী গ্রামের যুবদল কর্মী শরিফ হোসেন (৩০) এবং ফরিদগঞ্জ উপজেলার বারপাইকা আবদুল আলীর ছেলে আরিফ(২৪)।শুক্রবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা বাস স্ট্যান্ড এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।

    ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসক আহমেদ হোসেন সুলতান টিটু ও চাঁদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসক সিরাজুল ইসলাম ২ জনের কথা নিশ্চিত করেছেন।পুলিশ জানায়, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ফরিদগঞ্জ বাজারে অবস্থান নেয় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বিকেলে উপজেলা বিএনপির সমাবেশ শেষে মিছিল করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এ নিয়ে শুরু হয় সংঘর্ষ।

    এ সময় বাজারের অন্যপ্রান্তে অবস্থান নেওয়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আধাঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষে ৩ পুলিশসহ বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কমপক্ষে ২৫ নেতাকর্মী আহত হন। আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার দুইজন মারা যান।এছাড়াও আহতদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শায়েদ সরকার ও জেলা বিএনপি নেতা জয়নাল আবেদিনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
    নীলফামারীর জলঢাকায় জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে র‌্যাব, পুলিশের ধাওয়াপাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় মোসলেম উদ্দিন (৩২) নামে এক শিবির কর্মী নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে পুলিশ সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

    শুক্রবার বিকেলে জলঢাকা পেট্রোল পাম্প এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহত মোসলেম জলঢাকা পৌরসভার ডাঙ্গাপাড়া কাজীপাড়া এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে।সংঘর্ষ চলাকালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট, টিয়ার শেল ও চাইনিস রাইফেলের গুলি ছুঁড়েছে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা।এ ঘটনার পর গোটা উপজেলায় পরিস্থিতি থমথমে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে র‌্যাবের টহলের পাশাপাশি রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

    প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিকেলে জলঢাকা পৌরসভার পেট্রোল পাম্প চত্বরে লাঠিসোটা নিয়ে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা জমায়েত হয়ে মিছিল বের করে। মিছিল নিয়ে তারা শহরের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের বাঁধা দেয়।এ সময় বাঁধা উপেক্ষা করে মিছিল নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের ধাওয়াপাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে ৫ পুলিশ, এক সাংবাদিকসহ জামায়াত-শিবিরের অন্তত ১৪ জন আহত হন। ঘটনাস্থলে বিক্ষুদ্ধ জামায়াত কর্মীরা কয়েকটি ঢাকাগামী বাস ভাঙচুর এবং ১টি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়।

    উপজেলা জামায়াতের আমির আব্দুল গণি জানান, সংঘর্ষ চলাকালে জামায়াতের ৪ জন গুলিবিদ্ধ হন। এছাড়াও আহত হন অন্তত ১০জন। গুলিবিদ্ধ শিবিরকর্মী মোসলেমকে রংপুর ইসলামিক কমিউনিটি হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

    এছাড়াও নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, বগুড়া, কুমিল্লা, বান্দবান, রাঙামাটি, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের সঙ্গে আ’লীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে শতাধিক আহত হয়েছে। এসব ঘটনায় আটক করা হয়েছে শতাধিক নেতাকর্মীকে।