বিএনপি জাতীয় নির্বাচন না করলেও উপজেলা নির্বাচন করতে চায়

    0
    264

    আমারসিলেট24ডটকম,১জানুয়ারীঃ জাতীয় নির্বাচন বর্জন করলেও বিএনপি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেবে । তবে এক্ষেত্রে সরকারি দলকে খালি মাঠে গোল দিতে রাজি নয় তারা। মূলত বিএনপির পক্ষ থেকে মধ্যবর্তী সময়ে নির্বাচন হবে এমন ভেবেই মাট দখলে রাখতে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ওয়ার্মআপ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এজন্য সারাদেশের প্রতিটি উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী দেবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট। দলের বৃহত্তর স্বার্থে খুব শিগগিরই বেগম খালেদা জিয়া মাঠপর্যায়ের নেতাদের কাছে নির্দেশনা পাঠাবেন বলে জানা যায়।
    এদিকে দশম জাতীয় নির্বাচনের আগে সর্বশেষ ৫টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভালো ফলাফল করেছে বিএনপি। দলটি আশাবাদী উপজেলা নির্বাচনেও পরিকল্পিতভাবে ভোটযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারবে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে প্রাকপ্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমও শুরু করা হয়েছে। কারণ জাতীয় নির্বাচন প্রতিহত করতে না পেরে এমনিতেই বিএনপির নেতাকর্মীরা হতাশ। এ পরিস্থিতিতে দলের হাইকমান্ড চাচ্ছে উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সক্রিয় করতে। তফসিল ঘোষণার পর পরই আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে দলীয় অবস্থান পরিস্কার করবে। তবে কৌশলগতভাবে দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবো না এমন অজুহাত তুললেও গোপনে তৃণমূল নেতাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং অংশ নিতে বলা হবে।
    অন্যদিকে আগামী রবিবার নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তবে সব উপজেলায় একসাথে নির্বাচন হচ্ছে না। মেয়াদোত্তীর্ণ সর্বোচ্চ ১ উপজেলায় একসাথে নির্বাচন হবে। সারাদেশে ৪৮৭টি উপজেলা রয়েছে। এর মধ্যে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠনের পর ২২ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তাতে বিএনপি নেতারা অংশ নিলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীরাই জয়ী হয়। তবে উপজেলা নির্বাচনে কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও বিএনপি সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচনে বিজয়ের দিক দিয়ে সরকারি দলের চেয়ে এগিয়ে যায়।
    বিএনপি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিএনপির হাইকমান্ড বর্তমান সরকারকে অবৈধ হিসেবে আখ্যায়িত করলেও সারাদেশের রাজনীতির মাঠ দখলে রাখতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। কারণ জাতীয় নির্বাচন আর স্থানীয় নির্বাচন এক বিষয় নয়। দল মনে করছে জাতীয় ইস্যুতে সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও উপজেলা নির্বাচন বর্জন করা সঠিক হবে না। কারণ বর্তমানে আওয়ামী লীগের জনসমর্থন শূন্যের কোঠায়। এ পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হলে প্রায় সব উপজেলাতেই বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে জাতীয় নির্বাচনের মতোই সরকারি দল একতরফাভাবে সব উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নিজ দলের আওতায় নিয়ে যাবে। যা দলের তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের জন্য সুখকর হবে না। বরং তারা কোণঠাসা হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এ পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই সরকারি দলকে খালি মাঠে গোল করতে না দেয়ার ব্যাপারে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
    সূত্র আরো জানায়, সাংগঠনিকভাবে দলকে আরো শক্তিশালী করতে উপজেলা নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করছেন বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। নেতাকর্মীরা নির্বাচনী যুদ্ধে নামানো হলে সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে আসবেন। তখন দল অনেক শক্তিশালী ও সংগঠিত হবে। পাশাপাশি নেতাকর্মীরাও চাঙ্গা হয়ে উঠবে। কোথাও কোথাও দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকলেও ওই পরিস্থিতে কারোর পক্ষেই নিষ্ক্রিয় থাকা সম্ভব হবে না। উপজেলা নির্বাচনের আগেই বিএনপি নেত্রী এবং দলের শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন অঞ্চল সফর করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবির পাশাপাশি উপজেলা নির্বাচনের জন্য নেতাকর্মীদের চেষ্টা করার উদ্যোগ নেবেন।
    আরো জানা যায়, বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়া উপজেলা নির্বাচনকে খুবই গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় রেখেছেন। এ নিয়ে তিনি দলের সিনিয়র নেতাদের সাথে অব্যাহতভাবে মতবিনিময় করে যাচ্ছেন। যে কোনো মূল্যে এ নির্বাচনে একক প্রার্থী দেয়ার বিষয়ে তিনি আগ্রহী। এজন্য একটি সমন্বয় ও মনিটরিং সেল গঠনেরও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। দলের যুগ্মমহাসচিব ও বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাকরা সমন্বয় কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করবেন। কোথাও কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলে তাকে বুঝিয়ে প্রত্যাহারের অনুরোধ করবে দল। এ লক্ষ্যে খুব তাড়াতাড়িই বিএনপির উচ্চপর্যায়ে সভার পাশাপাশি অঞ্চলভিত্তিক সফরও করা হবে।
    এ বিষয়ে বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবেদীন ফারুক বলেন. উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে এখনো তফসিল ঘোষণা করা হয়নি। তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানাতে পারে বলে জানা যাচ্ছে।