বাল্য বিবাহ খাস সুন্নত নাকি কুমারি,বিধবা,তালাকপ্রাপ্তা ?

    0
    408

    “তাহলে আমাদের জন্য খাস সুন্নত কোনটি, বাল্য বিবাহ এবং কুমারি বিয়ে করা নাকি বিধবা এবং তালাকপ্রাপ্তা বিবাহ করা ?”

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৬জুলাই,ডঃ আব্দুল বাতেন মিয়াজীঃ  ফেসবুক এবং অনলাইনে মুসলমান নামধারী কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী বাল্য বিবাহকে “খাস সুন্নত” প্রমাণ করার জন্য অনেক কিছু বলে যাচ্ছে। মনে রাখতে হবে ইসলাম বিশ্বজনীন ধর্ম। আল্লাহ্‌ পাক কিংবা রাসুল ﷺ এমন কিছুই করার আদেশ দেননি যা আমাদের ক্ষতির কারণ হতে পারে। অনেকেই না বুঝে “বাল্য বিবাহ খাস সুন্নত” এ ধরণের পোষ্ট শেয়ার এবং রি-পোষ্ট করছেন। তাদের উদ্দেশ্যে আমার এই লেখা।

    রাসুল ﷺ এমন অনেক কিছুই করেছেন, যা কেবল তাঁর জন্যই খাস ছিল, অন্য আম সাহাবাগণের জন্য তা অনুকরণীয় ছিল না, বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা ছিল নিষিদ্ধ। আর সমগ্র উম্মতে মুহাম্মদীর ﷺ জন্যেও তা অনুকরণীয় হয়নি।

    যেমন, “সাওমে বেসাল” বা একাধারে রোজা রাখা। রাসুল ﷺ একাধারে না খেয়ে রোজা রাখতেন। তাঁর দেখাদেখি কিছু সাহাবা সাওমে বেসাল রাখা শুরু করলে তিনি তাঁদের তা করতে নিষেধ করেন এবং বলেন, তোমাদের কে আছো আমার মতো? ঠিক তদ্রূপভাবে হিজরত করা কিছু মুসলিমাহকে কেবল রাসুল ﷺ এর জন্য বিয়ে করা খাস করে দেন স্বয়ং আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন। যাঁদের মধ্যে ছিলেন রাসুল ﷺ এর ফুফাতো এবং চাচাতো বোনেরা।

    ঠিক একই ভাবে কিছু কিছু আমল রাসুল ﷺ এর জন্য ফরজ ছিল, কিন্তু উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য তা হয়েছে নফল। রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সফরের সময় রোজা না রাখার সুযোগ দিয়ে স্বয়ং আল্লাহ্‌ পাক তাঁর বান্দাদের উপর রহমত করেন। অথচ রাসুল ﷺ নিজে সফরের সময়ও রোজা ভঙ্গ করতেন না। কিছু কিছু সাহাবা তাঁর অনুসরণ করতে চাইলে তিনি তাঁদের তা থেকে বিরত রাখতেন। এভাবে আরো অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যায়। রাসুল ﷺ এর জন্য যা খাস, উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য ক্ষেত্র বিশেষে তা নিষিদ্ধ, মুস্তাহাব কিংবা নফল হয়েছে।

    মা আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার বিয়ের উল্লেখ করে যারা বাল্য বিবাহকে খাস সুন্নত প্রমাণ করতে চান, তাদের ইসলাম সম্পর্কে আরো জানা প্রয়োজন রয়েছে। রাসুল ﷺ আল্লাহ্‌ পাকের ইংগিতে মা আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহাকে বিয়ে করেন। এর পূর্বে জিবরাঈল আলাইহিস সালাম কয়েকবার বেহেশতি সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে মা আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহাকে নবীজী ﷺ এর কাছে স্বপ্নে হাযির করেন। বিয়ে এবং সংসার জীবন শুরু নিয়ে ইমামগণের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে তখন মা আয়েশার বয়স ছিল ১৪। ৭ বা ৯ ইসলাম বিদ্বেষীদের একটি প্রোপাগান্ডা।

    তবে সে তর্কে না গিয়ে শুধু এটুকু বলবো, সবাই একমত যে, মা আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার বিয়ে ছিল স্পেশাল এবং এর উদ্দেশ্য আমরা সহজেই অনুধাবন করতে পারি যখন দেখি হাদিস বর্ণনায় মা আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন অগ্রগামী। পুরুষ এবং মেয়েদের হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন তৃতীয় এবং মেয়েদের মধ্যে ছিলেন সর্বোচ্ছ হাদিস বর্ণনাকারী (প্রথম হযরত আবু হুরায়রা, হাদিস সংখ্যা ৫৩৭৪, দ্বিতীয় হযরত ইবনে আব্বাস, হাদিস সংখ্যা ২৬৬০ এবং তৃতীয় মা আয়েশা, হাদিস সংখ্যা ২২১০)। রাসুল ﷺ এর পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত জীবনের এমন অনেক ঘটনা সম্পর্কে আমরা জানতে পারি, যা ইসলামী শরিয়ার অনেক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধান সহজ করে দিয়েছে। সুবহানআল্লাহ!

    একটি মাত্র বিয়েকে উল্লেখ করে যারা বাল্য বিবাহকে খাস সুন্নত বানাতে ব্যস্ত, তাদের উদ্দেশ্যে বলা প্রয়োজন, রাসুল ﷺ ১৩ টি মতান্তরে ১৪টি বিয়ে করেছিলেন। একমাত্র মা আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা ব্যতীত অন্য সবাই ছিলেন বিধবা এবং তালাকপ্রাপ্তা। তাহলে আমাদের জন্য খাস সুন্নত কোনটি, বাল্য বিবাহ এবং কুমারি বিয়ে করা নাকি বিধবা এবং তালাকপাপ্তা বিবাহ করা ? যেসব লোক অজ্ঞতা থেকে বাল্য বিবাহকে খাস সুন্নত প্রমাণ করতে ইসলাম ও নবী মুহাম্মাদ ﷺ কে হেয় করছে এবং নাস্তিকদের খোরাক যোগাচ্ছে, তারা কি কখনো বিধবা বিবাহ কিংবা তালাকপাপ্তাদের বিবাহ করা যে আরো বেশি খাস সুন্নত, তা বলেন? তারা কি কখনো নিজেদের ৭ কিংবা ৯ বছরের মেয়েদের, বোনদের, আত্মীয়দের বিয়ে দেন? নিজে কেবল কমবয়সী মেয়ে বিয়ে করার জন্য খুঁজে খুঁজে খাস সুন্নত ফতোয়া নিয়ে হাযির হন অথচ নিজের মেয়েকে বিয়ে দেবার সময় ঠিকই নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।

    রাসুল ﷺ মেয়েদেরকে ৭ কিংবা ৯ বছর বয়সে বিয়ে দেবার কথা বলেন নি। বরং তিনি তাঁর নিজের মেয়ে মা ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহাকে ১৭ বা ১৮ বছর বয়সে বিয়ে দিয়ে ওইসব লোকদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন, মেয়েদেরকে প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর বিয়ে দাও।পর্ব-১

    (পরের পর্বে আসছে রাসুল ﷺ মা আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার সাথে কি ধরণের আচরণ করতেন তা নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা।)লেখকঃ ইসলামী কলামিস্ট ও গবেষক।