বাবার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেলোঃপাঠানো হলনা ইউরোপে

    0
    229

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,০৩এপ্রিল,সানিউর রহমান তালুকদার, নবীগঞ্জ থেকে: বাবার বড় স্বপ্ন ছিল দ্বিতীয় পুত্রকে ইউরোপ পাঠিয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার। কিন্তু স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল! তা আর পুরণ হলনা। বাবাকে বাচাঁতে গিয়ে দুর্বৃত্তদের ছিনে ফেলায় চিরতরে বিদায় নিতে হলো জামিলের। তার মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয় স্বজন ও সহকর্মীদের কাঁদিয়ে সে এখন এখন পরপারে। জামিলের সাথে আর ফোনে কথা হবে না, দেখা বা আড্ডা কিছুই হবেনা সহপাঠিদের। নির্মমভাবে কুপিয়ে জামিলকে যে বা যাহারা হত্যা করেছে সেই হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তি দাবী করেন তার পরিবারের লোকজন, আত্মীয় স্বজন, সহকর্মী, শুশীল সমাজ সহ সর্বস্থরের লোকজন। অপর দিকে তার ভাই সৈয়দপুর মাদ্রাসার আলীমে অধ্যায়নরত কোরআনে হাফেজ এবারের দাখিল পরীক্ষার্থী ছিল মওদুদ আহমদ। কিন্তু মা-বাবা, ভাই-বোনের আত্মচিৎকারে জামিলের মতো মওদুদ ও বাবাকে বাচাঁতে এগিয়ে আসলে দূর্বৃত্তদের হামলায় গুরুত্বর আহত হয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেডে মওদুদ তার ভাইয়ের শোকে হাউমাউ করে কাদঁছে ও বারবার অজ্ঞাণ হচ্ছে। এ যেন এক খড়ার উপর মরার গা। যেটা মানবতার সম্পূর্ণ লঙ্ঘন।

    জানাযায়, গত শুক্রবার গভীর রাত অনুমান আড়াইটার দিকে আউশকান্দি ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামের আমীর মাওলানা মোস্তফা আহমদের বাড়ি মংলাপুরে ডুকে অস্ত্রধারী একদল দূর্বৃত্ত পাকা দালান বাাড়ির কলাপসিবল গেইটের তালা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে মাওলানা মোস্তফা আহমদ এর রুমে ডুকে তাকে এলোপাতারি মারপিট শুরু করে। এসময় তার স্ত্রী সালেহা আক্তার হাউমাউ করে চিৎকার দিয়ে অন্যান্য রুমে ঘুমিয়ে থাকা তার পুত্র জামিল আহমদ সিলেট লিডিং ইউনির্ভাসিটির অর্নাস ২য় বর্ষের ছাত্র জামিল আহমদ (২৫), সৈয়দপুর মাদ্রাসার আলীমে অধ্যায়নরত মওদুদ আহমদ (২০), আউশকান্দি দি লিটল ফ্লাওয়ার জুনিয়র হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র মাসুদ আহমদ (১৪) এগিয়ে আসলে তাদেরকেও অস্ত্র দিয়ে বেধরক কুপিয়ে আহত করে তাদের বাবাকে পেটাতে থাকে। অর্ধয্য হয়ে একপর্যায়ে তাদের বাবাকে রক্ষা করতে ডাকাতদের সাথে পাল্টাপাল্টি আক্রমন চলে। এতে সংঘবদ্ব ডাকাতদল ক্ষিপ্ত হয়ে তাদেরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপাতে তাকে।

    প্রায় ৩০/৩৫মিনিট সময় ডাকাতদের সাথে চলে তাদের তিন ভাইয়ের পাল্টাপাল্টি হামলা। একপর্যায়ে জামিল মুখোশপড়া দূর্বৃত্তদের মূখোশ টান মেরে খুলে ফেলায় জামিলকে তাদের বাড়ির উটানে নিয়ে বেধরক প্রহার করে। ভাই জামিলের চিৎকার শুনে অপর দুই ভাই এগিয়ে আসলে তাদেরকেও অস্ত্র দিয়ে বেধরক প্রহার করায় এতে তারা ৩ সহোদর গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটি পড়ে। এর পর জামিলকে মৃত ভেবে দূর্বৃত্তরা চলে যায়। তার মা ও বোনের আত্মচিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাদেরকে উদ্বার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জামিল আহমদকে মৃত ঘোষনা করেন। অপর আহত ২ সহোদর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এঘটনার পর থেকে এলাকায় চরম আতংক বিরাজ করছে।

    এ ব্যাপারে মাওলানা মোস্তফা আহমদ এর কন্যা সৈয়দপুর ফাজিল মাদ্রাসার নবম শ্রেনীর ছাত্রী তামান্না আক্তার কান্না জড়িত কন্ঠে বলে, আমার পিতা ও ভাইকে যারা নির্মমভাবে হত্যা ও লুটপাট করেছে আমি তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। তামান্না আক্তার আরো জানায়, তার বাবার একটি টাকার সাইড ব্যাগ লুটে নিয়েছে ডাকাতরা। আমার বাপ-ভাইকে আমাদের চোখের সামনে নির্মমভাবে হত্যা করেছে ঘাতকরা এটা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছিনা এমন কথা বলতে বলতে সে অজ্ঞাণ হয়ে পড়ে।

    জামিলের মাতা সালেহা আক্তার পুত্র হত্যার নির্মম ঘটনার বিবরন দিয়ে পুত্রের শোকে বার বারই মুর্ছা যান। এবং তিনি তার ছেলে জামিল হত্যাকারীদের শাস্তি দাবী করেন। তিনি আরো বলেন, গত ডিসেম্বর মাসে আমাদের বাড়িতে  ডাকাতরা ডুকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার সহ কয়েক লক্ষ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এর পরও শান্ত হয়নি। তবে, এবার আমার কলিজার টুকরা জামিলকে আমার বুক থেকে কেড়ে নিল। আমি এর বিচার চাই।

    এব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার ওসির এস.এম আতাউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে এটি পূর্ব পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। মামলা হয়েছে। ঘাতকদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ হৃদয় বিধারক মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান হবিগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আ.স.ম সামছুল ইসলাম। এ ঘটনায় নিহতের মাতা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৭/৮জন কে আসামী করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।