বান্ধবী অর্চনাকে আর্থিক সহযোগিতার জন্যেই মজহারের নাটক

    0
    224

    “প্রথম লালন ফকিরের আদর্শে ফরহাদ মজহারকে গুরু মেনে ফকিরী বায়াত নেন। এর থেকে শুরু হয় তাদের ঘনিষ্ঠতা। পরবর্তীতে মন দেওয়া নেওয়া এবং দৈহিক সম্পর্ক !”

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১২জুলাই,ডেস্ক নিউজঃ কবি-প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহারের বান্ধবী অর্চনা রানীকে আর্থিক সহযোগিতা করার জন্যেই অপহরণের নাটক। ফরহাদ মজহার তার বান্ধবীর সঙ্গে ঘটনার আগে-পরে মোবাইল ফোনে যে ধরনের কথা বলেছেন, কথোপকথনের রের্কডও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সংগ্রহ করেছে।

    উভয়ের মোবাইল থেকে যে ম্যাসেজ আদান-প্রদান করেছেন এ রের্কডও রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। ৩ জুলাই ভোরে তিনি মোহাম্মদপুর স্যার সৈয়দ রোডের বাসা থেকে বের হন। এরপর নিখোঁজ হন। তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয় তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। তার পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে।

    মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও পুলিশ সদর দফতরের সমন্বয়ে ফরহাদ মজহারের কথিত অপহরণের ঘটনার তদন্ত শুরু হয়। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় এ তদন্তে।
    তদন্তে শনাক্ত করা হয় এক নারীর মোবাইল ফোন। এ ফোনের সঙ্গে ফরহাদ মজহারের হয়েছে কথা বার্তা। এ মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে খোঁজ পান তদন্তকারী কর্মকর্তারা এক নারীর। ঐ নারী হলেন ফরহাদ মজাহারের “উবিনীগ” নামের এনজিও’র সাবেক কর্মী। তার নাম অর্চনা রানী (২৮)। তিনি সহজ সরল এক নারী। বাঁচার তাগিদে অনেক কাঠখড় পুড়িয়েছেন। ২০০৫ সালে উবিনীগ নামক এনজিওতে চাকরি নেন তিনি। অর্চনা রানী ভাবছেন এই বুঝি তার এক ঠাঁই হলো। কিন্তু কাজের ফাঁকে ফরহাদ মজহারের সঙ্গে তার হয়ে উঠে ঘনিষ্টতা। প্রথম লালন ফকিরের আদর্শে ফরহাদ মজহারকে গুরু মেনে ফকিরী বায়াত নেন। এর থেকে শুরু হয় তাদের ঘনিষ্ঠতা। পরবর্তীতে মন দেওয়া নেওয়া এবং দৈহিক সম্পর্ক!
    তদন্ত কর্মকর্তাদের বলেন, তিনি ফরহাদ মজহারকে মনেপ্রাণে ভালবাসেন ও ভক্তি করেন। প্রায়ই অর্চনা রানীর বাসায় যাতায়াত এবং দৈহিক মেলামেশা করতেন ফরহাদ মজহার।
    ফরহাদ মজহার তাকে আর্থিক সহযোগিতা করতেন।বাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে সংসারের অন্যান্য খরচ দিতেন তিনি। ২০০৭ সালে অর্চনা রানী অন্তঃসত্তা হয়ে পড়েন। ওই সময় তার অবৈধ গর্ভপাত ঘটানো হয়। ঐ গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে ঐ সময় অর্চনা রানী শারীরিক ক্ষতিগ্রস্ত হন। সুস্থ হয়ে উঠতে তার অনেক সময় লাগে। ঐ সব ঘটনা ফরহাদ মজহারের পরিবারে জানাজানি হলে অর্চনা রানী উবিনীগ থেকে চাকরি হারান।
    তিনি চাকরি হারালেও ফরহাদ মজহারের আর্থিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকায় অর্চনা রানীর কোন সমস্যা হয়নি। সর্বশেষ তিনি আবার ৪ মাসের অন্তঃসত্তা হয়ে পড়েন। তিনি ফরহাদ মজহারকে বলেন, আপনার সম্পর্ক এখন আমার পেটে।  ফরহাদ মজহার  অর্চনা রানীকে আশস্ত করেন যে, এবার তোমাকে ভাল ডাক্তার দেখানো হবে। আগের মত তোমার শারীরিক ক্ষতি যাতে না হয়। সে বিষয়টি ফরহাদ মজহার গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। ইতিমধ্যে অর্চনা রানীর বাবা অসুস্থ হয়েছেন। বাবার চিকিত্সার জন্য অর্চনা রানীর দরকার অনেক টাকা। ফরহাদ মজাহারের কাছে সেই পরিমাণ অর্থ নেই। অবশেষে অর্থের নেপথ্যে ফরহাদ মজহারের অপহরণের নাটক। এ নাটক ছিল তার পরিবারের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা আদায় করা।
    অর্চনা রানীর দেওয়া তথ্য, কথোপোকথন রেকর্ড ও বিভিন্ন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হন যে ফরহাদ মজহারের অপহরণের ঘটনা “সাজানো নাটক।” ঘটনার দিন সকাল ১১টার দিকে ফরহাদ মজহার স্ত্রীকে ফোন করে বলেন, ৩০ লাখ টাকা তোমার কাছে রেখে দিও এবং তোমার কাছে ঐ টাকা চাইলে বলবে ডেলিভার হয়ে গেছে। ফিরে এসে বাকিটা দেখব। খুলনা গিয়ে তিনি নিউমার্কেটে (খুলনা) গেছেন ও বের হয়েছেন।
    ঐ দিন সন্ধ্যায় খুলনা থেকে অর্চনা রানীকে তার দুইটি নম্বরের প্রথম দফা ১৩ হাজার টাকা ও দ্বিতীয় দফায় দুই হাজার টাকা পাঠিয়েছেন ফরহাদ মজহার। সময় সন্ধ্যা ৭টা ১৮ মিনিট ও সন্ধ্যা সাতটা ১৯ মিনিট। বাসের টিকেট নিজে ক্রয় করেছেন। তারও প্রমাণ তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের হাতে। তার কথিত অপহরণের সময় মাইক্রোবাসের কথা বলা হলেও গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ঐ মাইক্রোবাসের কোন হদিস পাননি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।