বাংলা বর্ষপঞ্জির ইতিকথা “শুভ নব বর্ষ”

    0
    340

    বঙ্গাব্দ, বাংলা সন বা বাংলা বর্ষপঞ্জি হল বঙ্গদেশের একটি ঐতিহ্য মণ্ডিত সৌর পঞ্জিকা ভিত্তিক বর্ষপঞ্জি। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সৌরদিন গণনা শুরু হয়। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরে আসতে মোট ৩৬৫ দিন কয়েক ঘণ্টা সময়ের প্রয়োজন হয়। এই সময়টাই এক সৌর বছর। গ্রেগরীয় সনের মতন বঙ্গাব্দেও মোট ১২ মাস। এগুলো হল ‌ বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন ও চৈত্র। আকাশে রাশিমণ্ডলীতে সূর্যের অবস্থানের ভিত্তিতে বঙ্গাব্দের মাসের হিসাব হয়ে থাকে। যেমন যে সময় সূর্যমেষ রাশিতে থাকে সে মাসের নাম বৈশাখ।

    বাংলাদেশ এবং পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও ত্রিপুরা অঞ্চলে এই বর্ষপঞ্জি ব্যবহৃত হয়। বঙ্গাব্দ শুরু হয় পহেলা বৈশাখ বা বৈশাখ মাসের প্রথম দিনে। বঙ্গাব্দ সব সময়ই গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জীর চেয়ে ৫৯৩ বছর কম।

    সংশোধিত বাংলা পঞ্জিকা বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৮৭ সালে গৃহীত হয়। কিন্তু ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা রাজ্যে পুরাতন পদ্ধতি ব্যাবহৃত হয়।

    ইতিহাস

    বঙ্গাব্দের সূচনা সম্পর্কে ২টি মত চালু আছে। প্রথম মত অনুযায়ী – প্রাচীন বঙ্গদেশের (গৌড়) রাজা শশাঙ্ক (রাজত্বকাল আনুমানিক ৫৯০-৬২৫ খ্রিস্টাব্দ) বঙ্গাব্দ চালু করেছিলেন। সপ্তম শতাব্দীর প্রারম্ভে শশাঙ্কবঙ্গদেশের রাজচক্রবর্তী রাজা ছিলেন। আধুনিক বঙ্গ, বিহার এলাকা তাঁর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল৷ অনুমান করা হয় যে, জুলীয় বর্ষপঞ্জীর বৃহস্পতিবার ১৮ মার্চ ৫৯৪ এবং গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জীর শনিবার ২০ মার্চ ৫৯৪ বঙ্গাব্দের সূচনা হয়েছিল।

    দ্বিতীয় মত অনুসারে, ইসলামী শাসনামলে হিজরী পঞ্জিকা অনুসারেই সকল কাজকর্ম পরিচালিত হত। মূল হিজরী পঞ্জিকা চান্দ্র মাসের উপর নির্ভরশীল। চান্দ্র বৎসর সৌর বৎসরের চেয়ে ১১/১২ দিন কম হয়। কারণ সৌর বৎসর ৩৬৫ দিন, আর চান্দ্র বৎসর ৩৫৪ দিন। একারণে চান্দ্র বৎসরে ঋতুগুলি ঠিক থাকে না। আর বঙ্গদেশে চাষাবাদ ও এজাতীয় অনেক কাজ ঋতুনির্ভর। এজন্য মোগল সম্রাট আকবরের সময়ে প্রচলিত হিজরী চান্দ্র পঞ্জিকাকে সৌর পঞ্জিকায় রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সম্রাট আকবর ইরান থেকে আগত বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী আমির ফতুল্লাহ শিরাজীকে হিজরী চান্দ্র বর্ষপঞ্জীকে সৌর বর্ষপঞ্জীতে রূপান্তরিত করার দায়িত্ব প্রদান করেন। ফতুল্লাহ শিরাজীর সুপারিশে পারস্যে প্রচলিত ফার্সি বর্ষপঞ্জীর অনুকরণে ৯৯২ হিজরী মোতাবেক ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আকবর হিজরী সৌর বর্ষপঞ্জীর প্রচলন করেন। তবে তিনি ঊনত্রিশ বছর পূর্বে তার সিংহাসন আরোহনের বছর থেকে এ পঞ্জিকা প্রচলনের নির্দেশ দেন। এজন্য ৯৬৩ হিজরী সাল থেকে বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হয়। ৯৬৩ হিজরী সালের মুহররম মাস ছিল বাংলা বৈশাখ মাস, এজন্য বৈশাখ মাসকেই বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস এবং ১লা বৈশাখকে নববর্ষ ধরা হয়।

    শামসুজ্জামান খান এবং নিতীশ সেনগুপ্তের মতে বাংলা বর্ষপঞ্জির উৎপত্তি পরিষ্কার নয়। এই উৎপত্তিতে ইসলামী প্রভাব ও বৌদ্ধ বা হিন্দু প্রভাব দুইই থাকতে পারে।

    ইসলামী প্রভাব

    শামসুজ্জামান খান বলেন, “একে বাংলা সন বা সাল বলা হয়। এই সন ও সাল হল যথাক্রমে আরবী ও ফারসী শব্দ। এটা নির্দেশ করছে এগুলো মুসলিম রাজা বা সুলতান কর্তৃক বাংলায় পরিচিত করানো হয়”।অন্যদিকে নিতীশ সেনগুপ্ত বলেন, এর ঐতিহ্যগত নামটি হল বঙ্গাব্দ। আকবরের সময় এই বর্ষপঞ্জিকে বলা হত তারিখ-ই-ইলাহি। বর্ষপঞ্জির তারিখ-ই-ইলাহি ভারশনে, প্রতিটি দিন এবং মাসের আলাদা আলাদা নাম ছিল, আর এখন যে মাসের নামগুলো দেখা যাচ্ছে তারিখ-ই-ইলাহিতে এরকম মাসের নামের বদলে অন্য মাসের নাম ছিল। বাংলাপিডিয়া অনুসারে, আকবরের পৌত্র শাহ জাহান রবিবার দিয়ে শুরু হওয়া সাত দিনের সপ্তাহের প্রচলনের জন্য এই তারিখ-ই-ইলাহি বর্ষপঞ্জির সংস্কার করেন। আর সেই সাথে কোন এক অজানা সময়ে সেই সময় বর্তমান থাকা শকাব্দে (ভারতীয় জাতীয় বর্ষপঞ্জি) থাকা মাসের নামের সাথে মিলিয়ে তারিখ-ই-ইলাহির মাসের নামকরণ করা হয়। আজ বাংলায় যে বর্ষপঞ্জিটি ব্যবহার করা হয়, সেই বর্ষপঞ্জিটিই তার ভিত্তি স্থাপন করে।

    মুঘল আমলে, ইসলামিক হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসারে বাঙ্গালিদের থেকে খাজনা আদায় করা হত। সেই বর্ষপঞ্জিটি ছিল একটি চান্দ্র্য বর্ষপঞ্জি, আর তাই সৌর কৃষিচক্রের সাথে সেই বর্ষপঞ্জিটির কোন সমন্বয় ছিল না কোন কোন উৎস্য অনুযায়ী, খাজনা দানের সময় যে উৎসব এর আয়োজন হত সেই রীতি মুঘল সম্রাট আকবরেরই তৈরি, আর তখন থেকেই বাংলা সালকে বঙ্গাব্দ বলা হত। আকবর তার রাজজোতিষী ফতুল্লাহ শিরাজীকে চান্দ্র্য ইসলামিক বর্ষপঞ্জি এবং সৌর হিন্দু বর্ষপঞ্জিকে সমন্বিত করে একটি বর্ষপঞ্জি তৈরি করতে বলেন। আকবরের দেয়া আজ্ঞা পালন করে ফতুল্লাহ শিরাজী যে বর্ষপঞ্জি তৈরি করে দেন তা ফশলি শান(কৃষি বর্ষপঞ্জি) নামে পরিচিত ছিল। কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে, এখান থেকেই বাংলা বর্ষপঞ্জির সূচনা হয়। শামসুজ্জামান খানের মতে, সম্ভবত মুঘল গভর্নর নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ সর্বপ্রথম পুণ্যাহ এর রীতি (খাজনা আদায় করার জন্য একটি উৎসবের দিন) চালু করেন। আর এটা করার সময়ই তিনি আকবরের বার্ষিক খাজনা আদায়ের নীতি গ্রহণ করেন।

    আবার এটাও অস্পষ্ট যে বাংলা বর্ষপঞ্জি হুসেন শাহ না আকবর কর্তৃক গৃহীত হয়। বাংলা বর্ষপঞ্জির রীতি আকবরের পূর্বে হুসেন শাহ চালু করে থাকতে পারেন। নিতীশ সেনগুপ্ত বলেন, বাংলা বর্ষপঞ্জি হুসেন শাহই শুরু করুন আর আকবরই, এটা বাংলার ঐতিহ্যগত বর্ষপঞ্জির ভিত্তিতে বসন্তের ফসল সংগ্রহের পর খাজনা আদায় করার কাজ সহজ করে দিয়েছিল। কারণ ইসলামী হিজরি বর্ষপঞ্জি খাজনা আদায়ের দিন ধার্য করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রশাসনিক জটিলতার সৃষ্টি করে।

    হিন্দু বা বৌদ্ধ প্রভাব

    আরও তথ্যের জন্য দেখুন: হিন্দু বর্ষপঞ্জী

    কোন কোন ঐতিহাসিক বলেন বাংলা বর্ষপঞ্জি এসেছে ৭ম শতকের হিন্দু রাজা শশাঙ্কের কাছ থেকে। আকবরের সময়ের অনেক শতক আগে নির্মিত দুটি শিব মন্দিরে বঙ্গাব্দ শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায়। আর এটাই নির্দেশ করে, আকবরের সময়ের আরও অনেক আগেও বাংলা বর্ষপঞ্জির অস্তিত্ব ছিল।

    বৈদিক আচার অনুষ্ঠানের জন্য কোন সময়ে কি কাজ হবে এধরণের ধারণা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বৈদিক যুগের জ্যোতিঃশাস্ত্রে পারদর্শীগণ তখন মহাকাশের বিভিন্ন জ্যোতিষ্কের চলাফেরা দেখে সময় সম্পর্কিত হিসাব নিকাশ ও এই সব আচার অনুষ্ঠানের দিন নির্ধারণ করার কাজ করতেন। জ্যোতিঃশাস্ত্র বিষয়ক পাঠ ছিল ছয়টি প্রাচীন বেদাঙ্গ বা বেদ সংক্রান্ত ছয়টি প্রাচীন বিজ্ঞানের একটি- যেগুলো হিন্দুধর্মগ্রন্থের অংশ। বৈদিক আচার অনুষ্ঠানের জন্য প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি একটি উন্নত ও পরিশীলিত সময় নির্ণয় কৌশল এবং বর্ষপঞ্জি প্রস্তুত করে।

    হিন্দু বিক্রমী বর্ষপঞ্জির নামকরণ করা হয় বিক্রমাদিত্যের নাম অনুসারে, এটা শুরু হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৫৭ অব্দ থেকে। ভারত ও নেপালের অনেক স্থানের মত গ্রামীণ বাঙ্গালী সম্প্রদায়ে বাংলা বর্ষপঞ্জির কৃতজ্ঞতা বিক্রমাদিত্যকে দেয়া হয়। কিন্তু অন্যান্য অঞ্চলে খ্রিষ্টপূর্ব ৫৭ অব্দে সেই বর্ষপঞ্জির সূচনা হলেও বাংলা বর্ষপঞ্জি শুরু হয়েছিল ৫৯৩ খ্রিষ্টাব্দে যা নির্দেশ করে কোন একটা সময়ে বঙ্গাব্দের আদর্শ বিন্দু বা রেফারেন্স পয়েন্টকে পরিবর্তিত করা হয়েছিল।

    হিন্দু পণ্ডিতগণ সূর্য, চন্দ্র এবং অন্যান্য গ্রহসমূহের ক্রমাবর্তনকে পর্যবেক্ষণ এবং হিসাব করে সময়ের হিসাব রাখার চেষ্টা করতেন। সূর্য সম্পর্কিত এই হিসাব নিকাশ সংস্কৃত ভাষার বিভিন্ন জ্যোতিঃশাস্ত্র বিষয়ক গ্রন্থে উঠে এসেছে, যেমন ৫ম শতকে আর্যভট্ট কর্তৃক রচিত আর্যভট্টীয়, ৬ষ্ঠ শতকে লটদেব কর্তৃক রচিত রোমক এবং বরাহমিহির কর্তৃক রচিত পঞ্চসিদ্ধান্তিকা, ৭ম শতকে ব্রহ্মগুপ্ত কর্তৃক রচিত খাণ্ডখাণ্ড্যক ইত্যাদি।এই গ্রন্থগুলোতে সূর্য সহ ও বিভিন্ন গ্রহ সম্পর্কে লেখা হয় এবং এদের স্থানান্তর সম্পর্কিত হিসাব-নিকাশ এবং বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়। অন্যান্য গ্রন্থ যেমন সূর্য সিদ্ধান্ত ৫ম থেকে ১০ শতকে রচিত হয় এবং এর অধ্যায়গুলোতে বিভিন্ন গ্রহ এবং দেব দেবী সংক্রান্ত পুরাণ দেখা যায়।

    ভারতীয় রাজ্যগুলো যেমন পশ্চিমবঙ্গ্‌, ত্রিপুরা এবং আসামের বাঙ্গালীদের ব্যবহৃত বাংলা বর্ষপঞ্জি সূর্য সিদ্ধান্ত নামক সংস্কৃত গ্রন্থের উপর ভিত্তি করে বানানো বলে অনেকে বলে থাকেন। এখানে মাসগুলোর ঐতিহাসিক সংস্কৃত নাম রক্ষা করা হয়, সেই সাথে এর প্রথম মাসের নামও বৈশাখ। এই বর্ষপঞ্জি হিন্দু বর্ষপঞ্জি ব্যবস্থার সাথে শক্তভাবে বন্ধনে আবদ্ধ এবং বিভিন্ন বাঙ্গালী হিন্দু উৎসব এটা দেখে ঠিক করা হয়।

    সনাতন বাংলা বর্ষপঞ্জী

    ৫৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে বরাহমিহির “পঞ্চসিদ্ধান্তিকা” নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। গ্রন্থটি পাঁচটি খণ্ডে সমাপ্ত। এই গ্রন্থটিকে জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং জ্যোতিষশাস্ত্রের সংক্ষিপ্তসার বলে অভিহিত করা হয়। পঞ্চসিদ্ধান্তিকার পাঁচটি খণ্ডের নাম– এই সিদ্ধান্তগুলো হল– সূর্যসিদ্ধান্ত, বশিষ্ঠসিদ্ধান্ত, পৌলিশ সিদ্ধান্ত, রোমক সিদ্ধান্ত ও ব্রহ্ম সিদ্ধান্ত। প্রাচীন দিন, মাস, বৎসর গণনার ক্ষেত্রে ‘সূর্যসিদ্ধান্ত’ একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। বরাহমিহিরের পরে ব্রহ্মগুপ্ত নামক অপর একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী (জন্ম ৫৯৮) একটি সিদ্ধান্ত রচনা করেছিলেন। এই গ্রন্থটির নাম ব্রহ্মস্ফুট সিদ্ধান্ত।

    এই গ্রন্থটি খলিফা আল-মনসুরের আদেশে সিন্দহিন্দ নামে আরবি ভাষায় অনূদিত হয়েছিল। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে সৌর-মাস নির্ধারিত হয়, সূর্যের গতিপথের উপর ভিত্তি করে। সূর্যের ভিন্ন অবস্থান নির্ণয় করা হয় আকাশের অন্যান্য নক্ষত্রের বিচারে। প্রাচীন কালের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সূর্যের বার্ষিক অবস্থান অনুসারে আকাশকে ১২টি ভাগে ভাগ করেছিলেন। এর একটি ভাগকে তাঁরা নাম দিয়েছিলেন রাশি। আর ১২টি রাশির সমন্বয়ে যে পূর্ণ আবর্তন চক্র সম্পন্ন হয়, তার নাম দেওয়া হয়েছে রাশিচক্র। এই রাশিগুলোর নাম হল– মেষ রাশি, বৃষ রাশি, মিথুন রাশি, কর্কট রাশি, সিংহ রাশি, কন্যা রাশি, তুলা রাশি, বৃশ্চিক রাশি, ধনু রাশি, মকর রাশি, কুম্ভ রাশি ও মীন রাশি। সূর্যের বার্ষিক অবস্থানের বিচারে, সূর্য কোনো না কোন রাশির ভিতরে অবস্থান করে। এই বিচারে সূর্য পরিক্রমা অনুসারে, সূর্য যখন একটি রাশি থেকে অন্য রাশিতে যায়, তখন তাকে সংক্রান্তি বলা হয়। এই বিচারে এক বছরে ১২টি সংক্রান্তি পাওয়া যায়। একেকটি সংক্রান্তিকে একেকটি মাসের শেষ দিন হিসেবে গণ্য করা হয়।

    যেদিন রাত্রি ১২টার মধ্যে সূর্য্য ০ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশে প্রবেশ করে তার পরদিনই ১লা বৈশাখ (পহেলা বৈশাখ) হয়। যেদিন রাত্রি ১২টার মধ্যে সংক্রান্তি হয় তার পরদিনই মাসের প্রথম দিন। মূলত একটি সংক্রান্তির পরের দিন থেকে অপর সংক্রান্ত পর্যন্ত সময়কে এক সৌর মাস বলা হয়। লক্ষ্য করা যায় সূর্য পরিক্রমণ অনুসারে সূর্য প্রতিটি রাশি অতিক্রম করতে একই সময় নেয় না। এক্ষেত্রে মাসভেদে সূর্যের একেকটি রাশি অতিক্রম করতে সময় লাগতে পারে, ২৯, ৩০, ৩১ বা ৩২ দিন। সেই কারণে প্রতি বছর বিভিন্ন মাসের দিনসংখ্যা সমান হয় না। এই সনাতন বর্ষপঞ্জী অনুসারে বছর ঋতুভিত্তিক থাকে না। একেকটি মাস ক্রমশঃ মূল ঋতু থেকে পিছিয়ে যেতে থাকে।

    সংস্কারকৃত বাংলা বর্ষপঞ্জী

    বাংলা একাডেমী কর্তৃক বাংলা সন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয় ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬ সালে। ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র নেতৃত্বে এ কমিটি বিভিন্ন বাংলা মাস ও ঋতুতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সাংস্কৃতিক জীবনে কিছু সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতাকে নির্ণয় করে সেগুলো হতে উত্তরণের প্রস্তাবনা প্রদান করেন। বাংলা সনের ব্যাপ্তি গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জীর মতনই ৩৬৫ দিনের। যদিও সেখানে পৃথিবীর সূর্যকে প্রদক্ষিণের পরিপূর্ণ সময়কেই যথাযথভাবে নেয়া হয়েছে। এই প্রদক্ষিণের মোট সময় ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট এবং ৪৭ সেকেন্ড। এই ব্যবধান ঘোচাতে গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জীর প্রতি চার বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি অতিরিক্ত দিন যোগ করা হয়। ব্যতিক্রম হচ্ছে সে শতাব্দীতে যে শতাব্দীকে ৪০০ দিয়ে ভাগ করা যায় না বা বিভাজ্য। জ্যোতির্বিজ্ঞান নির্ভর হলেও বাংলা সনে এই অতিরিক্ত দিনকে আত্মীকরণ করা হয়নি। বাংলা মাস অন্যান্য সনের মাসের মতনই বিভিন্ন পরিসরের হয়ে থাকে। এই সমস্যাগুলোকে দূর করার জন্য ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ কমিটি বাংলা একাডেমীর কাছে কতকগুলো প্রস্তাব পেশ করে। এগুলো হচ্ছেঃ-

    • বছরের প্রথম পাঁচ মাস অর্থাৎ বৈশাখ হতে ভাদ্র হবে ৩১ দিনের;
    • বাকী মাসগুলো অর্থাৎ আশ্বিন হতে চৈত্র হবে প্রতিটি ৩০ দিনের মাস;
    • প্রতি চতুর্থ বছরের ফাল্গুন মাসে অতিরিক্ত একটি দিন যোগ করে তা হবে ৩১ দিনের।

    বাংলাদেশে বাংলা একাডেমী সরকারীভাবে এই সংশোধিত বাংলা মাসের হিসাব গ্রহণ করে। যদিও ভারতের পশ্চিম বাংলা, অসম ও ত্রিপুরার বাঙালিরা পুরনো বাংলা সনের ব্যবহার করেন। সুত্রঃউইকিপিডিয়া