বাঁধ ভেঙে সুনামগঞ্জের ছয়টি বড় হাওর ডুবে গেছে

    0
    237

    সদ্য শেষ হওয়া ঘূর্ণিঝড় ফণী বাংলাদেশ অতিক্রম করে ভারতের আসামে যাওয়ার পর মেঘালয় ও আসামে লাগাতার ভারি বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টির পানি পাহাড়ি নদ-নদী বেয়ে বাংলাদেশে নামায় উপচে ও বাঁধ ভেঙে সুনামগঞ্জের ছয়টি বড় হাওর ডুবে গেছে। কৃষকদের দাবি- হাওর ডুবে তাদের জমি ও খলায় থাকা কমপক্ষে ২০ ভাগ ধান নষ্ট হয়ে গেছে।

    রোববার সকালে জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় সরেজমিন দেখা গেছে, জমিতে পাকা ধান, খলায় মাড়াই না করা কাটা ধান, মাড়াই করা ধান, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে খড়ও। এই হাওরপাড়ের কমপক্ষে ২০ হাজার কৃষক পরিবারকে উৎকণ্ঠা নিয়ে খলায়-জমিতে এবং বাড়িতে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা গেছে।

    উপজেলার রাধানগরের কৃষক কফিল উদ্দিন বলেন, “হাওরের রাবার ড্যামের পাশের অংশ এবং ছাতলপাড় দিয়ে পানি ঢুকেছে। প্রথমে উপচে ও পরে বাঁধ ভেঙে গেছে। গত তিন দিন বৃষ্টি থাকায় আমার ৮ কেয়ার জমির কাটা ধান মাড়াই করতে পারিনি। মাড়াই করা ধান আরও ৫০ মণেরও বেশি রয়েছে খলায়। এগুলো শুকাতে পারিনি। এ অবস্থায় হাওরে পানি এসেছে। এখন ধান শুকাব, নাকি খলায় ডুবে যাওয়া ধান বাড়িতে নেব- বুঝে উঠতে পারছি না।”

    বিশ্বম্ভরপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্বপন কুমার বর্মণ বলেন, “পানি প্রবল বেগে ঢুকছে। মানুষ খলার ধান-খড়, কাটা ধান বাড়িতে নেবে, নাকি জমির ধান কাটবে। কোনটা রেখে কোনটা করবে। শ্রমিক মিলছে না বেশি টাকা দিয়েও। এ অবস্থায় অনেকে ক্ষেতে থাকা পাকা ধানের আশা ছেড়েই দিয়েছে।”

    জামালগঞ্জের বেহেলী ইউপি চেয়ারম্যান অসিম তালুকদার বলেন, ‘হালির হাওরের নিতাইপুরের পাশের অংশ দিয়ে হাওরে পানি ঢুকেছে। এই বাঁধের একেবারে নিচ থেকে তুলে বালিমাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। পানি বাঁধের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় বাঁধ দেবে গেছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্লোজার, অথচ এখানে বস্তাও দেওয়া হয়নি। বাঁধের পাশের কৃষকদের শতকরা ৩৫ ভাগ জমির ধান কাটা হয়নি। রাতের ঘটনা হওয়ায় অনেকের কাটা ধান খলা থেকে ভেসে গেছে।’

    তাহিরপুরের শনির হাওরের দুটি অংশ দিয়ে পানি ঢুকেছে। কালীর খেওয়ের সামনের লালুর ঘোয়ালা এবং বেহেলী ইউনিয়নের বেইলডুব অংশ দিয়ে শনিবার গভীর রাত থেকেই পানি ঢোকা শুরু হয়।

    এই হাওরপাড়ের ভাটি তাহিরপুরের কৃষক ইউনুস আলী, গোবিন্দশ্রীর সেলিম আখঞ্জি বলেন, ‘খলায় থাকা কাটা ও মাড়াই করা ১০ ভাগ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ এই উপজেলার মাটিয়ান হাওরের গাজীপুরের নালা এবং চতুর্ভূজের নালা দিয়েও প্রথমে উপচে এবং পরে বাঁধ ভেঙে হাওরে ঢুকেছে পানি। ধর্মপাশার সোনামোড়ল হাওরের জারাকোনা এবং ঘুরমার হাওরের ঝিনারিয়া বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করেছে।

    সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, “ফণী আসামে গিয়ে লঘুচাপে পরিণত হয়ে ভারি বৃষ্টিপাত হয়। এ সময় পাহাড়ি নদীতে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পায়। শনিবার রাত সাড়ে ৩টায় সুনামগঞ্জের ছয়টি হাওরে পানি প্রবেশ করে। তবে দিনে বৃষ্টি না হওয়ায় পানি আর বাড়েনি, বরং সামান্য কমেছে।”

    জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক বশির আহমদ বলেন, “হাওরে ৯৪ ভাগ ধান কাটা শেষ। হালির হাওরের নিতাইপুর বাঁধের পাশের অংশে ৪০-৫০ হেক্টর জমির ধান কাটা বাকি ছিল। এই ধান নিমজ্জিত হতে পারে। অন্য কোনো হাওরের নিচু এলাকায় কোনো ধান ছিল না।”

    ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক সফিউল ইসলাম বলেন, ফণীর কথা উল্লেখ করে গত বৃহস্পতিবার থেকেই মসজিদে মসজিদে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মাইকে প্রচার করা হয়েছে- ধান কাটা বাকি থাকলে, তা কেটে নিরাপদে নেওয়ার জন্য। ফণীর প্রভাবে আসাম ও মেঘালয়ে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টির পানি সুনামগঞ্জের কয়েকটি হাওরে এসে ঢুকেছে। আমরা সরেজমিন ঘুরে দেখছি বাঁধ নির্মাণে কোনো ত্রুটি ছিল কি-না, ত্রুটি থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেটিও নিরূপণে সংশ্নিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’