বঙ্গভবনে হযরত শাহজালাল দাখিনির মাজারঃঅনেকের অজানা

    0
    253

    আমারসিলেট24ডটকম,নভেম্বরঃ সুলতানি আমলের হযরত শাহজালাল দখিনি(রাঃ) নামে এক সুফি সাধকের মাজার রয়েছে দেশের সর্বোচ্চ পদে আসীন মহামান্য রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন এলাকায়। বর্তমান বঙ্গভবনের ভিতরে প্রবেশের পর কিছু দূর এগিয়ে গেলেই বাম দিকে দুটি মাজারের নামপলক চোখে পরে যার একটিতে অতি সাধারণ ভাবে লিখা রয়েছে ‘’হযরত শাহজালাল দখিনির কবর’’!

    বঙ্গভবনের প্রবেশদ্বার
    বঙ্গভবনের প্রবেশদ্বার

    বঙ্গভবনের ইতিহাসঃ বঙ্গভবন  বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন। ঢাকার দিলকুশা এলাকায় অবস্থিত। গোড়ার দিকে এটি ছিল ভারতের ব্রিটিশ ভাইসরয়ের অস্থায়ী সরকারি বাসভবন এবং পরে পূর্ববাংলার গভর্নরের সরকারি বাসস্থান। তখন এই ভবন গভর্নর হাউজ নামে পরিচিত ছিল।

    বঙ্গভবনের বর্তমান স্থানটির দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। সুলতানি আমলে সুফিসাধক হযরত শাহজালাল দখিনি (রাঃ) এই এলাকায় বাস করতেন। তিনি ও তাঁর অনুসারীরা তৎকালীন সুলতানের লোকজন কর্তৃক নির্মমভাবে নিহত(শাহাদাত) (৮৮১ হিজরি) হলে এখানেই তাঁদের কবর দেওয়া হয়। এ স্থানটি একসময় মাযার হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করে, অবশ্য কালক্রমে এর গুরুত্ব হ্রাস পায়। মুগল শাসনামলে মির্জা মুকিম সুবাহদার মীরজুমলার অধীনে নওয়ারা মহলের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। পুরানা পল্টন ময়দানের দক্ষিণ পাশে ছিল তাঁর বাসভবন।

    এই বাসস্থলের ভেতর ও বাহিরের অংশে দুটি বড় টিলা ছিল। একটি টিলা এখনও বঙ্গভবনের চৌহদ্দির মধ্যে রয়েছে। অভ্যন্তরভাগে অবস্থিত বিশাল পুকুরটি মতিঝিল (মোতির পুকুর) নামে পরিচিত ছিল। মুগল শাসনের শেষের দিকে সম্ভবত এলাকাটি পরিত্যক্ত হয়। মানুক হাউজ নামের একটি ভবন এখনও বঙ্গভবন চত্বরে রয়েছে। ধারণা করা হয় যে, এটি ব্রিটিশ আমলে মানুক নামের একজন আর্মেনীয় জমিদারের বাসস্থান ছিল। ঢাকার নবাব আবদুল গণি জায়গাটি মানুকের কাছ থেকে ক্রয় করেন। সেখানে তিনি একটি বাংলো নির্মাণ করেন এবং স্থানটির নাম দেন দিলকুশা বাগ।

    ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের সময় পূর্ববাংলা ও আসাম সরকার জায়গাটির একাংশ ক্রয় করে সেখানে ভারতের ভাইসরয়ের জন্য একটি ভবন নির্মাণ করে। পূর্ববাংলায় তার সফর ও অবস্থানকালে ভাইসরয় ১৯১১ সাল পর্যন্ত এখানেই বাস করতেন। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এটি গভর্নর হাউজ নামেই পরিচিত ছিল। ১৯৬১ সালের ঝড়ে ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এটি পুনর্নিমাণ করা হয়। ১৯৬৪ সালে নতুন ভবনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর এখানে বসবাস করতেন।

    বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী বাংলাদেশের প্রথম সাংবিধানিক রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি এর নামকরণ হয় বঙ্গভবন।

    বঙ্গভবনের চার পাশে রয়েছে উচ্চ সীমানা প্রাচীর। প্রধান ভবনটি তিন তলা বিশিষ্ট একটি প্রাসাদোপম অট্টালিকা। এই ভবনের চতুষ্পার্শ্ব সবুজ বৃক্ষরাজি পরিবেষ্টিত। নীচের তলার মেঝের আয়তন ৬,৭০০ বর্গমিটার। উত্তর-পূর্ব কোণের দুটি তলা জুড়ে রয়েছে রাষ্ট্রপতির আবাসস্থল। পাঁচটি সুসজ্জিত প্রশস্ত শয়নকক্ষসহ রাষ্ট্রপতির জন্য দুটি স্যুট রয়েছে। রাষ্ট্রপতির দপ্তর, রাষ্ট্রপতির অসামরিক ও সামরিক সচিবদের দপ্তর, অন্যান্য কর্মকর্তাদের দপ্তর, দেশী ও বিদেশী দর্শনার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য পৃথক পৃথক কক্ষ নিচের তলায় অবস্থিত। এসব ছাড়াও সেখানে রয়েছে কেবিনেট কক্ষ, অনুষ্ঠানের জন্য নির্দিষ্ট হলঘর, দরবার কক্ষ, রাষ্ট্রীয় ভোজসভার জন্য নির্ধারিত হল, ছোট আকারের মিলনায়তন এবং স্থানীয় দর্শনার্থীদের জন্য বিশ্রামকক্ষ। রাষ্ট্রপতির আবাসস্থল ছাড়াও দ্বিতীয় তলায় রয়েছে কর্মকর্তাদের জন্য পাঁচটি কক্ষ, একটি নিয়ন্ত্রন কক্ষ এবং একটি স্টুডিও। বিদেশী রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানদের জন্য তিন তলায় রয়েছে চারটি স্যুট।

    বঙ্গভবনের মূল ফটকের কাছাকাছি রয়েছে নিরাপত্তা দপ্তর, ডাকঘর, ব্যাংক, ক্যান্টিন, দরজিখানা, তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ এবং রাষ্ট্রপতির গার্ড রেজিমেন্টের ব্যারাক। রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসিক কোয়ার্টার বঙ্গভবনের পার্শ্ববর্তী তিনটি স্থানে অবস্থিত। এছাড়া রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব ও সহকারি সামরিক সচিবের জন্য পৃথক দুটি বাংলো রয়েছে। বঙ্গভবনে রয়েছে ৪৭ একর জমির এক উন্মুক্ত অঙ্গন। সুত্রঃবাংলাপিডিয়া।

    উইকিপিডিয়ায় নকশাঃবৃটিশ আমলে ঢাকায় স্থাপিত অন্যান্য স্থাপত্যের মতো বঙ্গভবনও অনেকটা ভিক্টোরিয়া স্থাপত্যে নির্মিত। ১৯৬১ এবং ১৯৬৪সংস্কারের পর এখানে ইসলামী স্থাপত্য ও বাঙালি স্থাপত্যের সমন্বয় ঘটানো হয়। চারদিকে লম্বা প্রাচীর ঘেরা মূল ভবন ত্রিতল প্রাসাদোপ্রম চত্ত্বরের চার পাশে সবুজ এবং বৃক্ষরাজি দ্বারা আবৃত। নিচতলার মেঝের চত্বরের ক্ষেত্রফল ৬৭০০ বর্গমিটার। রাষ্ট্রপতির বাসভবন উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত, এর দ্বিতীয় তলায় পাঁচটি সুদৃশ্য শয়ন কক্ষ রয়েছে।

    রাষ্ট্রপতির দপ্তর , সামরিক ও বেসামরিক সচিবালয়, অন্যান্য কর্মকর্তা এবং দর্শকদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কক্ষগুলো নিচতলায় অবস্থিত। এছাড়া এতে এতে রয়েছে আসবাবপত্র রাখার কক্ষ, একটি সম্ভোজন কক্ষ একটি দরবার কক্ষ, একটি ছোট ভোজন কক্ষ এবং স্থানীয় দর্শনার্থীদের জন্য একটি ছোট সভা কক্ষ। এছাড়া দ্বিতীয় তলায় পাচঁটি অফিস কক্ষ, একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ এবং একটি স্টোডিও আছে। তৃতীয় তলায় বৈদেশিক কুটনীতিক এবং সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের জন্য রয়েছে চারটি আলাদা কক্ষসমষ্টি।

    বঙ্গভবনে রয়েছে ৪৭ একরের খোলা জায়গা, এখানে রয়েছে নিরাপত্তা অফিস, ডাকঘর, ব্যাংক, ক্যান্টিন, দর্জীর দোকান, একটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ, রাষ্ট্রপতি নিরাপত্তা রেজিমেন্টের জন্য একটি ব্যারাক রয়েছে, যা বঙ্গভবনের প্রধান ফটকের কাছাকাছি অবস্থিত। বঙ্গভবনের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের জন্য থাকার কোয়ার্টার রয়েছে বঙ্গভবনের আলাদা তিনটি স্থানে। এখানে সামরিক সচিব এবং সহকারী সামরিক সচিবের জন্য রয়েছে আরও দুটো বাংলো।সুত্রঃউইকিপিডিয়া।