প্রিয় নবীর জন্মে সমগ্র মুসলিম জাহানের খুশি উদযাপন

    0
    628

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০২ডিসেম্বরঃ আজ পবিত্র ১২ রবিউল আউয়াল শরিফ।মহান পবিত্র ঈ’দে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম । ঈ’দে মিলাদুন্নবী আরবি তিনটি শব্দের সম্মিলিত রূপ। ঈদ, মিলাদ ও নবী এই তিনটি শব্দ  নিয়ে এটি গঠিত একটি বাক্য। আভিধানিক অর্থে ঈ’দ অর্থ খুশি, মিলাদ অর্থ জন্ম, নবী অর্থ অদৃশের বার্তা বাহক বা ঐশী সংবাদ দাতা। পারিভাষিক অর্থে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর জন্মের আনন্দকে ঈ’দে মিলাদুন্নবী বলা হয়। অন্য কথায়, ঈদে মিলাদুন্নবী হলো, রাহমাতুল্লিল আলামিন হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম  এর পবিত্র ‘বেলাদত শরিফ’ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করা। আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম  এর শুভাগমন স্মরণে খুশি প্রকাশ করে মিলাদ শরিফ মাহফিলের ব্যবস্থা করা, শান-মান, মর্যাদা-মর্তবা আলোচনা করা, কুরআন তেলাওয়াত, দরুদ শরিফ পাঠ, তাওয়াল্লুদ বা জন্মকালীন ঘটনা মজলিস করে আলোচনা করা, দাঁড়িয়ে সালাম, কাসিদা বা প্রশংসামূলক কবিতা, ওয়াজ-নসিহত, দোয়া-মোনাজাত, সম্ভব মতো মেহমান নেওয়াজির সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান করা।

    হাদিস শরিফে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম  এর জন্মকাল* সম্পর্কে জানা যায়। হজরত আবু কাতাদা আল আনসারি (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম  কে সোমবার দিন রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এ দিনে (সোমবারে) আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এ দিনেই আমি নবুয়ত পেয়েছি।’ (মুসলিম)। ঐতিহাসিক মুহাম্মদ বিন ইসহাক (রহ.) এর মতে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম  হাতি সালের (৫৭০ খ্রি.) রবিউল আউয়াল মাসে ১২ তারিখ সোমবার জন্মগ্রহণ করেন। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম  সোমবার রোজা রেখে নিজের জন্মদিন স্মরণ করতেন। এর দ্বারা ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের গুরুত্ব প্রমাণিত হয়।
    এ মুবারক মাসের ১২ তারিখ উম্মাহর জন্য শ্রেষ্ঠতম দিন। কারণ, এ মুবারক দিনটি যদি আল্লাহ পাকের হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শুভাগমনের অন্তর্ভুক্ত না হতো তাহলে শবে ক্বদর, শবে বরাত, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, জুমা ইত্যাদি ফযীলতপূর্ণ কোন দিন-রাতেরই আগমন ঘটতো না। শুধু তাই নয়, কুরআন শরীফ নাযিল হতো না, দ্বীন ইসলাম আসতো না এবং কোন মমিন-মুসলমানের অস্তিত্বও থাকতো না। এ প্রসঙ্গে স্বয়ং আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআরে ইরশাদ করেন, ‘হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে জানিয়ে দিন, আল্লাহ পাক ফযল-করম হিসেবে তাদেরকে যে দ্বীন ইসলাম দিয়েছেন, কুরআন শরীফ দিয়েছেন এবং রহমত হিসেবে উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দিয়েছেন, সেজন্য তারা যেন খুশী প্রকাশ করে।’ (সূরা ইউনুস-৫৮)
    মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন সূরা কাওছার-এ ইরশাদ করেন, (হে আমার হাবীবসাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম নিশ্চয়ই আমি আপনাকে কাওছার দান করেছি।’ ‘কাওছার’-এর অনেক অর্থ রয়েছে, তার মধ্যে একটি অর্থ হচ্ছে খইরে কাছির অর্থাৎ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম কে আল্লাহ পাক সমস্ত ভাল উত্তম এবং শ্রেষ্ঠ বিষয় ও জিনিসগুলো দান করেছেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পর্কযুক্ত ও সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয়ই সর্বশ্রেষ্ঠ। তাই মুসলমান সম্প্রদায় দিনটি পবিত্র ঈ’দে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম  হিসেবে পালন করেন ।
    ইবনে কাছির তাফসীর গ্রন্থের মিলাদে মোস্তফা অধ্যায়ে (পৃ. ২৯/৩০) উল্লেখ করা হয়েছে, নবম হিজরিতে তাবুকের যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম  দেখতে পেলেন, হজরত আব্বাস (রা.) তার হুজরায় মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম  (সম্ভবত) কবিতা আকারে পাঠ করছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম তা দেখে মন্তব্য করেন, ‘তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত অনিবার্য হয়ে গেল।’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর এ মন্তব্য থেকেই বোঝা গেল, ঈ’দে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে আনন্দ ও আলোচনা করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর শাফায়াত পাওয়া যাবে নিশ্চিতভাবে। অন্য কোনো পন্থায় এত সহজে শাফায়াত পাওয়ার পদ্ধতি বিরল।আবু লাহাব ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর প্রকাশ্য ও বড় শত্রু, যার ধ্বংসের কথা আল্লাহ স্বয়ং সূরা লাহাবে বলেছেন। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর জন্মের খবরে খুশি হয়ে আবু লাহাব তার নির্দেশে নিজ দাসীকে মুক্ত করে দিয়েছিল।এ কারণে আবু লাহাবের কবরে প্রতি সোমবার তার নির্দেশ দেয়া আঙুল থেকে প্রবাহিত পানি পানের সুযোগ পায় এবং কবরের আজাব হাল্কা হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম  সমগ্র সৃষ্টির মূল এবং আল্লাহর প্রদত্ত নেয়ামতে আকবর। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সর্বোচ্চ এ নেয়ামতের জন্য খুশি প্রকাশের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, এ নিয়ামতের খুশি সঞ্চিত সকল এবাদত হতে উত্তম। এরপরও গাফেল ইয়াজিদির উত্তরসুরিরা ঈ’দে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম কে বিদায়াত বলে গলাবাজি করে সাধারণ মুসলমানদেরকে নাজাতের বড় ওছিলা থেকে বঞ্চিত করার পাঁয়তারায় লিপ্ত।

    মুসলিম শরীফের ২য় খন্ড হাদীসুল ‘হিজরাত’ অধ্যায়ে হযরত বারবাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুলে পাক (দঃ) যখন মক্কা শরীফ ত্যাগ করত! মদীনা শরীফে দাখিল হলেন, তখন মদীনা শরেিফর নারী-পুরুষ ঘরের ছাদে উঠলেন, কঁচিকাঁচারা ও গোলামগন মদীনার অলিতে গলীতে জুলুছ সহকারে ছড়িয়ে পড়েন, সকলের মুখে তখন এ শ্লোগান উচ্চারিত হচ্ছিল, ইয়া মুহাম্মাদু ইয়ারাছুলাল্লাহ (দঃ)। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হল যে, ছাহাবায়ে কেরামগণও হুজুর (দঃ) এর শুভাগমনে মিছিল সহকারে ইয়া-রাছুলাল্লাহ্ ধ্বনীতে আকাশ  বাতাস মুখরিত করে তুলে ছিলেন।

    এজন্যেই আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অনুসারীগণ প্রতি বছর ১২‘ই রবিউল আউয়াল ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এর অনুসরণ পূর্বক পবিত্র ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (দঃ) এর খুশীতে বিভোর হয়ে মিছিল সহকারে আনন্দ উদ্যাপন করে থাকি এবং ইয়া-রাছুলাল্লাহ, ইয়া-হাবীবাল্লাহ (দঃ) ধ্বনী দিয়ে শুকরিয়া আদায় করি। মহান আল্লাহ তা’য়ালা কোরানে পাকে তাঁর বান্দাহ্গণের প্রতি খুশী উদ্যাপনের নির্দেশ পূর্বক এরশাদ করেছেন, “কুল বিফাদ্লিল্লাহী ওয়া-বিরাহমাতিহী ফাবিজালিকা ফাল ইয়াফরাহু” হে নবী (দঃ) আপনি উম্মতগনকে বলে দিন, আল্লাহর ফজল, দয়া এবং তাঁর রাহমাত/ করুনা প্রাপ্তিতে তারা যেন খুশী উদযাপন করে। প্রিয়নবী (দঃ) যে আল্লাহর ফজল, রাহমাত। উভয়ই,কালামে পাক তার প্রমাণ বহন করছে। যেমন এরশাদ হচ্ছে- “লাক্বাদ মান্নাল্লাহু আলাল মু’মিনিনা ইজ বা’য়াছা ফিহিম রাছুলা” অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক মুমিনদের উপর বড়ই অনুগ্রহ বা দয়া করেছেন যে, তাদের মধ্যে একজন সম্মানীত রাছুল পাঠিয়েছেন। সুতরাং তাঁর (দঃ) আগমনের দিনে ও মাসে শরীয়ত সমর্থিত রীতি অনুযায়ী জশনে জুলুছে ঈদ-এ মিলাদুন্নবী  (দঃ) উদযাপন করা কালামে পাকের নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত বিধায়, নিঃসন্দেহে এ জাতীয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান জায়েজ।
    দেওবন্দি মৌলানা হোছাইন আহমদ মদনী ছাহেব বলেছেন যে, খবীছ ওয়াহাবীর দল রাসুলে পাক (দঃ) ‘র জন্মের মূল আলোচনা করাটাই বিদাত ও খারাপ বলে, যেমন (খবীছ ওয়াহাবীগণ) তারা নবীজির শরীয়াতের বিদ্যা ছাড়া আর কোন বিদ্যা নেই বলে এবং
    নবীজিকে যে কোন ভাবে ইয়া-রাছুলাল্লাহ বলে সম্বোধন করাকে শিরীক ও রাসুলের রওজা পাকে জিয়ারতের নিয়্যতে ভ্রমণ (ছফর) করাকে হারাম বলে, নবী ও আউলিয়ায়ে কেরামের ওছিলা নিয়ে আল্লাহর নিকট কিছু চাওয়াও শিরীক বলে এবং নবীগণ ইন্তেকালের পর অন্যান্য সাধারণ মানুষের মত হয়ে যান বলে ধারণা রাখে।
    ওয়াহাবীরা নিজেদের দলের মানুষ ব্যতিত অন্য সবাইকে কাফের বলে। মুসলমানগণকে হত্যা করা, তাদের মাল লুট করা, বাড়ীতে আগুন দেয়া, তাদের মাহফিলে গোলযোগ সৃষ্টি করা ইত্যাদি ওয়াজিব মনে করে। (আশহাবুচ্ছাকিব কিতাবের ৪৩-৬৭ পৃষ্ঠা)। মৌঃ রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী লিখছেন যে, মিলাদ মাহফিল করা যদিও কোন শরীয়াত বিরোধী কাজ নয় কিন্তু এতে তৎপর হয়ে ডাকা ডাকির কারণে এ যুগে মিলাদ মাহফিল জায়েজ নয়, ওরছ মাহফিল এমনি ভাবে না জায়েজ। অনেক দিন আগে মোবাহ ছিল, আবার কোন সময় নিষেদ হয়ে গেছে। ওরছ মিলাদ মাহ্ফিল ও এখন নাজায়েজ হয়ে গেছে। (ফতুয়ায়ে রশিদিয়ার ৪১১ পৃষ্ঠা)। মৌঃ রশিদ আহমদ সহ দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হতে প্রায় বড় আলেমদের পীর, হাজী ইমদাদুল্লাহ মোহাজিরে মক্কী (রহঃ) তাঁর পুস্তিকা (যা মৌঃ থানবীর হাতে লিখা) ফয়ছলায়ে হাক্বত মাছায়েল তৃতীয় পৃষ্ঠায় মিলাদ ও কিয়ামের যে মীমাংশা তিনি দিয়েছেন,তার সারাংশ পাঠক বৃন্দের অনুধাবনের জন্য তুলে ধরা হল। মিলাদ ও কেয়াব মুস্তাহাব ও মুস্তাহছান এবং ইহ ও পরলৌকিক কল্যাণ ও সমৃদ্ধির জন্য এটি পাথেয়। কিন্তু মিলাদ মাহফিলে কেয়াম করাকে ফরজ ওয়াজিব মনে করা যেমন বিদআত, আবার হারাম ও নিষিদ্ধ বলে বিশ্বাস করাটাও বিদআত। আমার নীতি এই যে, আমি মিলাদের মাহফিলে অংশ গ্রহণ করি।

    বরং বরকত ও অনুগ্রহের বাহন মনে করি এবং প্রতি বৎসর মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করি, কিয়াম করতে আনন্দ পাই। তাই যে সব ভাইয়েরা নিজেকে দেওবন্দি বলে দাবি করেন তারা যেন হাজী ইমদাদুল্লাহ্ মোহাজিরে মক্কী (রহঃ) এর অনুসরণপূর্বক নিজেকে সুন্নী মুসলমান হিসেবে গড়ে তুলেন।

    ফেরেস্তাগণের কিয়াম রাত দিন ২৪ ঘন্টাঃ আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ৭০ হাজার রহমতের ফিরিস্তা সর্বদা প্রিয়নবীজির রওজা মোবারকে দাঁড়িয়ে দুরূদ শরীফ এবং সালাম পেশ করে যাচ্ছেন। অথচ আমরা ফিরিস্তাদের অনুকরণে ১০/১৫ মিনিট দন্ডায়মান অবস্থায় দুরূদ সালাম পেশ করলে, বিদ্আত হয়ে যায় বলে এক শ্রেণীর তথাকথিত আলিমরা ফতোয়া দেয়।

    উল্লেখ্য যে, ফিরিস্তারাও কি তাহলে বিদ্আতে লিপ্ত! (নাউজুবিল্লাহ)।

    নিম্নে ফেরেস্তাদের জুলুস ও সালাতু সালামের প্রমাণ দেয়া হল। হযরত নোবাইহাতা ইবনে ওহাব (রহঃ) তাবেয়ী হতে বর্ণিত, একদিন হযরত কা’ব আহবার (তাবেয়ী) হযরত উম্মুল মো’মেনীন আয়েশা (রাঃ) এর খেদমতে উপনীত হলেন। অতঃপর ছাহাবায়ে কিরাম তথায় নবী (দঃ) এর শাসনামলের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে লাগলেন, হযরত কা’ব বললেন।

    এমন কোন দিন উদয় হয়না, যে দিন ৭০ হাজার ফিরিস্তা নাজিল হয়ে রাসুলুল্লাহ (দঃ) রওজা মোবারক বেষ্টনে তাঁদের নূরের পাখা বিস্তার না করে সন্ধ্যাা পর্যন্ত নবী করিম (দঃ) এর উপর দুরুদ ও সালাম পাঠ করেন না, অতঃপর যখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে, তখন তাঁরা আকাশে উঠে যান এবং তাঁদের অনুরূপ সংখ্যায় (৭০হাজার) ফিরিস্তা অবতরণ করে তাঁদের মতই দুরুদ ও সালাম পাঠ করতে থাকেন। আবার কেয়ামতের দিন যখন জমিন (রওজা মোবারক) বিদীর্ণ হয়ে যাবে, তখন তিনি ৭০ হাজার ফিরিস্তা দ্বারা বেষ্টিত হয়ে প্রেমাসম্পদের রূপ ধারণ করে আসল মাকছাদ্ প্রেমিকের সাথে শীঘ্রই মিলিত হবেন (দারমী ও মিশকাত বাবুল কারামত হাশিয়াসহ)।

    উপরে উল্লেখিত হাদীসে নিম্নে বিষয় গুলো খুবই প্রনিধান যোগ্যঃ

    (১) কা’ব আহবার রওজা মোবারকে ৭০ হাজার ফিরিস্তা নাজিল হতে নিজে প্রত্যক্ষ করেছেন, এটি তার কারামতের প্রমাণ  (লোময়া’ ৩)।

    (২) হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) এর উপস্থিতিতে কা’ব এ সাক্ষ্য দিয়েছেন।

    (৩) রওজা মোবারকে দিনে ৭০ হাজার, ফিরিস্তা দুরুদ, সালাত, সালাম পাঠ করার প্রেক্ষিতে মুসলমানগণও ফিরিস্তাদের অনুকরণে কেয়াম সহকারে দুরুদ ও সালাম পড়ে থাকেন। (আনওয়ারে আকতাবে সাদাকাত)।

    (৪) রওজা মোবারকে পালাক্রমে দিন-রাত ২৪ ঘন্টা মিলাদ ও কিয়াম হয়।

    (৫) নবী করিম (দঃ) কে সম্মান প্রদর্শনার্থে দাঁড়ানোর জন্য চোখের সামনে উপস্থিত থাকা শর্ত নহে। কেননা ফেরেস্তাদের চোখের সামনে শুধু রওজা মোবারক পরিদৃষ্ট ছিল।

    (৬) কিয়ামত দিবস পর্যন্ত কেয়াম সহ দুরুদ সালামের এই ধারা অব্যাহত থাকবে, দুশমনে নবী দুশমনে মিলাদ তা বন্ধ করতে
    পারবে না।

    (৭) রোজ হাসরে ৭০ হাজার ফিরিস্তা হুজুর (দঃ) কে পরিবেষ্টন করে জুলুস সহকারে খোদার দরবারে নিয়ে যাবেন, নবীজির জুলুস করা ফিরিস্তাগণেরই সুন্নত।

    ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (দঃ) সম্পর্কে ইসলাম জাহানের চার খলিফার মতামতঃমুসলিম বিশ্বের প্রথম খলিফা হযরত আবু বক্কর ছিদ্দিক (রাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি হুজুর (দঃ) এর মিলাদ শরীফে ব্যয় করবে, কিয়ামত দিবসে সে বেহেস্তে আমার সাথী হবে। (আন-নে মাতুল কুবরা)। মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি হুজুর পাক (দঃ) এর মিলাদুন্নবী (দঃ) কে উচ্চ মর্যাদা দান করেছে, সে যেন ইসলামকে পূণজীবিত করল (আন-নে মাতুল কুবরা)। মুসলিম বিশ্বের তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমান গণি (রাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী (দঃ) উদ্যাপনে একটি মাত্র দিরহাম ব্যয় করল সে যেন বদর- হুনাইনের মত মহান যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করল। ( আন-নে মাতুল কুবরা)।

    মুসলিম বিশ্বের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী মুরতাজা (রাঃ) বলেন, “য ব্যক্তি মিলাদুন্নবী (দঃ) উদ্যাপনকারী ইমানের সহিত মৃত্যুবরণ করবে এবং কোন প্রকার জিজ্ঞাসাবাদ ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করবে। ( আন-নে মাতুল কুবরা)।  হযরত জুনাইদ বোগদাদী (রাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী (দঃ) কে সম্মান করল,সে যেস স্বীয় ইমানকে সজীব করল। (আন-নে মাতুল কুবরা)। হযরত ইমাম শাফী (রাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী (দঃ) উদ্যাপন করবে, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ পাক তাকে ছিদ্দীকীন, ছালেহীন এবং শহীদদের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (আন-নে মাতুল কুবরা)।

    তাহকীকুল হক ২৬ পৃষ্ঠায়  আছে, ১৩০৯ হিজরী সনে মাওঃ আশরাফ আলী থানবীকে কানপুর মাদ্রাসার দস্তার বন্দী বিশাল জনসভায় প্রশ্ন করা হয়েছিল, যে ব্যক্তি মিলাদ শরীফকে কানাইয়ার জন্মের সাথে তুলনা করে তার জন্য শরীয়তের হুকম কি? থানবী ছাহেব ফতওয়া দিলেন যে, এমন কথায় নবী (দঃ) সম্মান খাটো করা হয় বলে তুলনাকারী ব্যক্তি ইমাম ও পীর/মুর্শিদ হবার উপযুক্ত নয়। এ ফতওয়ার মধ্যে অনেক আলেমের দস্তখত আছে (১৭ই শবান ১৩০৯ হিজরীতে নিজামী ছাপা খানা থেকে প্রকাশিত)। তাহকীকুল হক ২৬ পৃষ্ঠা ও আকতাবে ছাদাকাত ৩২৩ পৃষ্ঠায় প্রিয় নবীজীর মিলাদ শরীফ সম্পর্কে এমন কটুক্তি করাকে কুফরী বলেও মত দেয়া হয়েছে।

    আল্লামা হাজী ছানাউল্লাহ পানিপথী তার বহুল প্রচারিত “মালাবন্দা মিনহু” কিতাবে লিখেছেন যে, নবী (দঃ) এর একখানা চুল মোবারকে কেউ যদি ব্যঙ্গ করে সে কাফের হয়ে যাবে। সাবধান!! শুধু ইলম আমল ও তাকওয়া এবং টুপি, দাড়ী, পাগড়ী দ্বারা ইমানদার হওয়া যায়না। নবীজির সত্ত্বা গুন ও আদর্শকে সেচ্চায় ভক্তি শ্রদ্ধা সহকারে প্রাণ পণে বিশ্বাস করলেই ইমানদার হওয়া যায়।নবীজির ভালোবাসাতে আল্লাহ পাওয়া যায়। তাঁর ভালবাসাতে জান্নাত পাওয়া যায়।

    প্রচলিত নিয়মানুযায়ী জশ্নে জুলুছে ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (দঃ) উদ্যাপন করা বেদয়াত হতে পারে না। প্রিয় নবী (দঃ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোন উত্তম নিয়মপদ্ধতি বের করে, তার আমল নামায় উহার ছোয়াব লিখা হবে।অতঃপর উহার অনুসরণে যারা ঐ আমল করবে তারা যে পরিমাণ ছোয়াব এর অধিকারী হবে, তদ সমুদয় তাঁর আমল নাময় লিখা হবে। অথচ অনুসরণকারীর ছোয়াবের কোন কমতি হবে না।

    মোদ্দা কথা হলো এই যে, ইসলামে যে, প্রথা/রীতি কোরআন ছুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াসের পরিপন্থী হবে না, ইহা নিন্দীর/ বর্জনীয় বিদয়াত/ বিদয়াতে ছাইয়্যা হতে পারে না (মিরকাত শরহে মিশকাত, তাবকাতে কোবরা)।

    তাই আসুন, মুসলিম মিল্লাতের এই নাজুক পরিস্থিতে প্রিয় নবী (দঃ) এর অনুপম আদর্শ সমাজের সকল ক্ষেত্র ব্যাপী বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধ হই এবং পবিত্র জশ্নে জুলুছে ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (দঃ) বাস্তবায়ন করি।

    ঈ’দে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম  উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট আলহাজ্জ মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।এসব বাণীতে তাঁরা দেশবাসীসহ মুসলিম উম্মাহর সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।একই সঙ্গে তাঁরা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর জীবনাদর্শ (সুন্নাহ) অনুসরণ করে ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবকল্যাণে ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানান।
    যথাযথ মর্যাদায় ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পবিত্র ঈ’দে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম পালনের জন্য মাস ব্যাপী ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ, বিভিন্ন দরবার খানকাহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর ওপর আলোচনা, মিলাদ সালাত ও সালাম,মিছিল বা জুলুস,দোয়া। আজ সিরাজনগর দরবার শরিফসহ স্থানীয় বিভিন্ন দরবার শরিফের উদ্যোগে জশনে জুলুস বের হবে।