প্রবাসে আলোকিত নারী-পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. নার্গিস বানু

    0
    272
    “বিশ্বের যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর” প্রাচীনকাল থেকেই সভ্যতা বিকাশে নারীর ভূমিকা অপরিসীম। নারী কখনো নদী, কখনো প্রকৃতি, কখনো কোমলতার প্রতীক, কখনো সৌন্দর্যের। সমাজের উন্নয়নে নারীরা বিভিন্নভাবে অবদান রেখে যাচ্ছেন।
    সমাজ-সভ্যতাকে গতিশীল করে তুলতে যুগে যুগে নারী পালন করে চলেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। স্বপ্ন আর কাজের মাধ্যমেই তৈরি হয় মেধা। ধৈর্য, ইচ্ছা আর কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তৈরি হয় যোগ্যতা। সেই যোগ্যতাই জীবনের পরিবর্তন ঘটায়। জীবনকে আলোকিত করে। এ সত্য জানান অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশী পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. নার্গিস বানু । যেখানে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়, সেখানেই নারীর জীবন হয় সার্থক। এ সত্যকে সামনে রেখেই এই পরিবেশ বিজ্ঞানী কাজ করে যাচ্ছেন। এগার ভাইবোনের মধ্যে ষষ্ঠ ড. নার্গিস বানু কুমিল্লা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। কুমিল্লা জেলায় শিক্ষকতা  করার কারনে পড়াশোনা শুরুটা কুমিল্লা জেলায়ই। ড. নার্গিস বানু বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি কৃষি এবং এমএসসি কৃষিতে কৃতিত্বের সাথে অর্জন করে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার হিসেবে প্রথম কাজ শুরু করেন।পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি খেলাধূলা এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহন করেন।  ফলে ড. নার্গিস বানু ১৯৯২-১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে নির্বাচিত হন এবং খেলাধুলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে প্রতিনিধিত্ব করেন।
    পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. নার্গিস বানু ১৯৯৪ সালে মাইগ্রেসন নিয়ে  অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য চলে  আসেন।
    কিন্তু তার পথচলা একানেই শেষ হয়ে যায়নি। অস্ট্রেলিয়াতে এসে ড. নার্গিস বানু নিউ সাউথ ওয়েলস ইউনিভার্সিটি থেকে এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন এবং ফের কর্মজীবন প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে তিনি সিডনী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অস্ট্রেলিয়ান সরকারের বৃত্তি (APA) নিয়ে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। ড. নার্গিস বানু এনএসডব্লিউ ভূমি ও পানি সংরক্ষণ অধিদপ্তরে শুরু করেন। পরে ইপিএ (EPA) তে কাজ করেন। তিনি  রিসার্চ এসোসিয়েট ও অস্থায়ী একাডমিক হিসাবে সিডনী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। ড. বানু রোডস এবং ট্রাফিক অথরিটি, এনার্জি অষ্ট্রেলিয়া, অষ্ট্রেলিয়ান রেল ট্রেক কর্পোরেশনে কর্মরত ছিলেন। গত এক যুগের বেশি সময় ধরে তিনি সিডনী ওয়াটার কর্পোরেশনের কাজ করছেন।
    প্রফেশনাল কাজের পাশাপাশি ড. নার্গিস বানু বিভিন্ন  সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৯৫ সাল থেকেই বাংলাদেশ কমিউনিটি লেংগুইজ স্কুলে শিক্ষাদান শুরু করেন এবং ২০০২ সাল পর্যন্ত শিক্ষক ছিলেন। পাশাপাশি  তিনি বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচন পরিচালনাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেন এবং পরবর্তীতে এসোসিয়েশনের পরিচালনা কমিটির দায়িত্ব পালন করেন।
    ২০০৪ সাল থেকে ড. নার্গিস বানু রেডিও 99.9 এফ এম থেকে  “দ্য ভয়েস অব বাংলাদেশ” নামে একটি কমিউনিটি রেডিও প্রোগ্রাম হোস্টিং শুরু করেন যেখানে তিনি সমসাময়িক বিষয়াদির পাশাপাশি মানবিক অধিকার, বহুসংস্কৃতিবাদ এবং নাগরিক সেটিলমেন্টসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিষয়গুলির সচেতনতা বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি সেই রেডিও স্টেশন পরিচালনা কমিটির একজন বোর্ড সদস্য।
    ড. নার্গিস বানু ২০০৮-২০০৯ সালে মানবাধিকার সংস্থার “ফোকাস্ বাংলাদেশ” এর সভাপতি দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০০৯ সালে ‘কমিউনিটি 2770’ এর আবাসিক প্রতিনিধি নিযুক্ত হন। তার সকল সামাজিক কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৯ সালে তিনি ব্ল্যাকটন কাউন্সিল কতৃক ‘বর্ষসেরা আন্তর্জাতিক নারী পুরস্কার’  (International Woman of the Year) ভূষিত হন। ২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়া সংসদে ফেডারেল এমপি এড হিউসিক (Ed Husic MP) অষ্ট্ৰেলিয়ার জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ে আলোচনাকালে কমিউনিটিতে ড. নার্গিস বানুর অবদানের কথা উল্লেখ করেন এবং তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
    ২০১৩ সালে  Western Sydney University ড. নার্গিস বানু কে Woman of the West Award জন্য মনোনিত করে এবং ২০১৪ সালে মেরী মেক্লওয়েড এয়োর্ডে মনোনয়ন পান। ২০১৫ সালে তিনি Rtv অস্ট্রেলিয়া প্রদত্ত “আলোকিত নারী” পদকে ভূষিত হন। তাছাড়াও কমিউনিটির বিভিন্ন সংস্থা থেকেও তিনি বিভিন্ন পদক পাপ্ত হয়েছেন। ড. বানু NSW Justice of the Peace হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কমিউনিটি সাংবাদিক হিসেবেও ড. নার্গিস বানুর রয়েছে বিশেষ খ্যাতি যা তিনি কৃতিত্বের সাথে করে যাচ্ছেন। তাছাড়া সময় পেলে  ড. বানু লেখালিখি করেন এবং উনার লেখা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। একুশে, এটিএন ও চ্যানেল আই টিভির টকশোতে অংশগ্রহণ করেছেন।
    কঠোর অধ্যবসায়, দৃঢ় প্রত্যয়ী মন, মেধা, একাগ্রতা ও সৃজনশীল কর্মকাণ্ড ভরে রেখেছে ড. নার্গিস বানু জীবন। তিনি  পারিবারিক জীবনে এক মেয়ের গর্বিত মা। এভাবেই একজন ড. নার্গিস বানু, একজন নারী হয়ে উঠেছেন প্রবাসের তথা অষ্ট্ৰেলিয়ার সাফল্যের প্রতীক। স্বদেশিদের কাছে অনুকরণের শ্রদ্ধার প্রিয় নারী। তাই শেষে কবির ভাষায় বলতে হয় “কোনকালে একা হয়নিকো জয়ী, পূরুষের তরবারী; প্রেরনা দিয়েছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়ালক্ষী নারী ”