প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা বিএনপি ও জাতীয় পার্টির

    0
    221
    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৮নভেম্বরঃ ‘জিয়াউর রহমান ও এরশাদের ক্ষমতা দখল সম্পূর্ণ অবৈধ’ বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন তার কড়া সমালোচনা করেছেন বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতারা।

    গণভবনে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘হাইকোর্টের স্পষ্ট রায় আছে, জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল সম্পূর্ণ অবৈধ। এরশাদের ক্ষমতা দখল অবৈধ। তাই পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী বাতিল ঘোষিত হয়েছে। কাজেই সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ বা জিয়াউর রহমান, কেউ কিন্তু আর রাষ্ট্রপতি নন। কারণ তারা অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী।’

    প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল তার নিজ ফেস বুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘জিয়াউর রহমান বৈধ প্রেসিডেন্ট না হলে বাংলাদেশে বর্তমান রাজনীতি, সংসদ, সংবিধান, অসামরিক শাসন, রাজনৈতিক দল কোনো কিছুরই বৈধতা ও ধারাবাহিকতা থাকে না। বৈধতা থাকে না আওয়ামী লীগেরও।’

    শুক্রবার রাত ১১টার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মারুফ কামাল এ স্ট্যাটাস দেন। মারুফ কামাল তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সব অমর কীর্তি এবং ঐতিহাসিক পদক্ষেপের কথা বাদ দিলেও তিনি আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গঠনের অনুমতি দিয়েছিলেন। তাঁর ওপর যখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার অর্পিত হয় এর আগে থেকেই দেশে সামরিক শাসন বলবৎ এবং সংবিধান স্থগিত ছিল। তিনি সামরিক শাসন প্রত্যাহার এবং সংবিধান পুনঃপ্রবর্তন করেন। শহীদ জিয়া দায়িত্ব গ্রহণের আগেই দেশে কোনো রাজনৈতিক দল ও রাজনীতি ছিল না। একদলীয় বাকশাল পদ্ধতি প্রবর্তনের সময় বাদবাকি সব দল নিষিদ্ধ হয়েছিল। খন্দকার মুশতাক আহমদ বাকশালও বিলুপ্ত করায় কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না। সামরিক আইনের আওতায় রাজনৈতিক তৎপরতাও নিষিদ্ধ ছিল। জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে পলিটিক্যাল পার্টি রেগুলেশন (পিপিআর) জারি করেন এবং এর আওতায় আওয়ামী লীগসহ সকল রাজনৈতিক দল গঠনের ব্যবস্থা করেন।

    তিনি রাজনৈতিক তৎপরতা চালু করেন। নির্বাচন আয়োজন করেন। বহুদলীয় গণতন্ত্র ও সংবিধান পুনঃপ্রবর্তন করেন। জিয়াউর রহমান বৈধ প্রেসিডেন্ট না হলে বাংলাদেশে বর্তমান রাজনীতি, সংসদ, সংবিধান, অসামরিক শাসন, রাজনৈতিক দল কোনো কিছুরই বৈধতা ও ধারাবাহিকতা থাকে না। বৈধতা থাকে না আওয়ামী লীগেরও।”

    মারুফ খান কামাল আরও লিখেন, “বাকশাল গঠনের পটভূমিতে উচ্চ আদালতকেও নির্বাহী বিভাগ ও রাষ্ট্রপতির অধীনস্ত করা হয়েছিল। শহীদ জিয়া বিচার বিভাগের স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতাও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। না হলে স্বাধীনভাবে কোনো রায় দেয়ার সুযোগ বিচার বিভাগের হতো না। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাও শহীদ জিয়া ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। সরকার নিয়ন্ত্রিত চারটি বাদে সব সংবাদপত্র নিষিদ্ধ হয়েছিল বাকশালী ব্যবস্থায়।”

    স্ট্যাটাসে আরও লেখা হয়, “১৯৭৮ সালে যে নির্বাচনে জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তাতে আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। তারা গণতান্ত্রিক ঐক্যজোট(গজ) নামে সম্মিলিত বিরোধী মোর্চা গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল মহম্মদ আতাউল গণী ওসমানীর মতো হেভিওয়েট প্রার্থী দাঁড় করায় জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে। জিয়াউর রহমান বিপুল ভোটের ব্যবধানে জিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। কোর্ট শাসনতন্ত্রের ৫ম সংশোধনীর কিছু ধারা বাতিল করেছে বলে জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রপরিচালনার অধ্যায় ‘নাই’ কিংবা অবৈধ হয়ে যায় না। কেননা ঐ সকল পদক্ষেপের সুফল জাতি ধারাবাহিকভাবে ভোগ করে চলেছে। আর ঐ সংশোধনীর অনেক কিছুকেই আবার বৈধতা ও ধারাবাহিকতা দেয়া হয়েছে একই রায়ে। বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ চিফ জাস্টিসের সভাপতিত্বে একটি ফুলকোর্ট জাজমেন্টে একজনকে ‘রং হেডেড’ আখ্যা দিয়েছিলেন। তাঁকে যদি ঐ বিশেষণ জুড়ে না ডাকা হয়, তাহলেও কি আদালত অবমাননা হবে?”

    এদিকে, এরশাদকে ‘অবৈধ রাষ্ট্রপতি’ বলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বিগত মহাজোট সরকারের সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের।

    তিনি বলেন, “আইনগতভাবেই এরশাদ সাহেব সাবেক বৈধ রাষ্ট্রপতি, অবৈধ বলার সুযোগ নেই। আদালত তো একটা সুনির্দিষ্ট সময়কালকে অবৈধ বলেছেন। আর আদালত যে সময়কে অবৈধ বলেছেন, সেই ১৯৮২ সালে এই শেখ হাসিনা এরশাদ সাহেবের ক্ষমতা গ্রহণকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। এই বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর দ্বৈতনীতি। যখন সুবিধা তখন ভালো বলেন, অন্য সময় খারাপ বলেন। এই দ্বৈতনীতিকে আমরা খারাপ মনে করি।”

    সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “উনি (প্রধানমন্ত্রী) যখন এরশাদ সাহেবকে স্বাগত জানিয়েছিলেন, তখন অবৈধ সরকারকে কীভাবে স্বাগত জানিয়েছিলেন? এটা তো নীতিগতভাবে অবৈধ। আর আইনগতভাবেও মনে হয় অবৈধ। এটা জানার পর অবৈধ সরকারকে স্বাগত জানানো মানে অবৈধ সরকারের সহযোগী হওয়া। এটা তো আইনগতভাবে অবৈধ। তাহলে তারা অবৈধ কাজের সহযোগী ছিলেন।”

    জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘উনি (প্রধানমন্ত্রী) কী কারণে এ কথা বলেছেন তা জানি না। ১৯৮৬ সালের ১০ অক্টোবরের নির্বাচনের পর থেকে আদালতের রায় অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামল বৈধ। এর পর জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগই অংশ নিয়েছে। সেই নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এমপি নির্বাচিত ও বিরোধীদলীয় নেত্রী হয়েছিলেন। উনার (প্রধানমন্ত্রী) কাছে আমার প্রশ্ন, অবৈধ রাষ্ট্রপতির অধীনে উনি কীভাবে বৈধ বিরোধীদলীয় নেতা হয়েছিলেন?’

    এছাড়া, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এস এম ফয়সল চিশতী ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ঠিক নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন।সুত্রঃইরনা