প্রধানমন্ত্রীকে মিয়ানমারে লাল গালিচা সংবর্ধনা

    0
    215

    আমারসিলেট24ডটকম,০৩মার্চঃ মিয়ানমারে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক জোট বিমসটেকের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি মিয়ানমার সফরে গেছেন। আজ সোমবার সকাল সোয়া ১০টায় প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে পৌঁছালে ওই দেশে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী আই মিন্ট ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত অনুপ কুমার চাকমা তাকে স্বাগত জানান। বিমানবন্দরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। সেখান থেকে মোটর শোভাযাত্রা করে শেখ হাসিনাকে রয়্যাল নেপিডো হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ২ দিনের মিয়ানমার সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সফরসঙ্গীরা ওই হোটেলেই থাকবেন।

    অপরদিকে বিমানবন্দর থেকে হোটেলের পথে রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে দুহাতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পতাকা নেড়ে প্রধানমন্ত্রীকে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিহিত মিয়ানমারের শিশুরা স্বাগত জানায়। গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এটাই প্রথম বিদেশ সফর। এই সফরে তিনি বাংলাদেশের ৩২ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সফরের প্রথম দিনই প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচির সাথে প্রথমবারের মতো বৈঠকে বসবেন। আজ সকাল ৮টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোর উদ্দেশে রওনা হন। মন্ত্রী পরিষদের সদস্য ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে এসময় প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান। অন্যদিকে বিমসটেক সম্মেলনের আগেই আজ সোমবার দুপুরে নেপিডোর প্রেসিডেন্ট প্যালেসে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাতের কথা রয়েছে। এরপর প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের পার্লামেন্ট পরিদর্শনে যাবেন এবং স্পিকার শুয়ে মানের সাথে বৈঠক করবেন। বিকালে পার্লামেন্ট ভবনেই মিয়ানমারের বিরোধী দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান ও শান্তিতে নোবল জয়ী অং সান সুচির সাথে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর রাতে নেপিডোর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের দেয়া নৈশভোজে প্রধানমন্ত্রী যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমার সফরের দ্বিতীয় দিন আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে নেপিডোর বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকনোমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক) সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দেবেন। দুপুরে উপস্থিত থাকবেন সরকার প্রধানদের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে। ১৯৯৭ সালে গঠিত বিমসটেকের প্রথম শীর্ষ সম্মেলন ২০০৪ সালে ব্যাংককে এবং ২০০৮ সালে নয়াদিল্লিতে দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, নেপাল ও ভুটান এ জোটের সদস্য। এ অঞ্চলের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, জ্বালানি, পরিবহন ও যোগাযোগ, পর্যটন, কৃষি, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, আন্তঃযোগাযোগ, সন্ত্রাস ও আন্তঃদেশীয় অপরাধ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কাজ করবে বিমসটেক। সংস্থার শীর্ষ সম্মেলনে সদস্য দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা গত শীর্ষ সম্মেলনের পর অর্জিত অগ্রগতি পর্যালোচনা করবেন। তারা সংস্থার যৌথ অঙ্গীকারের বিভিন্ন কি নিয়ে মতবিনিময় এবং ভবিষ্যৎ করণীয়ও নির্ধারণ করবেন। শীর্ষ সম্মেলন শেষে ইশতেহার অনুমোদনের পাশাপাশি ৩টি বিষয়ে চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় সংস্থার স্থায়ী সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, ভারতে আবহাওয়অ ও জলবায়ু বিষয়ক সেন্টার প্রতিষ্ঠা এবং ভুটানে কালচারাল ইন্ডাস্ট্রিজ কমিশন ও কালচারাল ইন্ডাস্ট্রিজ অবজারভেটরি প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই। ঢাকায় সংস্থার স্থায়ী সচিবালয়ের জন্য ইতিমধ্যে জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেয়ার পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর সরকার প্রধানদের সাথে দ্বিপক্ষীয বৈঠকেও অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। নিকট প্রতিবেশী দেশ হওয়া সত্ত্বেও মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ইস্যুতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে টানাপোড়েন রয়েছে। দুদেশের মধ্যে বাণিজ্যও বছরে মাত্র ১০ কোটি ডলারের। বাংলাদেশ মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে জাতিগত দাঙ্গার মধ্যে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে আসছে। নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা হাজারের কোটায় থাকলেও অবৈধভাবে বিপুলসংখ্য রোহিঙ্গা এদেশে বসবাস করছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে বলা হয়। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা মিয়ানমারের ২ দিনের সফর শেষে আগামীকাল মঙ্গলবার রাতেই দেশের পথে ফিরতি যাত্রা করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার বোন শেখ রেহেনার ছেলে রেদওয়ান সিদ্দিকী ববি ও তার পরিবার, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন ও বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল প্রধানমন্ত্রীর সাথে এই সফরে রয়েছেন।