পৌর নির্বাচনঃপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা ইসির

    0
    214

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২১ডিসেম্বর: পৌর নির্বাচনে আচরণবিধি লংঘনের দায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবার সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আচরণবিধি লংঘনের দায়ে যে কারোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা ইসি’র থাকলেও তা ব্যবহার না করে কেন সরকারের সহায়তা চাচ্ছেন, তার কোনো ব্যাখ্যা দেননি নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তারা। বরং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নির্বাচনে আচরণবিধি লংঘন করলে ইসি বিব্রতবোধ করে বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ।

    রোববার কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মো. শাহনেওয়াজ বলেন, ‘যারা সরকারে আছেন, তারা অন্যদের চেয়ে বেশি দায়িত্বশীল আচরণ করবেন, এটা আমাদের প্রত্যাশা। যারা সরকারি সুবিধা ভোগ করছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ, তারা যেন কমিশনকে সহযোগিতা করেন। কারণ, এই নির্বাচনের সঙ্গে সরকারের ভাবমূর্তির প্রশ্ন জড়িত। তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, আপনারা এমন কোনো আচরণ করবেন না, যাতে কমিশনকে অপ্রস্তুত হয়ে পড়তে হয়। তারা যেন কমিশনকে এমন কোনো ব্যবস্থা নিতে বাধ্য না করেন, যাতে তারাও অপ্রস্তুত হন। সরকারপ্রধানের প্রতি অনুরোধ থাকবে, আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি তিনি যেন দেখেন।’

    মন্ত্রী-এমপিদের আচরণবিধি লংঘনের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয় ইসি। এছাড়া আচরণবিধি পালনের বিষয়ে সংসদ সচিবালয়ের সচিবকেও চিঠি দেয় কমিশন। এরপরও বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগ আসতে থাকে ইসিতে। এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে রোববার কমিশন এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করলেন।

    নির্বাচন তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিভিন্ন পৌরসভায় মন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লংঘনের একের পর এক অভিযোগ উঠতে থাকে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সচিত্র সংবাদও প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন পৌরসভা থেকে প্রার্থীরাও কমিশনে অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে ঢাকা-২০ আসনের এমপি এমএ মালেক, নাটোর-২ আসনের এমপি মো. শফিকুল ইসলাম শিমুল ও বরগুনা-২ আসনের এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমনকে কমিশন থেকে শোকজ করা হলে তারা দুঃখ প্রকাশ করেন। দু-একটি পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতে ইসি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের আচরণবিধি লংঘনের বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেয়। কিন্তু রিটার্নিং অফিসার তদন্ত করে বিধি লংঘনের প্রমাণ না পাওয়ায় অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু প্রতিদিনই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় আচরণবিধি লংঘনের সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও কোনো এমপির বিরুদ্ধে আইনগত শাস্তি দেয়ার কোনো উদাহরণ নেই।

    সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মো. শাহনেওয়াজ নির্বাচন কমিশন নিয়ে অযথা দোষারোপ না করতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছি। বিভিন্ন সময় নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখনও করছি। এরপরও কোনো দল অভিযোগ করলে, এটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।

    তিনি বলেন, আমাদের দেশে একটা নিয়ম হয়ে গেছে, যারা চাপ সৃষ্টি করতে চায়, তারা অযথাভাবে নির্বাচন কমিশনকে দোষারোপ করার চেষ্টা করে। তারা মনে করে নির্বাচন কমিশন চাপে পড়বে। আমরা বলতে চাই, আমরা কোনো ধরনের চাপ সহ্য করব না। আমরা আমাদের মতোই চলব। বিএনপির পক্ষ থেকে শনিবারও অভিযোগ করা হয়েছে- ইসি পক্ষপাতিত্ব ভূমিকা পালন করছে, পৌর ভোটে নির্বাচন কমিশন ও সরকার ‘পার্টনারশিপ’ হয়ে কাজ করছে। এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে রোববার এ নির্বাচন কমিশনার এমন বক্তব্য দেন।

    আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির বিষয়ে মো. শাহনেওয়াজ জানান, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেছে এমন কোনো কারণ হয়নি। রিটার্নিং কর্মকর্তা যেখানে অনিয়ম দেখেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি বলেন, কিছু কিছু লোক আচরণবিধি লংঘনের চেষ্টা করছে, আগে সেগুলো লক্ষ্য করা হয়নি; এখন অভিজ্ঞতা ও পরিবেশের কারণেই হোক শক্ত ব্যবস্থা নিতে পিছপা হব না। নির্বাচন কর্মকর্তাদের সতর্ক করে তিনি বলেন, যারা আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন না, তাদের বিরুদ্ধে আমরাই ব্যবস্থা নেব।

    রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে পূর্ণ সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, আমরা তাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আপনারা অভিযুক্তদের ব্যবস্থা নিলে আমরা পূর্ণ সহযোগিতা করব। তবে ব্যবস্থা নিতেই হবে। কেউ না নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আচরণবিধি প্রতিপালনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কোনো গাফিলতি রয়েছে কিনা জানতে চাইলে এ কমিশনার জানান, আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগ যে পরিমাণ পাওয়ার কথা, সে পরিমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য আইন-শৃংখলা সমন্বয় বৈঠকে বিষয়গুলো বলা হয়েছে। কেউ আচরণবিধি লংঘনের বিষয়টি এড়িয়ে গেলে সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি, সামনেও নেয়া হবে।

    ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপে পুলিশের প্রস্তাবের দ্বিমত পোষণ করেছে নির্বাচন কমিশন। তিনি বলেন, পৌর নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রে কার্ডধারী সাংবাদিকরা আগের মতোই প্রবেশ করতে পারবেন, কেউ তাদের বাধা দেবে না।ইরনা