পাকিস্তানের প্রস্তাবের সূত্র ধরে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের আশঙ্কা

    0
    223

    “গত শনিবার পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলি খান বলেন, বাংলাদেশ হওয়ার আগ পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের একজন অকুণ্ঠ সমর্থক ছিলেন কাদের মোল্লা। এ কারণে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে”

    আমারসিলেট24ডটকম,১ডিসেম্বরঃ বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী ৭১’র কসাই আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার ব্যাপারে পাকিস্তানের সংসদে নিন্দা প্রস্তাবের সূত্র ধরে এবার দেশটির সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা বিরাজ করছে। খুব শিগগিরই ইসলামাবাদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে প্রতিবাদলিপি পাঠিয়ে ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানাবে বাংলাদেশ। আর এ আহ্বানে যথাযথভাবে সাড়া না দিলে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কে ফাটল ধরবে বলে পর্যবেক্ষক মহল ধারনা করছে। এদিকে পাকিস্তানের সাথে অস্থায়ীভাবে সকল কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ। পাকিস্তান হাইকমিশন কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার এ দাবি জানিয়ে বলেন, অন্যথায় হাইকমিশনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
    অন্যদিকে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সভাপতি লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান এক ব্রিফিংয়ে বলেন, আমরা উর্দুতে একটি প্রতিবাদলিপি লেখার পরিকল্পনা নিয়েছি এবং ইসলামাবাদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে ওই প্রতিবাদলিপি পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার (সিআইসি) এবং আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জমির ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির দলীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে অনুরূপ বক্তব্য রাখেন।
    ফারুক খান বলেন, সরকার পাকিস্তানকে উর্দু ভাষায় লিখিত প্রতিবাদলিপি পাঠাবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানের জনগণকে জানাতে চায় যে, তাদের জাতীয় পরিষদের সিদ্ধান্ত সঠিক নয়। রাষ্ট্রদূত জমির পাকিস্তানের প্রস্তাবের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধকালে পাকিস্তান এবং তাদের দোসররা কেবলমাত্র ৩০ লাখ বাঙালিকেই হত্যা করেনি বরং এখনো সে ক্ষয়ক্ষতির জন্য বাংলাদেশকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়নি। তিনি বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ভুমিকা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে আরো ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমে উৎসাহিত করবে।
    পক্ষান্তরে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ও প্রগতিশীল সংগঠনগুলো ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করায় পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার প্রতিবাদে গণজাগরণ মঞ্চসহ একাত্তরে নির্যাতিত নারী, শহীদদের সন্তান, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও বেশ কয়েকটি সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন হাইকমিশন ঘেরাওয়ের এ কর্মসূচি পালন করে।
    হাইকমিশন কার্যালয় ঘেরাওয়ের লক্ষ্যে নেতাকর্মীরা সামনের দিকে অগ্রসর হতে চাইলে গুলশান-২ এ পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা হাইকমিশনের দিকে জুতা নিক্ষেপ করে এবং পকিস্তানের জাতীয় পতাকা পুঁড়িয়ে দেয়। তারা হাইকমিশনের দিকে পাকিস্তান ডোন্ট বার্ক, পাকিস্তান ইওর নোস আগলি, ইওর নোস ডার্টি, গো টু হেল পাকিস্তান, পাকিস্তান ডোন্ট ট্রাই টু সেভ ইওর ডগস লেখা সম্বলিত প্লে-কার্ড ও জুতা দেখাতে থাকে। এ সময় তারা পাকিস্তানের প্রেতাত্মা পাকিস্তান চলে যা, মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
    অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ ঘেরাওকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠি চার্জ করে ধাওয়া করে। পুলিশের লাঠির আঘাতে নারী মুক্তিযোদ্ধা ও ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাসিনী, ইমরান এইচ সরকার, বাপ্পা, বনানীসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। পুলিশের বাধার মুখে পাকিস্তান হাইকমিশনের সামনে থেকে একটু সরে এসে অবস্থান নিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী সমর্থক ও বিক্ষুব্ধ জনতা। সেখানে এক সমাবেশে বক্তব্যে ইমরান এইচ সরকার বলেন, পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে হবে।
    এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশনের মহাসচিব মেজর (অব.) ওয়াকার হাসান বীরপ্রতিক, মুক্তিযুদ্ধে নবম সেক্টরের সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন প্রমুখ। বক্তারা ৭১ সালের বর্বরতার সঙ্গে জড়িত পাকিস্তানের যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচারের দাবি জানান। পাকিস্তানকে সংযত হওয়ার আহবান জানিয়ে তারা বলেন, আমরা একাত্তরকে ভুলি নাই, বাঙালি বীরের জাতি একাত্তরে তা প্রমাণ করেছে। প্রয়োজনে আবারও অস্ত্র হাতে নিয়ে প্রমাণ দেয়া হবে।
    সাংবাদিক আবেদ খান, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ড. সারোয়ার আলী, প্রজন্ম-৭১-এর সভাপতি সাংবাদিক শাহীন রেজা নূর, কাদের মোল্লার মামলায় অন্যতম সাক্ষী শহীদুল হক মামা, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের মামলায় সাক্ষী জহিরউদ্দিন জালাল ওরফে বিচ্চু জালাল, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুজ্জামান শাহীন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
    প্রসঙ্গত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসি দেয়ায় পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ও পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদে সোমবার নিন্দা জানিয়ে প্রস্তাব পাস করা হয়। এর আগে গত শনিবার পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলি খান বলেন, বাংলাদেশ হওয়ার আগ পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের একজন অকুণ্ঠ সমর্থক ছিলেন কাদের মোল্লা। এ কারণে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।