নড়াইল এতিম নিবাসিদের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও

    0
    494

    সরকারি শিশু পরিবারের এতিম নিবাসিরা তাদের ওপর অত্যাচার ও বিভিন্ন দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও

    নড়াইল প্রতিনিধিঃ  নড়াইল সরকারি শিশু পরিবারের এতিম নিবাসিরা তাদের ওপর কর্তৃপক্ষের অত্যাচারের অভিযোগ এবং বিভিন্ন দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করেছে। সোমবার সকাল ৯টার দিকে তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করলে পরে তাদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মিমাংসার আশ্বাস দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে সমাজসেবা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
    সোমবার দুপুরে সরেজমিনে নড়াইল সরকারি শিশু পরিবারে গেলে নবম শ্রেণির ছাত্র মোঃ তৌফিক,৭ম শ্রেণির আসিফ গাজী, ৬ষ্ঠ শ্রেণির রবি, প্রিন্স, মুন্না ও ৪র্থ শ্রেণির হুসাইন বিভিন্ন অভিযোগে জানান, রবিবার রাত ১০টার দিকে ৭ম শ্রেণির ছাত্র ১০-১২ দিন ধরে অসুস্থ সোহান সিকদারের জরুরি চিকিৎসার জন্য নীচে গেটের সামনে আসি। এ সময় গেট বন্ধ ছিল। ডাকাডাকি করে কাওকে না পেয়ে কাচের জানালার ফাঁক দিয়ে নীচে নেমে কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়ে সোহানের চিকিৎসার দাবি জানাই। এই ছিল আমাদের অপরাধ। পরে রাত ২টার দিকে কর্তৃপক্ষ ২জন পুলিশকে সাথে নিয়ে তাদের ঘুম থেকে ডেকে তুলে কান ধরায় এবং চড় থাপ্পড় মারে। আমাদের অপরাধ আমরা নাকি হৈচৈ ও শব্দ করেছি এবং চেয়ার-টেবিল ভাংচুর করেছি। এসব আমরা কিছুই করিনি। পুলিশ বলেছে, তোরা গাঁজা ও ফেন্সিডিলখোর,জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হবি। কখনও মানুষ হতে পারবি না। ছোট থেকে বড় সবাই তোরা খারাপ।

    তারা আরও জানায়, তাদের সাথে কর্তৃপক্ষ প্রায় সময় অসদাচরণ করে থাকে। কিছু হলেই আমাদের নাম কেটে দেওয়ার ভয় দেখায়। মৈত্রি মন্ডল নামে এক কারিগরি প্রশিক্ষক প্রায় তাদের জন্য বরাদ্দকৃত বিস্কুট, মুড়ি, চানাচুর নিয়ে যায়। তাদের দিয়ে উপ-তত্ত্বাবধায়ক মাঝে মাঝে ঘরের মেঝে পরিস্কার করায় এবং ময়লা ফেলায়। বর্তমান উপ তত্ত্বাবধায়ক গত ২বছর এখানে আসার পর থেকে এ সমস্যা শুরু হয়েছে। তারা বলেন, ডরমেটরিতে ৩০টি ফ্যানের মধ্যে ৭টি ফ্যান নষ্ট। অনেকগুলি আস্তে আস্তে ঘোরে। জগ নেই, গ্লাস নেই। দুপুরের রান্না করা খাবার রাতে খেতে দেয়। ফলে অনেক সময় খাবার দিয়ে গন্ধ বেরায়। এতদিন খেলতে দিন না। মাত্র কয়েকদিন দিচ্ছে।
    ৭ম শ্রেণির ছাত্র সোহান সিকদার জানায়, সে ১০-১২ দিন ধরে অসুস্থ। গলা ব্যথা, সর্দি-কাশি রয়েছে। শুধু নাপা খেতে দেয়। আর একটি কাশির সিরাপ দিয়েছে। এতে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। সিরাপ খেলে মাথা ঘোরায়। রোববার রাতে আমাদের প্রতিবাদের কারনে এতো দিন পর সদর হাসপাতালে চিকিৎসক দেখাতে নিয়ে যায়। ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র সৌরভ মোল্যা জানায়, ১ মাস ধরে তার ডান হাতে চুলকানি-একজিমা ধরনের সমস্যা হয়েছে। ঠিকমতো ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না। ৬ষ্ঠ শ্রেণির আল মামুন জানায়, সে এক মাস ধরে তার হাতের আঙ্গুল কেটে গেছে। তার ঠিকমতো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। জোবায়ের মোল্যা জানায় তাকে গত ১বছর পূর্বে তাকে ডিস লাইনের তার দিয়ে উপ তত্ত্বাবধায়ক স্যার মেরেছিল।
    বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে সরকারি শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক আসাদুল্লাহ বিভিন্ন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা তাদের সাথে সব সময় ভালো ব্যবহার করি। তারা করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হবার পর এমন উচ্ছৃংখল আচরণ শুরু করেছে। তাদের কিছু দিন খেলতে সাতার কাটতে না দেওয়া একটি কারণ হতে পারে। রোববার রাতে নিবাসিরা লাঠি নিয়ে নিচে বের হয় আমাকে মারার জন্য। রাতে সমাজসেবার উপ পরিচালকের অনুমতি নিয়ে পুলিশ ভেতরে প্রবেশ করে তাদের বুঝিয়েছে। কোনো মারধর করেনি। শিশু পরিবারে ৬৬জন ভর্তি থাকলেও নিবাসি উপস্থিত থাকে ৫০-৫৫জন। কিন্তু প্রায় সবার নামেই খাবার রান্না হয়। এ অভিযোগের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

    সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রতন হালদার বলেন, শিশুরা একটু উশৃংখল হয়ে গেছে। রোববার (২৫ অক্টোবর) রাতে তারা ডরমেটরির চেয়ার-টেবিল ভাংচুর করেছে। ফলে ব্যাপক শব্দ হয়েছে। টহল পুলিশ শব্দ টের পেয়ে আমাদের অনুমতি নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেন। কিন্তু কাওকে মারধর করেনি। তাদের দিয়ে কাজ করানো, খেলতে না দেওয়া, শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করার কথা তিনি অস্বীকার করেন। এছাড়া প্যান নষ্ট, বা পোশাক না পাওয়া, জগ, গ্লাসসহ বিভিন্ন দ্রব্য না পাওয়ার ব্যাপারে বলেন, আমরা বরাদ্দের বাইরেতো দিতে পারি না। তারপরও এসব ঘটনায় একটি তদন্ত টিম গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
    জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, শিশুরা তাদের কিছু সমস্যার কথা জানিয়েছে। শিশু পরিবারের শিশু এবং কর্তৃপক্ষ নিয়ে সোমবার বসাবসি করেছি। দুপক্ষের কাছ থেকে বিভিন্ন অভিযোগ শোনা হয়েছে। কিভাবে এর সুষ্ঠু সমাধান করা যায় সেটা দেখছি।