নড়াইলে সুরত হাল রিপোর্টের জন্য পূনরায় মরদেহ উত্তোলন

    0
    281

    “নড়াইলে ঘরামি নির্মল রায়ের মরদেহ সুরত হাল রিপোর্টের জন্য পূনরায় উত্তোলন,বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ”

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৫আগস্ট,নড়াইল প্রতিনিধিঃআদালতের আদেশে নড়াইল সদর উপজেলার সিঙ্গাশোলপুর গ্রামে নিরীহ ঘরামি নির্মল রায়ের (নিল কালি) (৫৩) মরদেহ সুরত হাল রিপোর্টের জন্য পূনরায় উত্তোলন করা হয়েছে। শুক্রবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টার দিকে সদরের বড়গাতি শ্মশান থেকে তার লাশ উত্তোলন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট আজিম উদ্দীন, সদর থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন, ওসি (তদন্ত) জুলফিকার আলী, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার এসআই ভবতোষ, সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান উজ্জল শেখ, নির্মল রায়ের স্ত্রী সুনিতা রায়, ছেলে নৃপেন রায়সহ পরিবারের সদস্যসহ বিপুর সংখ্যক লোক উপস্থিত ছিলেন। আগের ময়নাতদন্তের রির্পোট না আসায় পুনরায় ময়নাতদন্ত হচ্ছে না।
    মামলার বাদি পক্ষের উকিল এ্যাডঃ উত্তম ঘোষ জানান, স্থানীয় মীর্জাপুর পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ এস.আই নাজমুল হক নিহতের শরীরের বাম উরুতে একটিমাত্র কালসে দাগ ছিল বলে সুরত হাল রিপোর্টে জানিয়েছেন। শরীরের অন্য কোনো জায়গায় আঘাতের চিহৃ ছিল না। কিন্তু বাদি, নিহতের স্ত্রী-সন্তানসহ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে লাশের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহৃ ছিল। সে কারনে নিহতের ভাইপো মামলার বাদি গনেশ রায় পূনরায় লাশ উত্তোলন করে সুরত হাল রিপোর্ট প্রস্তুত এবং পূনরায় ময়নাতদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করেন। এর ভিত্তিতে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট, নড়াইলের বিচারক মো
    জাহিদুল আজাদ বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বিকেলে একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট দ্বারা লাশ উত্তোলন, সুরত হাল রিপোর্ট এবং পূনরায় ময়নাতদন্তের আদেশ দিয়েছেন।
    এ দিকে হত্যার অভিযোগ বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার নড়াইল-সিঙ্গাশোলপুর সড়কে সিঙ্গাশোলপুর হাই স্কুলের পার্শ্বে এলাকাবাসীর আয়োজনে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডঃ সুবাস চন্দ্র বোস, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক বাবুল সাহা, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মলয় নন্দী, সাধারন সম্পাদক আশিষ বিশ্বাস ,সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শ্যামল বিশ্বাস, সাধারন সম্পাদক লিয়ান মোল্যা, ৭নং ওয়ার্ড মেম্বর শেখর বিশ্বাস, বাবলু বিশ্বাস, নিহতের স্ত্রী সুনীতা রায় প্রমুখ । বক্তারা ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার এবং বিচারের দাবি জানান।
    মামলার বিবরনে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সিঙ্গাশোলপুর গ্রামের মিল্টন প্রতিবেশী নির্মল রায় (নিল কালির জায়গা দখল এবং দেশ ছাড়া করতে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার (২৯ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিঙ্গাশোলপুর গ্রামের প্রভাবশালী মিল্টন কাজী ও তার লোকজন তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী সিঙ্গাশোলপুর হাই স্কুল মাঠের মধ্যে বেধড়ক মারধর করে। পরে তাকে কোনো চিকিৎসা পর্যন্ত করাতে দেয়নি এবং কাওকে এ ঘটনা জানাতেও নিষেধ করে। তারা নির্মল রায়ের বাড়িতে পাহারা পর্যন্ত বসায়। পরে চিকিৎসার অভাবে আঘাতজনিত কারনে রবিবার রাতে তার মৃত্যু হয়। প্রতিবেশী সুজয় বিশ্বাস (২৫) জানান, নিল কালির বাড়ির পূর্ব পার্শ্বে মিল্টন কাজির বাড়ি। নিলকে মারার পর তাকে বাড়ি থেকে বের হতে দেয়নি। মিল্টনের লোকজন দিয়ে তাদের এক প্রকার অবরুদ্ধ করে রাখে। নিলের স্ত্রী সুনিতা অন্য কাওকে দিয়ে গোপনে কয়েকটা ব্যাথার বড়ি ইটোরিক্স কিনে এনে খাওয়ায়।
    নিহত নির্মল রায়ের স্ত্রী সুনিতা রায় ও ছেলে নৃপেন রায় জানান, নিহতের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহৃ রয়েছে। স্থানীয় অর্পনা রায় বলেন, নীল কালির উরু থেকে বুক পর্যন্ত হাতুড়ির আঘাতের চিহৃ রয়েছে। রক্ত জমাট বেধে কালো হয়ে গিয়েছিল। আসামিরা নিহতের লাশ দাহ করার চেষ্টা করেছিল। গ্রামবাসি তাকে দাহ না করে সমাদি দেয়।
    নড়াইল সদর থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন জানান, মিল্টন কাজী, তার মা ফিরোজা বেগমকে হুকুমের আসামি করে ২ আগষ্ট ৭জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় ২জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো সিঙ্গাশোলপুর গ্রামের ফিরোজা বেগম এবং একই গ্রামের আলুফ শেখের পূত্র জাহাঙ্গীর শেখ (৩৭)। এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।