নড়াইলে শিক্ষকের প্রতিহিংসার শিকার ছাত্রী অকৃতকার্য !

    0
    253

    শিক্ষকের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ, স্মারকলিপি প্রদান ও দু’টিতদন্ত কমিটি গঠন

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৩জুন,সুজয় কুমার বকসীঃ নড়াইলে শিক্ষকের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে এক মেধাবী ছাত্রী এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফারিয়া ও তার বাবার অভিযোগ, শিক্ষক ফসিয়ার প্রেমের প্রস্তার প্রত্যাক্ষান করায়, পরীক্ষার ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব রেখেছে। নড়াইল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধাবি ছাত্রী,৫ম ও ৮ষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়া ফারিয়া ইসলাম(দশম শ্রেণিতে ক্লাস রোল ছিল-২) এ বছর নড়াইল সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সাতটি বিষয়ে এ প্লাস পেলেও পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। (তার রোল নং ১১২৪২৮ এবং রেজিঃ নং ঃ ১২৯৩৬৫৪৪৮০)।

    এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন এবং বুধবার বিকেলে নড়াইল বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর মুনছুর বিল্লাহের সভাপতিত্বে ওই শিক্ষককে অপসারণ ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

    ফারিয়া ইসলাম অভিযোগে জানান, ২০১২ সালে অভিযুক্ত শিক্ষক নড়াইল বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষককতা করাকালিন সময়ে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিত ও উত্তক্ত করত। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় ও কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর দোষী প্রমানিত হওয়ায় তাকে মেহেরপুরে একটি স্কুলে বদলি করা হয়। সম্প্রতি সে নড়াইল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করে। আমার প্রতি আক্রোশের জন্য তিনি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রন কমিটির সদস্য থাকার সুবাদে আমাকে ব্যবহারিক বিষয়গুলোতে ২৫ নম্বরের মধ্যে ১৫ নম্বর এবং কৌশলে পদার্থ বিজ্ঞানে ফেল করিয়ে দিয়েছেন। আমি শিক্ষামন্ত্রীর কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।

    ফারিয়ার বাবা জহিরুল ইসলাম ও মা সাবিনা আক্তার বলেন, প্রধানমন্ত্রীসহ জাতির কাছে এ ঘটনার বিচার দাবি করছি। ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষক যেন এমন আচরণ না করেন

    এ ব্যাপারে নড়াইল সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব মনিরা সুলতানা জানান, অভিযুক্ত ফসিয়ার রহমানকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তার উত্তরে মনে হয়েছে অপকর্মটি তিনিই করেছেন। এ ব্যাপারে নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ওয়ায়েজ উদ্দীনকে আহবায়ক করে তিনসদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।

    এ ঘটনায় মঙ্গলবার(২জুন) অভিযুক্ত শিক্ষক ও বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে নড়াইল সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করে স্মারকলিপি প্রদান করেছে। স্মারকলিপিতে অভিযোগ করা হয়েছে- অভিযুক্ত শিক্ষক  ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বর অনলাইনে ইনপুট করার দায়িত্বে ছিলেন। ফারিয়া ইসলামের সকল ব্যবহারিক পরীক্ষায় নম্বর টেম্পরিং করা হয়েছে এবং তার সত্যতা পাওয়া গেছে। এছাড়া ফারিয়ার উত্তরপত্রের অতিরিক্ত খাতা অবমুক্ত করা, সঠিক উল্টরপত্র কেটে দেওয়া, পৃষ্ঠা ছেড়া বা গনিত, উচ্চতর গনিত ও অন্যান্য পরীক্ষার উত্তরপত্রে টেম্পারিং করা, নৈব্যক্তিক পরীক্ষার সেট পাল্টানো ,ওএমআর সিট পরিবর্তন করা, অতিরিক্ত বৃত্ত ভরাট বা ডুপ্লিকেট করা হতে পারে। জেলা প্রশাসক এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) আনন্দ কুমার বিশ্বাসকে আহবায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।

    অভিযুক্ত শিক্ষক ফসিয়ার বিভিন্ন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকই স্কুলের অনলাইনের পিনকোড জানেন, সে কারণে তাদের মধ্যে কেউ ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বর পরিবর্তন করতে পারেন।

    জলা প্রশাসক আঃ গাফফার খান  জানান, এ বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও বোর্ড কন্ট্রোলারের সাথে কথা বলেছি । প্রকৃত মার্ক এবং যে মার্ক পাঠানো হয়েছে তা যাচাই করে দেখা হবে এবং খাতা চ্যালেঞ্জ করা হবে । মেধাবী এই ছাত্রীর যেন কোন ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে সকলকে লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে।