নির্মম গণহত্যার ঘটনায় জগন্নাথপুরবাসী বেদনায় বাকরুদ্ধ

    0
    224

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,৩১আগস্ট,মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া: সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুরে আজ ৩১শে আগষ্ট সোমবার শ্রীরামসি ও আগামীকাল পহেলা সেপ্টেম্ভর মঙ্গলবার রানীগঞ্জ গণহত্যা দিবস। জাতীয় ভাবে এই দুইটি দিবস পালিত না হলে এখানকার সর্বস্তারের মানুষের কাছে এই দুইটি দিবস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছরের এই দিনগুলো আসলেই বেদনায় নীল হয়ে যায় উপজেলার প্রতিটি মানুষ। ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে তাদের মন। চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনা। তাদের সামনে ভেসে উঠে সেই ভয়াবহ গণহত্যা কান্ডের নির্মম দৃশ্য। কেউ হারিয়ে বাবা-মা,কেউ হারিয়েছে ভাই আবার কেউ হারিছে তার সন্তান। তাই বেদনায় বাকরুদ্ধ হয়ে যায় ছোট বড় সকলেই।
    এলাকাবাসী জানায়,১৯৭১সালে মুক্তিযোদ্ধ চলাকালীন সময় স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগীতায় ৩১শে আগষ্ট পাক হানাদার বাহিনী নৌকাযোগে জগন্নাথপুরে আসে এবং থানা ভবন ও পার্শ্ববর্তী ব্যারিষ্টার মীর্জা আব্দুল মতিনের বাড়ি দখল করে ক্যাম্প স্থাপন করে। এরপর রাজাকাররা পাক বাহিনীকে নিয়ে উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের শ্রীরামসি বাজারে যায়। সেখানে গিয়ে শান্তি কমিটির আহবানে এলাকার নিরীহ নারী ও পুরুষকে ডেকে এনে প্রথমে জড়ো করে। তারপর শতাধিক লোকজনকে শ্রীরামসি বাজার সংলগ্ন ২টি বাড়িতে ধরে নিয়ে হাত-পা বেঁধে লাইন ধরিয়ে শারীরিক নির্যাতন করার পর পাখির মতো গুলি করে সবাইকে নির্মম ভাবে হত্যা করে পাক বাহিনী। পরে সবার লাশ ওই বাড়ির পুকুরে ফেলে দিয়ে শ্রীরামরি বাজারটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

    এঘটনার পরদিন পহেলা সেপ্টেম্ভর একই ভাবে পার্শ্ববর্তী রানীগঞ্জ বাজার সংলগ্ন কুশিয়ারা নদীর তীরে শতশত লোকজনকে দাড় করিয়ে গুলি করে নদী ফেলে দেয়। পরপর দুইটি গণহত্যার নির্মম ঘটনায় পুরো উপজেলায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। অসহায় মানুষগুলো জীবন বাচাঁনো তাগিদে বসতবাড়ি ফেলে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। মানুষ শূন্য হয়ে পড়ে জগন্নাথপুর উপজেলা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শ্রীরামসির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা,শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও স্বজনরা এলাকার লোকজনকে নিয়ে গঠন করে শ্রীরামসি শহীদ স্মৃতি সংসদ নামে একটি সামাজিক সংগঠন। রানীগঞ্জ ও শ্রীরামসিতে শহীদদের স্মরণে গণকবরে নির্মাণ করা হয় স্মৃতিস্তম্ভ। সেই সাথে শ্রীরামসি ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে প্রতিবছর ওই দুইদিন পৃথক ভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় আ লিক গণহত্যা দিবস পালিত হয়।
    এব্যাপারে শ্রীরামসির গ্রামের শহীদ রহিছ উল্লাহর ছেলে কৃষক মস্তাব আলী বলেন,প্রতিবছরের এই দিনটি আসলে কান্না আর থামাতে পারিনা,বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ি। একই গ্রামের শহীদ আব্দুল লতিফের মেয়ে রোকেয়া বেগম বলেন,পাক বাহিনী আমার নিরপরাধ বাবা ডেকে নিয়ে নির্যাতন করার পর নির্মম ভাবে হত্যা করে পুকুরে ফেলে দেয়।
    জগন্নাথপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আকমল হোসেন বলেন,আমার বড়ভাই শ্রীরামসি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শহীদ চাঁদ উদ্দিনকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছিল একথা ভাবলে কষ্ঠ হলেও আজ নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করি। কারণ তাদের জন্যই আমার স্বাধীনতা পেয়েছি।
    শ্রীরামসি শহীদ স্মৃতি সংগঠনের সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম মোশাইদ বলেন, ১৯৮৭সাল থেকে শ্রীরামসি দিবসটি আ লিক গণহত্যা দিবস হিসেবে আমরা পালন করে আসছি। এই দিবসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।