নারী ও শিশু নির্যাতনঃবিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে

    0
    241

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৫ডিসেম্বর: ‘নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, অপহরণ, হত্যা : প্রতিরোধ ও প্রতিকার’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, নারী ও শিশু নির্যাতন রোধ করতে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর ভূমিকা, আইনের যথাযথ প্রয়োগের পাশাপাশি সমাজের সব স্তরের মানুষের সচেতনতা ও ঐক্যবদ্ধ সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার।

    আজ ৫ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘নারী ঐক্য পরিষদ’ এই সেমিনারের আয়োজন করে। সংগঠনের সভাপতি লুৎফুন নেসা খানের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিকুল ইসলাম। আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায়, শিশু একাডেমীর পরিচালক, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক এ্যাড. সালমা আলী, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মাল্টি সেক্টরাল প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক ড. আবুল হোসেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকল্প পরিচালক জাহিদুল হক সরদার। সেমিনার স ালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নীলুফার বানু।

    সেমিনারে সচেতনতা ও নিজেদের ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য নারীদের বেশি বেশি করে পুলিশে আসার পরামর্শ দিয়েছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আপনারা যারা এখানে আছেন, নারীদের বলবেন, ‘পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করো।’ যাতে তাদের ক্ষমতা তারা প্রয়োগ করতে পারেন।

    পাঠ্যপুস্তকে নারী নির্যাতনবিরোধী বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হবে জানিয়ে তারিকুল ইসলাম বলেন, পাঠ্যবইয়ে এসব বিষয় বলে দেয়ার চেষ্টা করেছি। আগামী বছরের পাঠ্যবইয়ে বিষয়গুলো আসবে। তবে স্কুলে এসব বিষয় আলোচনা করতে শিক্ষকরা দ্বিধাবোধ করেন। তিনি বলেন, প্রতিবাদ গুরুত্বপূর্ণ, তা না হলে উত্যক্তকারী সাহস পেয়ে যায়। তবে শুধু সরকার একা নয়, স্বেচ্ছাসেবী এবং এনজিও সংগঠনগুলোকে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে এগিয়ে আসতে হবে।

    সেমিনারে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, পয়লা বৈশাখে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নারী নিগ্রহের ঘটনায় জড়িতদের ধরতে না পারায় পুলিশ আত্মসন্তুষ্ট নয়।

    ২০০৮ সাল থেকে মামলাগুলো পর্যালোচনা করে কৃষ্ণপদ রায় বলেন, এখন খুব বেশি মামলা হচ্ছে না। আদালত থেকে কম মামলা আসছে। থানায় বেশি মামলা হচ্ছে। তার মানে থানা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। আমরা সত্যিকার অর্থে নারী এবং শিশুবান্ধব পুলিশ হতে চাই।

    মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৬ বছর করা হলে নারী সমাজ মেনে নেবে না উল্লেখ করে মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক এ্যাড. সালমা আলী বলেন, এ ধরনের আইন হলেই আমরা আদালতে যাবো। ১৮ বছরের নিচে একজন মেয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকে না। মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ বছর থেকে কমানো হলে সেটা নারীবান্ধব হবে না।

    তিনি বলেন, বিভিন্নভাবে নির্যাতিত নারীদের উদ্ধারে ট্রেনিং সেন্টারে পুলিশের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। পুলিশ স্টেশনের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ কী থাকে সে প্রশিক্ষণ এখনও হয় না। সারদা পুলিশ একাডেমি থেকে অন্য জায়গায় নিয়মিত প্রশিক্ষণ হওয়া উচিৎ। রেসকিউ ও রেইড কীভাবে হবে- এগুলো প্রশিক্ষণে থাকতে হবে।

    ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিরাপদ জায়গায় নির্যাতিতকে পৌঁছাতে হবে বলেও আইন রয়েছে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা থাকলে অপরাধ অনেক কম হয়। ঘরের ভেতর থেকে প্রতিরোধ আরম্ভ করতে হবে। প্রতিরোধ করলে কমে যাবে। এলাকাভিত্তিক প্রতিরোধ করতে হবে।

    আলোচনায় অংশ নিয়ে সামাজিক প্রতিরোধের ওপর জোর দেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। তিনি বলেন, সবই আইনের ঘাড়ে চাপাবো কেন? এককভাবে আরো মানুষকে দাঁড় করাতে পারি, প্রতিরোধের জায়গাটা আরো বড় হবে। বাল্যবিবাহও নির্যাতনের জায়গা। বয়স হওয়ার আগেই বৈধভাবে ধর্ষণের শিকার হতে হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

    তিনি বলেন, শিশু-নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সর্বাগ্রে মানবতাবোধ ও বিবেক জাগ্রত করা দরকার। একইসাথে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।