নারায়ণগঞ্জে একই পরিবারের ৫জনকে খুনঃআটক-২

    0
    195

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৭জানুয়ারীঃ নারায়ণগঞ্জের সদর থানার একটি ফ্ল্যাটে একই পরিবারের ৫জনকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২জনকে আটক করা হয়েছে।

    শনিবার রাতে শহরের ২ নম্বর বাবুরাইল এলাকার আমেরিকা প্রবাসী ইসমাইলের পাঁচতলা বাড়ির একতলার পূর্ব পাশের ফ্ল্যাট থেকে একই পরিবারের ৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এরমধ্যে ৩ জনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। দুই শিশুকে মাথা থেথলে মারা হয়েছে।  নিহতরা হল- তাসলিমা বেগম (৪০), তার ছেলে শান্ত (১০), মেয়ে সুমাইয়া (৫), ভাই মোরশেদুল (২৫) ও তাসলিমার জা লামিয়া (২৫)।

    পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল দুপুর থেকে সন্ধ্যার মধ্যে কোনো এক সময় ওই ৫ জনকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান জেলা প্রশাসক মো: আনিসুর রহমান মিঞা, ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আলী, জেলা পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন, র‌্যাব-১১ এর সিও আনোয়ার লতিফ খান, সদর মডেল থানার ওসি আব্দুল মালেক, ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান, ডিবি পুলিশের ওসি মামুনুর রশিদ মণ্ডলসহ পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা।  পরে রাত ১২টার দিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবদুস সালামের নেতৃত্বে ঢাকা থেকে একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তারা প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে তদন্ত করে।

    নিহত তাসলিমার খালাতো বোন নয়নতারা সাংবাদিকদের বলেন, ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার ভেলাবাড়ি গ্রামে তাছলিমাদের বাড়ি। তার বাবার নাম বারেক মিয়া।

    নিহত তাছলিমা ও মোশারফের মা মোর্শেদা বেগম বলেন, এক মাস আগে তারা এ বাড়িতে ভাড়া এসেছে। এর আগে তারা ঢাকার কলাবাগানে থাকতো। তাছলিমার স্বামী শফিকুল ইসলাম ঢাকায় প্রাইভেট কার চালক। সে প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে বাসায় আসে এবং শনিবার সকালে চলে যায়। কিন্তু ছুটি না পাওয়ায় তিনি গত বৃহস্পতিবার বাসায় আসেননি। তিনি আরো জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টায়ও তিনি তার ছেলে মোশারফের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। শনিবার সকালে  মোর্শদা বেগম নারায়ণগঞ্জে থাকা তাদের বিভিন্ন আত্মীয়কে ফোন করে জানায় যে মোরশেদুল ও তাছলিমা ফোন ধরছে না। তিনি বাসায় গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। দুপুরের পরে আত্মীয়দের কয়েকজন ওই বাসায় গিয়ে দরজায় তালা দেখে ফিরে আসেন। রাত আটটায় নিহত তাছলিমার দেবর এবং লামিয়ার স্বামী শরিফুল ইসলাম গ্রামের বাড়ি থেকে এসে দেখেন দরজা বন্ধ। মোবাইল ফোনও বন্ধ। পরে তিনি রাত সাড়ে ৮টার দিকে আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে তালা ভেঙ্গে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাশ দেখতে পেয়ে চিৎকার করেন।

    এক তলার পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা রহিমা খাতুন জানান, আগের রাত দশটা পর্যন্ত তারা তছলিমাদের ফ্ল্যাটে মানুষের আসা যাওয়ার শব্দ, কথাবার্তার শব্দ শুনেছেন।

    নিহত তাছলিমার খালাতো বোন নয়নতারার স্বামী মোহাম্মদ মিলন জানান, নিহত মোর্শেদুল ইসলামের সঙ্গে সুদের টাকা নিয়ে ঢাকার একটি পক্ষের বিরোধ ছিল। সে বিরোধের জের ধরে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

    নিহত তাছলিমা ও মোর্শেদুলের মা মুর্শিদা বেগম বলেন, ঢাকার একটি পক্ষের সঙ্গে  মোর্শেদের বিরোধ ছিল। তবে কি নিয়ে বিরোধ ছিল তা তিনি বলতে পারছেন না। এ নিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে।

    এদিকে, নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন রাত ১২টার দিকে সাংবাদিকদের জানান, আমরা ঘরের ভিতরে গিয়ে ৫টি লাশ দেখিছি ফ্লোরে পড়ে আছে। ৩ জনকে গলা কেটে ও শিশু দুটিকে মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়। পুরো মেঝে রক্তাক্ত। প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে পারিবারিক কোন ঘটনার সুত্রধরে ৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়াও আরো কিছু ক্লু আমরা পেয়েছি। রাত আনুমানিক ১১টার দিকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত লামিয়ার স্বামী শরীফ মিয়া ও নিহত তাসলিমার খালাতো ভাই দেলোয়ারকে আটক করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আরো তথ্য পাওয়া যাবে।

    পুলিশ জানিয়েছে, খানকার মোড়ে অবস্থিত ৬ তলা ভবনের মালিক আমেরিকা প্রবাসী ইসমাইল হোসেন। তারই বাড়ীর ভাড়াটিয়ার কক্ষের দরজা দীর্ঘক্ষণ তালাবদ্ধ দেখে এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়। তারা জানালা দিয়ে দেখতে পায় ঘরের ভেতরে ৫ জনের লাশ পড়ে আছে। পরে পুলিশ দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ পাঁচটি নগরীর মণ্ডলপাড়ায় অবস্থিত ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।