নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইভীর হ্যাটট্রিক

0
589
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইভীর হ্যাটট্রিক
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইভীর হ্যাটট্রিক এ বিজয় চিহ্ন দেখাচ্ছেন।

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ প্রাচ্যের ডান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বৈঠা হাতে নৌকা বেঁয়ে উজানে তরী ভিড়ালেন সেলিনা হায়াৎ আইভী এতে সমর্থকরা বিজয় উল্লাস শুরু করেন। এসময় হাতির পিঠে চওয়ার হওয়া বিএনপি নেতা ধীরে চলা অভিযোগের ঢালা নিয়ে কারচুপির বয়ান শুরু করলেন।   

এদিকে ১৬ জানুয়ারি ২০২২ ইং তারিখে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সর্বশেষ পাওয়া সব কয়টি (১৯২) কেন্দ্রের বেসরকারি ফলাফলে আইভী পেয়েছেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৯৭ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার পেয়েছেন ৯২ হাজার ১৬৬ ভোট। ৬৬ হাজার ৯৩১ ভোটে জয় পেয়েছেন আইভী। রাতে ডিসি অফিসের সামনে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা এ ফল ঘোষণা করেন। এর আগে প্রাপ্ত সংবাদ সূত্রে জানা যায়,১৯২ ভোটকেন্দ্রে সেলিনা হায়াৎ আইভী ভোট পেয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ২৭৩। প্রতিদ্বন্দ্বী তৈমূর আলম খন্দকার ভোট পেয়েছে ৯২ হাজার ১৭১।    

এ সময় আইভীর বাসার সম্মুখ থেকে বেসরকারি ভাবে নির্বাচনের খবর পেয়ে পাড়ায়-পাড়ায় বিজয় মিছিল শুরু করেন তার সমর্থকরা।

এ সময় আইভী বাসার মধ্যেই ছিলেন। প্রথমে রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে বিজয় চিহ্ন দেখান তিনি।

জয় নিশ্চিত হওয়ার পর আইভী নিজ বাড়িতে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, “আইভী জনতার,সব সময় জনগণের ছিল ,আজীবন আইভী জনগণের হয়েই থাকতে চায়। আজীবন আইভী আপনাদের। নৌকা-আইভী এখানে এক ও অদ্বিতীয়।“

তিনি বলেন “সবাইকে নিয়ে কাজ করা যাবে না। তবে তৈমূর কাকা যে ইশতেহার দিয়েছেন, সেটি ফলো করব।“  নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে হ্যাটট্রিক জয়ের পর রোববার রাতে নিজ বাড়িতে গণমাধ্যমের কাছে এভাবেই নিজের প্রতিক্রিয়া জানান নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী।

এর আগে রোববার সকালে ভোট দিয়ে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন আইভী।

নির্বাচনের মাঠে কোনো ভয় বা শঙ্কা ছিল কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, ‘নির্বাচনে কোনো ভয় বা শঙ্কা ছিল না। তবে নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আমার ওভার কনফিডেন্সকে অনেকে ভিন্নভাবে দেখেছেন। আমি কাজ করেছি, তাই জানতাম জনগণ আমাকে বিমুখ করবে না।’

আইভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে যে মুখ করে নৌকা তুলে দিয়েছিলেন, আমি সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছি। আমি আওয়ামী লীগের হয়েই থাকতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দলেই থাকতে চাই। আমি জয় বাংলাই বলব।’

গত নির্বাচনের চেয়ে ভোট কম পাওয়া নিয়ে কিছুটা অতৃপ্ততার কথা বলেন নারায়ণগঞ্জ নগরের এই অভিভাবক। তিনি বলেন, গতবারের চেয়ে ভোট কম পেয়েছি। তবে ভোটও কম কাস্ট হয়েছে। আরও বেশি কাস্ট হলে আরও বড় ব্যবধানে জিততে পারতাম।

উপস্থিত সাংবাদিকরা জানতে চান, এবার বিজয়ের পর তার প্রধান কাজ হবে কোনটি- এর জবাবে আইভী বলেন, আমার প্রধান কাজ হবে প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর কদমরসুল ব্রিজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করানো। নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার স্থায়ী সমাধান এবং নগরবাসীর জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা।

এদিকে রোববার বিকেল ৪টায় ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পরই আইভীর দেওভোগের বাড়িতে ভিড় করতে থাকেন নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীরা। সন্ধ্যার পর ভোটের ফলে আইভী এগিয়ে যেতে থাকলে উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইতে শুরু করে।

অপরদিকে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে লক্ষাধিক ভোটে হারানোর আশা করা বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার বলেছেন, তিনি প্রশাসনিক ও ইভিএম ‘কারচুপির’ কারণে হেরে গেছেন। রোববার রাতে শহরের মাসদাইরে নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলনে এই ক্ষোভের কথা জানান তৈমূর।

তিনি বলেন, ‘এই ভোটে অংশ নিয়ে সরকারের সঙ্গে আমাকে খেলতে হয়েছে। প্রশাসনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইভিএমের কারচুপির জন্য আজকে আমাদের এ পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। এ পরাজয়কে পরাজয় মনে করি না। আমি ধন্যবাদ জানাই জনগণকে ও মিডিয়াকে।’

তৈমুর বলেন, ‘জনগণের উপস্থিতি স্বতঃস্ফূর্ত ছিল। তারা ভোটটা দিতে পারেনি। মেশিনটা স্লো। ভেতরে একটা ইঞ্জিনিয়ারিং হয়েছে;নাহলে এত ডিফারেন্স হতে পারে না।