আমারসিলেট24ডটকম,০৯মার্চঃ মাত্র ২ লাখ টাকায় প্রবাসী স্বামীর ভাড়াটে খুনীরাই নৃশংসভাবে এক গৃহবধূকে খুন করে লাশ প্রায় ৮০ফুট গভীর সেচ প্রকল্পের অব্যবহৃত নলকুপের পাইপে ফেলে দেয়। পরে প্রধান ঘাতকের স্বীকারোক্তি মোতাবেক এক মাস পর গত শুক্রবার থেকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করে। চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার ছেচরাপুকুরিয়া গ্রামে। গতকাল শনিবার থেকে নলকুপ খনন কাজে অভিজ্ঞদের নিয়ে পুলিশ নিহত ওই গৃহবধূ শাহিনা আক্তারের (৩২) লাশ উদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু করার কথা রয়েছে। ঘটনাস্থলে মোতায়েন রাখা হয়েছে পুলিশ।
জানা যায়,শনিবার বিকাল পর্যন্ত নিহতের লাশ উদ্ধারে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না উপজেলা প্রশাসন। অন্যদিকে নিহত শাহিনা আক্তারের দুই ছেলে ও ১ কন্যার আহাজারীতে শোকাবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তাদেরকে শান্তনা দেওয়ার কেহই নেই।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, প্রায় ১২ বছর পূর্বে দেবিদ্বার উপজেলার ছেচরাপুকুরিয়া গ্রামের মোবারক হোসেনের সাথে একই উপজেলার তুলাগাও গ্রামের কেরামত আলীর মেয়ে শাহিনা আক্তারের বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
গত প্রায় ২ বছর পূর্বে নিহতের স্বামী মোবারক হোসেন ছুটিতে দেশে আসার পর তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হলে মোবারক হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যরা শাহিনা আক্তারের উপর নির্মম নির্যাতন চালায়। প্রায় ৩/৪ মাস ছুটি শেষে মোবারক হোসেন ফের বিদেশে চলে যাওয়ার পরও মোবারক হোসেনের পরিবারের লোকজন শাহিনাকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। এক পর্যায়ে শাহিনা বাদি হয়ে দেবিদ্বার থানায় নারী নির্যাতন আইনে মামলা ও দায়ের করে।
পরবর্তীতে মোবারক হোসেন বিদেশ থেকে মোবাইল ফোনে এবং তার পরিবারের সদস্যরা মামলা তুলে নেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। চলতি বছরের গত ৭ ফেব্রুয়ারী রাত থেকে ওই গৃহবধুর খোঁজ না পেয়ে দেবিদ্বার থানায় তার বড় ভাই শাহ আলম সরকার একটি জিডি এন্ট্রি করে।
দেবিদ্বার থানার এস,আই শাহ্ কামাল আকন্দের সুত্রে জানা যায় তিনি বলেন, ‘গৃহবধূ শাহিনা নিখোঁজ হওয়ার পর এ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে ছেচরাপুকুরিয়া গ্রামের আব্দুল করিমকে সন্দেহভাজন আসামী হিসেবে একই জেলার ময়নামতি সেনানিবাস এলাকা থেকে আটক করা হয়। পরে রাতে সে ঘটনার কথা স্বীকার করে জানায়, শাহিনাকে হত্যা করার জন্য তার স্বামী মোবারক হোসেন তাদের সাথে দুই লক্ষ টাকা চুক্তি করে।
ওই চুক্তি মোতাবেক আব্দুল করিম বিভিন্ন কৌশলে শাহিনা আক্তারের সাথে ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি করেন। গত ৭ ফেব্র“য়ারী রাত ১২টায় দিকে আব্দুল করিমসহ আরও ২ ঘাতক শানিহাকে ঘর থেকে ডেকে এনে পাশ্ববর্তী একটি ফাঁকা স্থানে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর লাশ ঘটনাস্থলের পাশে একটি অব্যবহৃত প্রায় ৬০ ফুট গভীর নলকূপের পাইপের ভেতর ফেলে পাইপের মুখ মাটি দিয়ে বন্ধ করে দেয়। রাতেই পুলিশ আব্দুল করিমের তথ্যানুসারে তাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই গভীর নলকুপ সনাক্ত করে হত্যার আলামত পায়। এদিকে শুক্রবার দিনভর চেষ্টা করেও পুলিশ ওই নলকুপ থেকে লাশ উদ্ধারের বিষয়ে কোন কুলকিনারা খুজে পায়নি।
নিহতের লাশ উদ্ধার করতে গত কাল শনিবার সকাল থেকে নলকূপ খননে অভিজ্ঞ একটি টিম কাজ করবে বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। এদিকে ঘটনাস্থলে লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে স্থানীয় হাজার হাজার জনতা সকাল থেকে ঘটনাস্থলে ভীড় জমায়। মায়ের লাশ দেখতে সেখানে ছুটে আসে নিহতের দুই ছেলে ইমরান হোসেন (১১), তুষার আহমেদ (৮) ও একমাত্র মেয়ে রোজিনা আক্তার (৫)। তাদের আহাজারীতে ঘটনাস্থলে এক শোকাবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। স্থানীয় সাংসদ রাজী মোহাম্মদ ফখরুল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বলে জানা গেছে।