নরেন্দ্র মোদি তার বাবাকে চা বিক্রির কাজে সাহায্য করতেনঃবিবিসি

    0
    237

    আমারসিলেট24ডটকম,১৭মেঃ ছোটবেলায় নরেন্দ্র মোদি ঘুড়ি উড়াতে ভালোবাসতেন। তার সবচেয়ে ছোট ভাই প্রহ্লাদ মোদি এখনো মনে করতে পারেন, নরেন্দ্র মোদি যখন ঘুড়ি উড়াতেন, তখন নাটাই ধরে রাখতেন তিনি। যদি আমি নাটাই ধরতে না চাইতাম, উনি রেগে যেতেন এবং আমাকে মারতেন’, বলছিলেন প্রহ্লাদ। তিনি স্বীকার করলেন, বড় ভাইকে এখনো ভয় পান তিনি। তবে এখন তাদের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ প্রায় হয় না বললেই চলে।নরেন্দ্র মোদি তার পরিবারকে সব সময় দূরে রেখেছেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি এই বিষয়টি বেশ জোরে-শোরেই তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, তার এমন কেউ নেই, যার জন্য তাকে দুর্নীতি করতে হবে।

    গর্বিত ছোট ভাই
    প্রহ্লাদ মোদির সঙ্গে কথা হচ্ছিল গুজরাটের প্রধান শহর আহমেদাবাদের এক ছোট্ট টায়ারের দোকানে। এই দোকানটির মালিক তিনি। তিনি বিবিসিকে বললেন, তার ভাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন, এ নিয়ে তিনি গর্বিত।তার মতে ভারতের এমন একজন প্রধানমন্ত্রী দরকার, যার ঝটপট কাজ করার মতো একটা দৃষ্টিভঙ্গি আছে।
    ভাই এর কথা বলার সময় তার কন্ঠে ঝরে পড়লো কিছুটা বিষাদের সুর। ‘আমার মনে হয় ভাই আমাকে এখনো ভালোবাসেন’, বললেন প্রহ্লাদ মোদি। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি যে সবকিছুর ওপর খবরদারি করতে চান এবং তার মেজাজ যে খুব চড়া, সেটা এখনো প্রহ্লাদ মোদি পরিষ্কার মনে করতে পারেন।

    মোদিভীতি
    নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। তাকে ভারতের মানুষেরও কি ভয় পাওয়া উচিত?
    যারা দেশের ভালো চান তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই’, বললেন প্রহ্লাদ মোদি।‘যারা দেশের বিরুদ্ধে কাজ করেন, তাদেরই কেবল ভয় পাওয়া উচিত।কিন্তু নরেন্দ্র মোদি যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন, তা নিয়ে ভারতের অনেক মানুষই গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সময় তিনি যেসব কাজ করেছিলেন, সে কারণে। এক হাজারের বেশি মুসলিম ওই দাঙ্গায় নিহত হন।

    প্রহ্লাদ মোদি অবশ্য এই উদ্বেগকে নাটক বলে উড়িয়ে দিলেন। তিনি বললেন, তার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এটা বিরোধীদের সাজানো নাটক। তার মতে, ভারতের মুসলিমদের নরেন্দ্র মোদিকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।তিনি বলেন, তাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। নরেন্দ্র ভাই যখন ছোট ছিলেন, তখন তিনি গুজরাটে মুসলিমদের সঙ্গে এক সাথে খেলতেন।

    বিরাট মানুষ
    উত্তর গুজরাটের ছোট্ট শহর ভাডনগরের যে বাড়িতে নরেন্দ্র মোদি এবং তার ভাইরা বেড়ে উঠেছেন, সেটি অনেক আগেই ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। সেখান তৈরি হয়েছে নতুন বাড়ি। তবে মোদি পরিবারের কেউ এখানে থাকেন না, তারা ছড়িয়ে গেছেন বিভিন্ন জায়গায়।কিশোর বয়সেই নরেন্দ্র মোদি বাড়ি ছাড়েন। হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘে যোগ দেন তিনি।তবে মোদি ভাইদের ছেলেবেলার প্রতিবেশী এবং বন্ধুরা এখনো এই শহরেই থাকেন।
    নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন এ নিয়ে গর্বিত ভাডনগরের মানুষ ভারতের নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগে থেকেই এখানে উৎসবের প্রস্তুতি চলছে।এখানে সবাই মোদির জন্য ভোট দিয়েছেন’, বললেন দশরথাল মোদি। যে বাড়িতে ১৯৫০ সালে নরেন্দ্র মোদির জন্ম, সেখান থেকে কয়েকটা বাড়ি পরেই থাকেন তিনি।

    রাস্তার মোড়ে একটা হিন্দু মন্দির। তার সামনে গরু চড়ছে। এলাকার অনেক মানুষ স্মৃতিচারণ করছিলেন ছোট বেলায় নরেন্দ্র মোদি কিভাবে গর্ব করে বলতেন, একদিন তিনি এক বিরাট মানুষ হবেন।যে সময়ের কথা তারা বলছেন, সেটা ১৯৬০ এর দশকের কথা। তখন বড় বড় শহরেও খুব অল্প মানুষেরই নিজের গাড়ি ছিল।কিন্তু ভাডনগরের সব মানুষই যে নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে খুশি, তা নয়।ছোটবেলায় এই শহরের রেলওয়ে স্টেশনেই তার বাবাকে চা বিক্রির কাজে সাহায্য করতেন নরেন্দ্র মোদি।সেই স্টেশনেই কথা হচ্ছিল স্থানীয় কিছু মানুষের সঙ্গে। নরেন্দ্র মোদি এই এলাকার জন্য কিছুই করেননি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন তারা।তিনি এখানকার সব কিছু নিয়ে বড় বড় ব্যবসায়ীদের দিয়ে দিয়েছেন’, চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে অভিযোগ করলেন একজন কৃষক।
    নরেন্দ্র মোদি দশ বছরের বেশি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এই দশ বছরেএখানে কয়েকটা রাস্তা আর বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া ছাড়া আর কিছুই করেননি তিনি।ভারতীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে রাজনীতিকরা তাদের নিজের পরিবার আর নিজেরলোকজনকে সবার আগে দেখবেন, এটাই আশা করা হয়। স্থানীয়দের এসব কথাবার্তায়সেটারই প্রতিধ্বনি শোনা গেল।তবে নরেন্দ্র মোদি অঙ্গীকার করেছেন যে, তিনি এই প্রথা ভাঙতে চান। তারছোট ভাই প্রহ্লাদ মোদির ধারণা, প্রধানমন্ত্রী হলেও তার ভাই বদলাবেন না।
    আমার পরিবারের পরের প্রজন্মকে তিনি সাহায্য করবেন, এটা আমার একটা আশা।কিন্তু আমি নিশ্চিতভাবেই জানি, তিনি সেটা করবেন না বললেন তিনি।

    তিনি বলেন, কোনো কারণ ছাড়া তিনি তার পরিবারকে এককাপ চা পর্যন্ত খাওয়াবেন না।