নবীনন্দিনী ফাতিমার অলৌকিক ঘটনাঃপোপ ফ্রান্সিসের স্বীকৃতি

    0
    367

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২মার্চঃক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস পর্তুগালের ফাতিমা শহরের অলৌকিক ঘটনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। পোপ এ সংক্রান্ত এক ডিক্রিতে সই করেছেন বলে মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমস খবর দিয়েছে। ১০০ বছর আগে ১৯১৭ সালের মে মাসে পর্তুগালের ‘ফাতিমা’ নামক শহরে এক অলৌকিক ঘটনা ঘটে।

    এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর বা অলৌকিক ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম। অনেক মুসলিম গবেষক মনে করেন, সেদিন তিনটি সৌভাগ্যবান শিশু যে মহিয়সী নারীকে তাসবিহ হাতে দেখেছিল তিনি হলেন নবীনন্দিনী হজরত ফাতিমা (সা.)। তবে খ্রিস্টানরা মনে করেন, সেই নারী ছিলেন মেরি বা হজরত মারিয়াম (সা.)।

    সেদিনের ঘটনাটি ছিল এরকম- ১৯১৭ সালের ১৩ মে তিনটি ভাগ্যবান শিশু (দুই বালিকা ও এক বালক) তাসবিহ হাতে এক নারীর আলোকোজ্জ্বল অবয়ব বা জলজ্যান্ত কাঠামো দেখতে পায়। তাদের ভাষায় সেই নুরানী অবয়বটি ছিল ” সূর্যের চেয়েও বেশি উজ্জ্বল ও  সর্বোচ্চ মাত্রায় জ্বলজ্বল পানিতে ভরা কাঁচের বা স্ফটিকের বলের চেয়েও বেশী স্বচ্ছ ও শক্তিশালী আলো বিকিরণকারী এবং আলাদা হয়েছিল সূর্যের আলোর মাধ্যমে”! সেই অবয়ব তাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং তাদেরকে বিশেষ দোয়া শিখিয়ে দিয়েছিলেন। সেই দোয়ার বরকতে অসুস্থ ব্যক্তিরা আরোগ্য লাভ করেছিল। সেই মহীয়সী নারী ওই শিশুদের কাছে প্রতি মাসে একবার করে আরো ৫ বার দেখা দিয়েছিলেন বলে বর্ণনা করা হয়। (তিনি ১৯১৬ সালেও ওই শিশুদের কাছে একবার দেখা দিয়েছিলেন বলে বর্ণনা রয়েছে)।

    বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, ওই ঘটনা জানতে পেরে স্থানীয় ক্যাথলিক চার্চ বা গির্জার কর্তৃপক্ষ এই তিন শিশুকে শিগগিরই গ্রেফতার করে এবং তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুর হুমকি দেয়। পরে তাদেরকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল বলে বর্ণনা রয়েছে, যদিও ঠিক সেই শিশুদেরকেই মুক্তি দেয়া হয়েছিল কিনা তা স্পষ্ট নয়। তাদেরকে ঘটনার সত্যতার ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল বলে বর্ণনা রয়েছে। ফলে তাদের অনুরোধে সেই মহীয়সী নারী নুরানী বা আলোকময় অবয়ব নিয়ে আবারও হাজির হয়েছিলেন বলে বর্ণনা এসেছে। প্রায় সত্তুর হাজার মানুষ সেই অলৌকিক উপস্থিতি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছিল। ততকালীন পত্র-পত্রিকায় এ সংক্রান্ত সচিত্র খবর প্রকাশিত হয়েছিল।

    সেই থেকে আজ পর্যন্ত প্রতি বছর এই বিশেষ দিনে ফাতিমা শহরে একটি বিশেষ মেলা বসে। সেখানে নানা জাতি ও ধর্মের হাজার হাজার মানুষ ও রোগী তাদের সমস্যা সমাধানের আশায় সমবেত হন। তারা তাসবিহ পাঠ করেন এবং হাঁটু গেঁড়ে ওই ঐতিহাসিক ঘটনার নিদর্শন স্থল বা স্মৃতি-চিহ্নের কাছে যান।এ অঞ্চলে একটি বড় হোটেলের নামও ফাতিমা। সেই মহীয়সী নারীর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য লাভকারী ওই তিন শিশুর নাম ছিল লুসিয়া সান্তোস, জ্যাসিন্টা ও ফ্রান্সিসকো মার্টোইন। তাদের দুই জন কিছুকাল পর মারা যায়। লুসিয়া সান্তোস ২০০৫ সাল পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। পর্তুগালের সরকারি পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, প্রতি বছর ৫৩ লাখ মানুষ ওই স্থানটি পরিদর্শন করেন।

    কোনো কোনো মুসলিম গবেষক মনে করেন, ওই মহিয়সী নারী ছিলেন হজরত ফাতিমা (সা. আ.)। কারণ অলৌকিক ঘটনাটি ঘটার আগে থেকেই ওই শহরের নাম ছিল ফাতিমা। এই শহরটির প্রতিষ্ঠাতা ছিল প্রাচীন মুসলিম স্পেন বা ইবেরিয়ার মুসলিম শাসকরা। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম)’র কন্যা হওয়ার কারণে ফাতিমা নামটি মুসলিম বিশ্বে খুবই জনপ্রিয় ও সম্মানিত। “ফাতিমা আজ জাহরা” (সালামুল্লাহি আলাইহা)’র জাহরা শব্দটির অর্থ “সর্বোচ্চ আলোকময়”।

    নবী-নন্দিনী হযরত ফাতিমা (সা.) ছিলেন তাসবিহর অধিকারী হিসেবে সব মুসলমানদের কাছে পরিচিত। তিনি তাসবিহ বানিয়েছিলেন মাটি দিয়ে। বিশ্বনবী (সা.) তাঁকে আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনটি তাসবিহ বা আল্লাহর প্রশংসাসূচক বাক্য শিখিয়েছিলেন যা মুসলমানরা আজো প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তাহলিল বা পাঠ করে থাকেন। (৩৩ বার সুবাহান আল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ও ৩৪ বার আল্লাহু আকবর) এভাবে তাসবিহ পাঠ করাকে ‘হজরত ফাতিমা জাহরার তাসবিহ’ হিসেবে পরিচিত।

    তাই এ সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি যে ১৯১৭ সালে পর্তুগালের ফাতিমা শহরের একটি এলাকায় যে তিন শিশু বিশেষ আলোকোজ্জ্বল অবয়ব দেখেছিল তা ছিল বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র কন্যা খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতিমা (সা.)’র নুরানী বা আধ্যাত্মিক উপস্থিতি এবং তিনি রহস্যময় গোপন বাণীতে সম্ভবত ইউরোপীয়দের সবাই এক সময় মুসলমান হয়ে যাবে বা এই মহাদেশ মুসলিম-প্রধান মহাদেশে পরিণত হবে  বলেই  ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। এই অলৌকিক ঘটনা নিয়ে পাশ্চাত্যে ও ইরানে আলাদাভাবে প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে।বিবিসি