নবীগঞ্জ কলেজে দু’গ্রুপ ছাত্রদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষ আহত-১০

    0
    206

    “বহিরাগতদের উৎপাত, শিক্ষকদের উদাসীহিনতায় বেড়েই চলছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ” 

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৮সেপ্টেম্বর,মতিউর রহমান মুন্নাঃ নবীগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে একাদশ শ্রেণীর দু’গ্রুপ ছাত্রদের মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অন্তত পক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। এরমধ্যে সংর্ঘষ চলাকালে বহিরাগতরা যোগ দিলে কলেজে রনক্ষেত্রে পরিনত হয়। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। সম্প্রতি নবীগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে বহিরাগতদের উৎপাত ও শিক্ষকদের নীরব ভূমিকায় একের পর এক সংঘর্ষ বেড়েই চলেছে। প্রায়ই নানা ইস্যু নিয়ে বহিরাগত ও ছাত্রদের মধ্যে দাঙ্গা হাঙ্গামাসহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ ধারণ করে । যার ফলে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে সুনাম অর্জনকারী এই কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বহিরাগত ছেলেদের নিয়ে সংঘর্ষ বাঁধছে প্রতিনিয়ত। রাজনৈতিক দাঙ্গা কম হলেও গ্রুপিং সংঘর্ষ নষ্ট করে দিচ্ছে কলেজের সুনাম ও শিক্ষার পরিবেশ। যার কারণে অনেক শিক্ষার্থী নবীগঞ্জ ছেড়ে বাহিরের বিভিন্ন কলেজে শিক্ষা গ্রহন করতে যেতে হচ্ছে। এছাড়া ওই সব কারনে কলেজে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে।

    নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজে অধ্যায়নরত এক ছাত্রী এ প্রতিবেদককে জানায়, ঘনঘন সংঘর্ষ বেধে যাওয়ার কারণে কলেজে থাকাকালীন অবস্থায় তাদের মধ্যে আতংঙ্ক বিরাজ করে। তাই একদিন কলেজে গেলে সংঘর্ষের ভয়ে আরেক দিন যেতে মন চায়না। কলেজে প্রতিদিনই বহিরাগত ছেলেরা এসে আমাদেরকে ডির্স্টাব করে। কিন্তু স্যাররা কিছুই করেন না।

    অবিভাবকরা মনে করেন, কলেজের অধ্যক্ষসহ অন্যান্য শিক্ষকরা নীরব ভূমিকা রাখেন বলে এই সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। সংঘর্ষ বৃদ্বি পাওয়ার কারণে তারা তাদের ছেলে মেয়েদের নিয়মিত কলেজে পাঠাতে চরম দুশ্চিন্তায় ভোগছেন। কলেজের সুনাম ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায় দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি সাধারণ শিক্ষার্থী ও অবিভাবকদের। তাছাড়া কলেজের কতিপয় ছাত্রদের সহযোগীতায় বহিরাগত ছেলেরা প্রায়ই কলেজে গিয়ে মেয়েদের বিভিন্ন ভাবে  হয়রানী ও উত্তোক্ত করে। সাধারন ছাত্ররা প্রতিবাদ করলেও শিক্ষক সহ কর্তৃপক্ষ নীরব ভুমিকা পালন করায় এ সব সমস্যা প্রকর আধার ধারন করে! কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম হোসেন আজাদের এমন উদাসীহিনতার কারনে কলেজে ওই সব কার্যকলাপ হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

    গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঘোলডুবা থেকে সিএনজি যোগে ৫ ছাত্রী কলেজে আসার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে বহিরাগতদের নিয়ে কতিপয় ছাত্রনেতা কলেজের এক ছাত্রকে মারধর করে কিন্তু তার কোন সঠিক বিচার করেননি অধ্যক্ষ গোলাম আজাদ। এ ঘটনায় কলেজ উত্তোপ্ত হয়ে উঠে। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই একাদশ শ্রেণীর দুই গ্রুপ ছাত্রদের মধ্যে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চলে দাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।

    ছাত্রদের সাথে আলাপ করে জানাযায়,  গত কয়েক দিন ধরে তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে একাদশ শ্রেণীর কিছু ছাত্র দুই গ্রুপ হয়ে যায়। এর মধ্যে এক গ্রুপের রয়েছে কাজিরবাজারের বিবিয়ানা ছাত্র কল্যান পরিষদের নেতৃবৃন্দ ওপর গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছে কলেজের আশপাশ গ্রামের স্থানীয় ছাত্ররা। গতকাল বিকালে পরীক্ষা শেষে বিবিয়ানা গ্রুপের রাশেম আহমেদ নামের এক ছাত্র স্থানীয় গ্রুপের ছাত্রদের সাথে চলাফেরা করতে দেখে তাকে নিষেধ করেন বিবিয়ানার ছাত্রনেতারা। এসময় রাশেমের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রাশেম তার সহপাঠি স্থানীয় গ্রুপের ছাত্রদের জানালে তাদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় বিবিয়ানা গ্রুপের ছাত্রনেতারা বহিরাগতদের খবরদিয়ে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কলেজে আসে বলে অভিযোগ রয়েছে। বহিরাগতরা কলেজে প্রবেশ করলে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করে। পরীক্ষা দিতে আসা ছাত্র-ছাত্রীরা চরম আতংকে দিকবেদিক ছুটোছুটি করতে তাকে।

    এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। এ সময় ব্যাপক ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে । এ সময় কলেজ ক্যাম্পাস এলাকা রনক্ষেত্রে পরিনত হয়ে যায়। খবর পেয়ে প্রথমে নবীগঞ্জ থানার এসআই আবুল খয়ের একদল পুলিশ নিয়ে কলেজে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাবাভিক করতে ব্যার্থ হয়। পরে থানার এসআই নূর মোহাম্মদ অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতা মুহিনুর, আজিজসহ কলেজের সিনিয়র ছাত্র নেতাদের সহযোগীতায় পরিস্থিত শান্ত করেন। এ সংঘর্ষে অন্তত ১০ ছাত্র আহত হয়। এর মধ্যে বিবিয়ানা গ্রুপের সামাউন কবির, জামিল আহমেদ এবং অপর গ্রুপের রাশেম আহমদ, শেফু মিয়াকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কলেজে প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা ছাত্র-ছাত্রী ও অভিবাবকদের মধ্যে আতংঙ্ক দেখা দিয়েছে।

    এদিকে বিবিয়ানা ছাত্র কল্যান পরিষদের ছাত্ররা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, স্থানীয় ছাত্ররা তাদের এলাকার ছাত্রদের মারধর করেছে। এ সময় সিএনজি শ্রমিকরাও তাদের এলাকার সিএনজি শ্রমিকদের সাথে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মারধর ও ইট পাটবেল নিক্ষেপ করেছে। এ ঘটনায় তারা প্রাথমিক ভাবে আগামী পরীক্ষা বর্জন করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

    এব্যাপারে নবীগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম আজাদের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে সুইচ অফ পাওয়া যায়।