নবীগঞ্জ উপজেলায় আ’লীগ প্রার্থীর ভরাডুবি নেপথ্যে

    0
    259

    নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ গত রোববার নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামীলীগের সহ’সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট আলমগীর চৌধুরীর চরম ভরাডুবি হয়েছে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক (নির্বাচনের সময় অব্যাহতি প্রাপ্ত) ফজলুল হক চৌধুরী সেলিমের কাছে।

    চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী প্রার্থী ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ৪৭ হাজার ২শ ৩০ ভোট, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী এড. আলমগীর চৌধুরী নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন, ২৬ হাজার ১শ ১৩ ভোট। ভোটের ব্যবধান হচ্ছে ২১ হাজার ১শ ১৭ ভোট। উক্ত নির্বাচনী ফলাফল এর নেপথ্যর কারন নিয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা’সহ সর্বমহলে তীব্র আলোচনা হচ্ছে।

    আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থীকে সর্মথন দেয়া নিয়ে আওয়ামীলীগের মধ্যে কোন্দল শুরু হয়। উপজেলা যুবলীগের বৃহৎ অংশ ও আওয়ামীলীগের একটি অংশ আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ফজলুল হক চৌধুরী সেলিমের পক্ষে অবস্থান নেয়। ফলে যুবলীগের বর্ধিত সভা করে ৬ ইউনিয়ন কমিটি স্থগিত করা হয়। উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক ফজলুল হক চৌধুরী সেলিমকে নির্বাচনের সময় অব্যাহতি প্রদান করে নতুন আহবায়ক করা হয় যুন্ম আহবায়ক শাহ গুল আহমদ কাজলকে এবং আওয়ামীলীগ পৃথক একটি বর্ধিত সভা করে দলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী সহ কতিপয় নেতাকে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়। ওই দুটি বর্ধিত সভায় সিন্ধান্ত হয় দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সবাই ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করবে।

    কিন্তু বাস্তবে প্রতিপক্ষরা আরো শক্ত অবস্থানে চলে যায়। আওয়ামীলীগের মধ্যে বাহিরের কোন কোন্দল প্রকাশ্যে না আসলেও ভিতরে একটি বৃহৎ অংশ দলীয় প্রার্থীর বিরোধীতা করেন। আর যুবলীগের বিদ্রোহীরা আধাজ্বল খেয়ে মাঠে নামে তাদের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে। তারা দলীয় প্রার্থীর ভুল ত্রুটি জনসম্মূখে তুলে ধরেন। তাই দলের ভোট দুই ভাগে বিভক্ত হয়।

    ফলে আওয়ামীলীগের ঘাটি হিসেবে পরিচিত নবীগঞ্জ উপজেলায় বিএনপি, জামাত’সহ নিরদলীয় ভোটারগণ আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ফজলুল হক চৌধুরী সেলিমের দিকে ঝুঁকে পড়েন। বিএনপি ও জামাত নির্বাচনে না আসায় তাদের নেতাকর্মী সর্মথক অনেকেই আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ফজলুল হক চৌধুরী সেলিমের ঘোড়াকে সর্মথন করেন।

    তাদের ক্ষোভ হলো সেলিম জিতলে আওয়ামীলীগের ভরাডুবি হবে এবং তাদের জাতীয় নির্বাচনের একটি প্রতিশোধ হবে। তাই বিরোধী বলয়ে একটি ভোট আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট আলমগীর চৌধুরী পাননি।

    এছাড়া আওয়ামীলীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন গুজব ছড়ানো হয় তিনি না কি দপ্তরী কাম নৈশ্য প্রহরী’সহ বিভিন্ন নিয়োগ বানিজ্যে জড়িত ছিলেন। এতে সাধারণ জনগনের তীব্র প্রভাব ফেলে। বিরোধী বলয়ে অপপ্রচার আর দলের একটি অংশের বিরোধীতার কারনে চরম ডুবি হয় আওয়ামীলীগ প্রার্থীর। বিএনপি জামাত বলয়ে ভোট সব একপক্ষে চলে যাওয়ার কারনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ফজলুল হক চৌধুরী সেলিমের ঘোড়াকে নিয়ে বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করেন।
    এ ব্যাপারে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামীলীগের সহ’সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট আলমগীর চৌধুরী বলেন, আমার সাথে দলের একটি বৃহৎ অংশ যুবলীগের কিছু লোক বেঈমানি করেছে। নবীগঞ্জ উপজেলা
    আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী সরাসরি তার লোকজন নিয়ে আমার ও নৌকার বিরোধীতা করেছে। দলের সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে কিছুতেই নৌকার পরাজয় হতো না। তারা জামাত বিএনপির সাথে হাত মিলিয়ে আমার বিরুদ্ধে কাজ করেছে। আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ফজলুল হক চৌধুরী সেলিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি সর্বদলীয় ভোটে জয়লাভ করলেও আমি আওয়ামীলীগ পরিবারের লোক। দলীয় রাজনীতির সাথে আছি থাকবো।

    তিনি বলেন, আমি কারো সাথে আতাত করে জয়লাভ করি নাই, জনগন ভালবেসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে তাই চলার পথে সবার সহযোগিতা চাই। নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী তার বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন আমি দলীয় প্রার্থীর বিরোধীতা করি নাই।