অগ্রণী ব্যাংকের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতঃদায় কৃষকের কাধেঁ

    0
    280

    “চিঠিপ্রাপ্ত কৃষকদের কোন ক্যাটাগরিতে ঋণ দেয়া হয়েছে এর কোন সুস্পষ্ট জবাব নেই ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছে”

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৯আগস্ট,মতিউর রহমান মুন্নাঃ নবীগঞ্জের অগ্রণী ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের খপ্পড়ে পরে লাখ লাখ টাকা ঋণের বুঝা মাথায় নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে বাউসা ইউপির কামিরাই, চানপুর, টুনাকান্দি এলাকার কয়েক শত কৃষক। সারের ভর্তুকির নামে ওই সব কৃষকের হাতে মাত্র ৫শত টাকা তুলে দিয়ে তাদের ছবি সংগ্রহ করে কতিপয় অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তা ও স্থানীয় একদল দালাল।

    কয়েক বছর পর দেখা যায় ওই কৃষকদের নামে অগ্রণী ব্যাংক থেকে তাদের নামে ২৫/৩০ হাজার টাকার ঋণের চিঠি। উক্ত চিঠি পাওয়ার পর পরই বিগত ২০১২ ইং সালের ১৭ নভেম্বর দলবদ্ধভাবে ভুক্তভোগী কৃষকরা তাদের নামে ভুয়া ঋণের বুঝা চাপিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে অগ্রণী ব্যাংকের সামনে বিক্ষোভ করে তা প্রত্যাহারের দাবীর পাশাপাশি ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান।

    এ বিষয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারী সংস্থা তদন্ত করে উক্ত ঋণ বিতরণে যথেষ্ট ঘাপলা ও অনেকের নাম ঠিকানা, ছবি এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ভুয়া পাওয়া যায় বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাযায়। অগ্রণী ব্যাংকের তৎকালীন ম্যানাজার, অসাধু অফিসার ইদ্রজিৎ দাশ, কতিপয় দালাল আবুল কালাম, আব্দুল হাই ও সুবিনয় দাশ মিলে প্রায় ২০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে। আর ওই টাকার দায় পড়েছে অসহায় কৃষকের কাধেঁ।

    ২০১২ইং সালে ভুক্তভোগী কৃষকরা বিক্ষোভ ও বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়ে ওই ভুয়া ঋণের বুঝা থেকে রেহাই পাবে মনে করে নীরব বসে থাকে। কিন্তু গত ৬ই আগষ্ট শুক্রবার সকালে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এ সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করার জন্য তাদেরকে ইউপি কার্যালয়ে ডেকে আনলে হতাশার মাত্র বেড়ে উঠে। দুদুক কার্যালয়ে থেকে ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়রুর রহমানের নিকট তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য প্রেরন করলে হাফিয়ে উঠেন কৃষকরা। অন্যের ঋনের বুঝা নিজ নিজ মাথায় নিয়ে চরম হতাশায় ভোগছেন।
    এদিকে ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুর রহমান জানান, দুদুকের প্রেরিত পত্রে ভিত্তিতে তদন্ত কালে দেখা যায়, বাউসা ইউপির কামিরাই, চান্দপুর, টুনাকান্দি, হরিধরপুর, বদরদি ও ধুলচাতল গ্রামের নাম উল্লেখ করা হলেও বেশীর ভাগ লোকের ছবি’র সাথে নামের মিল নেই। অনেকের ঠিকানা ও কাগজপত্র ভুয়া রয়েছে।
    স্থানীয় ইউপি কার্যালয়ে তদন্তকালে ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, ২০০৭ সালে উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের কামিরাই গ্রামের আব্দুস ছুবানের পুত্র আবুল কালাম, আব্দুল হাই, মুরাদপুর গ্রামের সুবিনয় দাশ, বক্তারপুর গ্রামের কামরুল মিয়া ও অগ্রণী ব্যাংকের অফিসার ইন্দ্রজিৎ দাশ মিলে ওই এলাকার প্রায় ৮০ জন কৃষকের ছবি সংগ্রহ করে।

    তারা কৃষকদেরকে জানায় সরকার সারের ভর্তুকী হিসেবে ৫শত টাকা করে তাদের দিয়েছে তা আনতে ব্যাংকে আসতে হবে। তাদের কথা বিশ^াস করে কেউ কেউ ব্যাংকে, কেউ দালালদের বাড়িতে আসলে কাগজে স্বাক্ষর রেখে তাদেরকে ৫শত টাকা করে দেয়া হয়। ২০১২ইং সালে অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই সব অসহায় কৃষকদের নামে ২৫/৩০ হাজার টাকার শস্য লোনের তাগিদ পত্র দেয়া হলে তারা হতবাক হয়ে পড়েন।

    ক্ষুদ্ধ কৃষকরা ব্যাংকে যাচাই করতে আসলে জানতে পারেন তাদের দস্তখত দেয়া কাগজের বিপরীতে দালাল চক্র ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সাথে যোগসাজসে তাদের নামে ২০০৭/২০০৬/২০০৮ সালের বিভিন্ন তারিখে ২৫/৩০ হাজার টাকা করে ঋণ উত্তোলন করেছে।
    কৃষকরা বলেন, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কিভাবে আমাদের নামে ঋণ দিলেন তা আমাদের জানা নেই। এমনকি এসব টাকা চোখেঁও দেখেননি তারা। এছাড়া একই ব্যক্তির নামে একাধিক ঋণ দেখানো হয়েছে। ফলে কৃষকরা চরম বিপাকে পড়েছেন।

    ভুক্তভোগীরা আরো জানান, স্থানীয় দালালদের সহযোগীতায় ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তারা তাদের নামে ঋণ উত্তোলন করে প্রায় ২০ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন। যার দায়ভার কৃষকদের কাধেঁ চাপানোর অপচেষ্টা চলছে। বিক্ষুদ্ধ কৃষকরা এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
    বাউসা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার সাইফুর রহমান বলেন, অসহায় কৃষকদের মাথার উপর চাপিয়ে ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তারা প্রায় ২০ লাখ টাকা আত্বসাত করার ষড়যন্ত্র করছে। গ্রামের কৃষকরা ব্যাংক থেকে কোন ঋণ নেয়নি। এ ঘটনায় উপজেলার সর্বত্র আলোচনার ঝড় বইছে। অভিযোগ রয়েছে যাদের নামে ঋণের বুঝা চাপানো হয়েছে তারা কেউ কখনও অগ্রণী ব্যাংকে যাননি। বেশীর ভাগ লোকই ভুমিহীন।

    ব্যাংকের কর্মকর্তা ইদ্রজিৎ দাশ ও স্থাণীয় দালাল আবুল কালাম অসহায় কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সারের ভর্তুকি হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে ৫শশ টাকা করে বরাদ্ধের কথা জানায়। এক পর্যায়ে তারা ৫শশ টাকা কৃষকদের হাতে দিয়ে সাদা কাগজে টিপসই আনেন। বছর তিনেক পরে দেখা যায় ওই সব কৃষকদের নামে ব্যাংক ঋণ পরিশোধের তাগিদ পত্র। চিঠিপ্রাপ্ত কৃষকদের কোন ক্যাটাগরিতে ঋণ দেয়া হয়েছে এর কোন সুস্পষ্ট জবাব নেই ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছে।
    ভুক্তভোগী হামদু মিয়া, তছর উদ্দিন, মহিবুর রহমান ও কামরুজ্জামানসহ অনেকেই জানিয়েছেন, তারা ব্যাংক থেকে কোন ধরনের ঋণ উত্তোলন করেন নি। তাদের নিজস্ব কোন জমিও নেই। কখনও ব্যাংকে আসেন নি। তারপরও তাদের নামে কি ভাবে এতগুলো টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা হলো। তাদের দাবী তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হউক।

    প্রেরক
    মতিউর রহমান মুন্না
    নবীগঞ্জ(হবিগঞ্জ)প্রতিনিধি
    মোবাইল ঃ-০১৭১১-৯৬৫৬১১২