নবীগঞ্জে রাজাকার গ্রেফতারের দাবীতে সাংবাদিক সম্মেলন 

    0
    208

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০১সেপ্টেম্বরঃ  নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের জন্তরী গ্রামে মুক্তিযোদ্বা সন্তান গোপাল সরকারকে কেরোসিন দিয়ে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় রাজাকার নজাফত মিয়াকে অভিলম্বে গ্রেফতারের দাবীতে গতকাল সোমবার বিকালে নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন নবীগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্বা সন্তান কমান্ড।
    গোপাল সরকারের ভাই মামলার বাদী রাখাল সরকার তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, বিগত ১৭ বছর পুর্বে আমার বাবা স্বগীয় গৌরাঙ্গ সরকার যখন মারা যান তখন রাজাকার নজাফত মিয়ার হুমকির মুখে শ্বশান ঘাটে দাহ করতে না পেরে বাড়ীতে দাহ করতে বাধ্য হই। অনুরুপ ভাবে বিগত ৪ বছর পুর্বে আমার ঠাকুর মা মারা গেলে নজাফতের হুমকির মুখে দাহ করতে পারিনি। সারা দিন অনুরুধ করার পর শুধু মাত্র মাটিতে ফুতে রাখার অনুমতি দেয়।
    এর পর থেকে আমাদের শ্বশানের জায়গা দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠে রাজাকার নজাফত মিয়া। সে এই শ্বশান ব্যবহার না করার জন্য অনেক দিন বাধা, আপত্তি করে আমাদের নিরিহ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের। এক পর্যায়ে দাফট দেখিয়ে শ্বশানের জায়গা জবর দখল করে ফেলে নজাফত মিয়া। কিন্তু তার ভয়ে আমরা কেউ কথা বলতে সাহস পায়নি। পরে নজাফতের নিকট থেকে শ্বশানের জায়গা উদ্ধারের জন্য আমার ভাই গোপাল সরকার জেলা প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর আবেদন করেন।

    আবেদনের প্রেক্ষিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) স্থানীয় তহশীলদারের স্বারক নং- ৫৮ ধারায় ১১/০৬/১৫ই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে গোপালের পরিবারসহ স্থানীয় হিন্দু সম্পদায়ের মানুষদের এই জায়গাটি শ্বশান হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি দেন। এরপরই রাজাকার নজাফত ক্ষিপ্ত হয়ে উটে আমার ভাই গোপালের উপর। এক পর্যায়ে গত ২১ আগষ্ট শুত্রবার রাত প্রায় ৮টার দিকে নজাপত ও তার লোকজন নবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের নিকটস্থ রুহুল মিয়ার দোকানের সামনে আমার ভাই গোপাল সরকার কে ডেকে নিয়ে আসে এবং নজাফত গোপালকে হুমকি দামকি দিয়ে বলে এই শ্বাশানটি তোমরা আর ব্যবহার করবেনা এবং শ্বশানের এই জায়গাটি তোমাদের প্রয়োজন নেই মর্মে একটি লিখিত দিতে হবে।

    এতে গোপাল রাজি না হওয়ায় তাকে লাথি, কিল, ঘুষিসহ হাতুরে মারপিট করে এবং গোপালকে ওই শ্বশানেই হত্যা করিবে বলেও হুমকি দিয়ে তাকে রাস্তায় ফেলে চলে যায়। ওই দিনই রাত অনুমান ১২টার দিকে আমাদের বাড়িতে গিয়ে আমার ভাই গোপালকে দেশীয় প্রাণ নাশক অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে গোপালের রুমে ডুকে প্রাণে হত্যার উদ্যোশ্যে মারপিট করে।

    এক পর্যায়ে নজাফতের ছেলে খালেদ মিয়া তার হাতে থাকা কেরোসিনের ড্রাম থেকে কেরোসিন গোপালের শরীরে ডেলে দিয়ে আগুন ধরিয়ে গোপালের শরীরে আগুন লাগিয়ে ঝলসে দেয়। আগুনে গোপালের দুই হাতসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে ঝলসে যায়। আশংকাজনক অবস্থায় আমার ভাইকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি।

    এ ঘটনায় আমি রাখাল সরকার বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় রাাজাকার নজাফতকে প্রধান আসামী করে ও তার দু’পুত্র খালেদ, জুনেদ ও এনামুল মিয়া, মছরত উল্লাহ, শহীদ মিয়াসহ ১৪/১৫জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে মামলা করি। কিন্তু থানা পুলিশ অজ্ঞাত কারনে আজ ৪দিন অতিবাহিত হলে ও পুলিশ কোন আসামীকে গ্রেফতার করেনি। আসামীরা প্রকাশ্যে বাজারে চলাফেরা করলে ও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা পুলিশ। এ সময় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্বা সংসদ সন্তান কমান্ড নবীগঞ্জ উপজেলার আহবায়ক ও উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম লিখিত বক্তব্যে বলেন, আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে যদি রাজাকার নজাফত ও তার অনুসারীদের গ্রেফতার করা না হয় তাহলে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব।

    আমাদের সাথে ইতিমধ্যেই গনজাগরন মে র মুখ্যপাত্র ডাঃ ইমরান এইচ সরকার’র সাথে যোগাযোগ হয়েছে। তিনি আমাদেরকে রাজাকার আলবদরদের বিরুদ্বে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানিয়েছেন। প্রয়োজনে তিনি নবীগঞ্জে এসে আমাদের সাথে আন্দোলন সংগ্রামে সহযোগীতা করবেন বলে আশ্বস্থ করেন। ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম আরো বলেন, রাজাকার নজাফত ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্বকালে অসংখ্য হিন্দু বাড়ীঘর লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে ও স্বাধীনতা পরবর্তীকালে প্রচুর ভু-সম্পত্তি জবর দখল করে আজঅবদি বহাল তবিয়তে আছে। মুক্তিযোদ্বা সন্তান গোপালকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় আজ পর্যন্ত স্থানীয় পর্যায়ের কোন জনপ্রতিনিধি ওই পরিবারকে শান্তনা দেয়া কিংবা সহযোগীতা করতে যাননি।

    নবীগঞ্জের সিভিল প্রশাসন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মোঃ আনোয়ার হোসেন, উপজেলা মুক্তিযোদ্বা কমান্ডার নুর উদ্দিন আহমদ বীর প্রতিক, ডেপুটি কমান্ডার মৌলদ হোসেন কাজল, উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক সুখেন্দু রায় বাবুল, হিন্দু মহাজোটের সাধারন সম্পাদক প্রভাষক উত্তম কুমার পাল হিমেল এবং নবীগঞ্জের সাংবাদিক বন্ধুগন তাদের লেখনির মাধ্যমে যে সহযোগীতা করেছেন আমরা তাদের কৃতজ্ঞতা জানাই।

    উক্ত সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা সন্তান কমান্ডের যুগ্ম আহবায়ক গৌতুম কুমার দাশ, সদস্য সচিব রতœদীপ দাস রাজু, সদস্য মৃনাল কান্তি দাশ, আক্তারুজ্জামান কমল, নিজামুল ইসলাম চৌধুরী, অরবিন্দু দাশ, সুবিনয় দাশ, বিপুল দাশ, দিপক সরকার প্রমুখ।