নবীগঞ্জে বেলাল হত্যাকান্ডের পিছনের কথাঃখুনিদের গ্রেফতার দাবী

    0
    175

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,৩০এপ্রিলঃ নবীগঞ্জে সন্ত্রাসীদের হাতে সিএনজি শ্রমিক বেলাল মিয়া হত্যা কান্ডের ঘটনায় ২৮ জনের নাম উল্লেখ্য করে অজ্ঞাতনামা আরো ৭/৮ জনের বিরুদ্ধে নবীগঞ্জ থানায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে মামলা দায়ের করেন নিহতের পিতা ও সংবাদপত্র এজেন্ট মোশাহিদ আলীর বড় ভাই ফারুক মিয়া। তিনি পুত্র শোকে অসুস্থ থাকায় লিটন মিয়া নামের এক আত্মীয়ের মাধ্যমে রাত সাড়ে ১০ টার দিকে মামলাটি থানায় পৌছান বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাগেছে।

    গত রবিবার বিকালে শহরের শেরপুর রোডস্থ মা-হোটেলের সামনে দাড়ানো অবস্থায় প্রতিপক্ষ রায়েছ চৌধুরী ও সামছু মিয়া’র নেতৃত্বে একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী সিএনজি শ্রমিক বেলাল মিয়া কুপিঁয়ে রক্তাক্ত জখম করে। মূমুর্ষ অবস্থায় তাকে প্রথমে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে প্রচুর রক্তকরণ হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দ্রুত সিলেট নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে স্বজনরা সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে বেলাল মিয়ার মৃত্যু ঘটে। নিহত বেলাল মিয়া পৌর শহরের নোয়াপাড়া গ্রামের সাবেক পত্রিকার হকার ও সিএনজি ম্যানাজার ফারুক মিয়ার ছেলে এবং পত্রিকার এজেন্ট মোশাহিদ আলী ও মিয়া ধন মিয়ার ভাতিজা। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়ন কপিন নিয়ে শহরে মৌন মিছিল ও শোক র‌্যালী বের করে। সোমবার বিকালে জানাযার নামাজ শেষে তাকে নোয়াপাড়াস্থ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তার জানাযার নামাজে সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক, সামাজিক ব্যক্তিবর্গ, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীসহ কয়েক হাজার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ গ্রহন করেন। এদিকে প্রকাশ্যে দিবালোকে শ্রমিক বেলাল মিয়ার হত্যাকারীরা রয়েছে ধরাছুয়ার বাহিরে। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। বেলাল হত্যাকান্ডের বিচারের দাবী জানিয়েছেন নোয়াপাড়া গ্রামবাসী ও সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়ন।

    বেলাল হত্যাকান্ডের পিছনের ঘটনাঃনবীগঞ্জ-আইনগাঁও সড়কে সিএনজি (অটো রিক্সা) চলাচল পরিচালনার জন্য প্রায় আউশকান্দি মালিক সমিতি আড়াই বছর আগে ম্যানাজার হিসেবে মাইজগাওঁ এলাকার মুনসুর মিয়া, নোয়াপাড়া গ্রামের ফারুক মিয়া, দুলাল মিয়াসহ ৪ জনকে দায়িত্ব প্রদান করেন। ওই সড়কে প্রচুর সিএনজি চলাচল করায় ম্যানাজারগণ আর্থিক ভাবে লাভজনক হওয়ায় লোভ আসে একই গ্রামের মৃত আব্দুল হেকিমের ছেলে সামছু মিয়াগংদের। তাদের সাথে যোগ করেন খনকারীপাড়া গ্রামের ছাত্রনেতা রায়েছ চৌধুরীসহ আরো অনেককে। প্রায় বছর খানেক ধরে তারা দলবদ্ধ ভাবে ওই ষ্ট্যান্ডের ম্যানাজারি আনার জন্য আউশকান্দি মালিক সমিতির নিকট ধর্ণা দেয়। এতে কোন ফল না পেয়ে চলাচলরত সিএনজি গাড়ী গুলোকে তাদের বরাকনগরস্থ বাসার সামনে এবং বিভিন্ন রাস্তায় ব্যরিকেট দিয়ে প্রতিবন্ধিকতা সৃষ্টি করে আসছিল। এনিয়ে ২০১৩ইং সালে সামছু মিয়ার ভাই ভুট্রো মিয়া এবং আফাজ উদ্দিন আফাই বাদী হয়ে পৃথক দু’টি মামলা করে ম্যানাজার ফারুকসহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে। এনিয়ে একাধিকবার শালিস বৈঠকও হয়েছে। শালিস বৈঠকের সিদ্ধান্ত বার বার অমান্য করার অভিযোগ রয়েছে সামছু ও রায়েছগংদের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ গত ১৫ মার্চ শালিস বৈঠক হয় নবীগঞ্জ ওসমানী রোডস্থ মিনি বাস মালিক সমিতির অফিসে। ওই শালিসে সিদ্ধান্ত হয় সামছু মিয়া গংদের মামলা আদালত থেকে প্রত্যাহার সাপেক্ষে সপ্তাহে দু’ দিন তারা ম্যানাজারি করবে। এবং বাকী ৫ দিন ফারুক মিয়া গংরা ম্যানাজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ওই সিদ্ধান্ত মোতাবেক সামছু মিয়া ও রায়েছ গংরা কয়েক’ দিন দায়িত্বও পালন করেন। কিন্তু মামলা প্রত্যাহার করবেন করবেন বলে সময় ক্ষেপন করে মামলা গুলো প্রত্যাহার করেন নি। এক পর্যায়ে বিচারের শালিস গণকে জানিয়ে গত ১২ এপ্রিল ম্যানাজার মুনসুর, ফারুক ও দুলালগংরা সামছু মিয়াগংদের আর ম্যানাজারি করতে না দেয়ায় বিরোধের সুত্রপাত হয়। স্থানীয় সুত্রে জানায়, এরপর থেকেই সামছু মিয়া ও রায়েছ চৌধুরীগংরা বেপরোয়া হয়ে ওই সড়কে চলাচলরত যাত্রীবাহি সিএনজি গাড়ী গুলোকে রাস্তায় ব্যরিকেট সৃষ্টি করে আটক করে। গত ২৫ এপ্রিল দুপুরে ষ্ট্যান্ডে খবর আসে সামছু ও রায়েছ গংরা বরাকনগরস্থ বাসার সামনে একটি যাত্রীবাহি সিএনজি আটক করেছে। খবর পেয়ে ষ্ট্যান্ডের শ্রমিকরা ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে এবং সামছুর লাকড়ীর ঘরে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এই অগ্নি কান্ড নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় সামছু মিয়ার ভাই লিংকন, ফারুক মিয়ার বড় ছেলে হেলাল মিয়া এবং ছোট ছেলে বেলাল মিয়া (নিহত)সহ কয়েক জন আহত হয়। এদের মধ্যে লিংকন এবং হেলালকে সিলেট ওসামনী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় উভয় পক্ষই নবীগঞ্জ থানায় পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেন। শনিবার রাতেই সামছু মিয়াগংদের পক্ষের মামলা এফআইআর হিসেবে গণ্য হয়। ওই মামলায় নিহত বেলাল মিয়াও আসামী ছিল। বড় ভাই হেলালকে দেখে সিলেট থেকে রবিবার দুপুরে বেলাল মিয়া পরিবারের লোকদের নিয়ে বাড়ি ফিরে। বিকাল প্রায় ৫টার দিকে গাড়ী ভাড়া এবং সিলেটে অবস্থানরত পিতা ফারুক মিয়াকে বিকাশে টাকা পাঠানোর জন্য শহরের শেরপুররোডস্থ মা-হোটেলের সামনে আসে। এ সময় শ্রমিক ও পুলিশের সংর্ঘষ দেখে রাস্তার এক পাশে দাড়িয়ে থাকে। এ সময় প্রতিপক্ষের লোকজন ধারালো অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে দিবালোকে তাকে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে বিক্ষোভ শ্রমিকরা ছুটে এসে তাকে মুমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতাল এবং কেউ কেউ সামছু মিয়াকে পেয়ে মারধোর করে বলে প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানাগেছে। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার দিন ব্যাপী শ্রমিকদের হামলায় আহত সামছু মিয়া মারা গেছেন এমন সংবাদ জানার জন্য এ প্রতিনিধির কাছে অনেকেই ফোনে জানতে চায়। খোজঁ নিয়ে জানাযায় একটি চক্র সামছু মিয়া মারা গেছে মর্মে বিভিন্ন গুজব ছড়াচ্ছে। অপর দিকে নিহত বেলালের পিতা ফারুক মিয়া গতরাতে সামছু মিয়া ১নং ও রায়েছ চৌধুরীকে ২নং আসামী করে ২৯ জনের নাম উল্লেখ্য করে এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৭/৮ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সুত্র থেকে নিশ্চিত করেছে। এলাকাবাসী এবং সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়ন অনতিবিলম্বে বেলাল মিয়া হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও ফাসি দাবী করেছেন।