নবীগঞ্জে প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই অগ্রীম সিদ্ধান্ত !

    0
    223

    নূরুজ্জামান ফারুকী নবীগঞ্জ থেকে:  নবীগঞ্জে কাজ শুরু করার আগেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামতের বরাদ্ধকৃত প্রকল্প অর্থের ৫০% অগ্রীম দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও শিক্ষা কমিটির সভাপতি মোঃ ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম। যদিও বরাদ্ধকৃত পত্রে উল্লেখ রয়েছে অগ্রীম টাকা দেয়ার কোন বিধি বিধান নাই সে ক্ষেত্রে এমন সিদ্ধান্তের খবরে সর্বত্র তোলপাড় চলছে।

    উপজেলা চেয়ারম্যানের স্ত্রী গঞ্জা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহিনুর আক্তার চৌধুরী পান্না সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক আইডিতে গত (২৪ জুন) উপজেলা চেয়ারম্যান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র প্রকল্পের টাকা ৫০% অগ্রিম উত্তোলনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। উক্ত স্ট্যাটাস সামাজিক মাধ্যম ভাইরাল হলে সর্বমহলে আলোচনার ঝড় উঠে।

    খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯/২০২০ অর্থ বছরে প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে ক্ষুদ্র মেরামত প্রকল্প কাজের সারাদেশের ন্যায় নবীগঞ্জে প্রায় ৮০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোটি টাকার বরাদ্দ আসে। কয়েকটি স্কুল দায়সাড়া কাজ করলেও অধিকাংশ বিদ্যালয় এখন ও মেরামত কাজ শুরু করে নাই। দেশের বর্তমান করোনা মহামারী অজুহাত দেখিয়ে  শিক্ষা কমিটির সভাপতি ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম  ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুল আলম সরকারী নীতিমালাকে উপেক্ষা করে  উভয়ে যোগসাজসে অগ্রীম ৫০% টাকার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন।

    এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদে গত ২১ই জুন রবিবার উপজেলা পরিষদে শিক্ষা কমিটির সকল সদস্যকে নিয়ে সভায় বসেন। ওই সভায় শিক্ষা কমিটির সভাপতি ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম মেরামতের কাজের সকলের উপস্থিতিতে ৫০% টাকা অগ্রীম প্রদানের প্রস্তাব দিলে উপজেলা নিবার্হী অফিসার বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন বরাদ্ধকৃত অর্থের নীতিমালায় এমন বিষয় উল্লেখ নাই বলে আপত্তি করেন। অগ্রিম টাকা উত্তোলনের খবরে উপজেলা জুড়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে।

    উপজেলা চেয়ারম্যান ও শিক্ষা কমিটির সভাপতি মোঃ ফজলুল হক চৌধুরী সেলিমের এমন সিদ্ধান্ত গ্রহনে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধির মাঝে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

    অনুসন্ধান করে দেখা গেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রকল্প কাজের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে বরাদ্ধকৃত অর্থ কাজ শুরুর পুর্বে অবশ্যই উপজেলা প্রকৌশলী কর্তৃক মেরামত কাজের প্রাক্কলন প্রস্তুত করে উপজেলা শিক্ষা কমিটির অনুমোদন নিয়ে মেরামত কাজ সম্পন্ন করতে হবে।

    এবিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবং উপজেলা প্রকৌশলী প্রধান শিক্ষকের সহায়তা করবেন। এদিকে প্রকল্প কাজ শুরুর আগেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেন উপজেলা চেয়ারম্যান সেলিম। করোনার প্রাদুর্ভাবের কারনে কাজ শুরু করতে না পারার অজুহাত দেখিয়ে গত (২১ জুন) প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির এক মিটিংয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানা গেছে।

    এ দেশের ইতিহাসে এই প্রথম কাজ না করে টাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত দেখে হতবাক উপজেলাবাসী।

    এব্যাপারে উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী সাবির আহমেদ বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামত প্রকল্পের আমি পরামর্শক হিসেবে কাজ করছি। যে স্কুল গুলোতে কাজ ৮৫% কাজ সম্পন্ন হবে সেগুলো বিদ্যালয়ে প্রত্যয়নপত্র আমি দেব। কাজ না করে প্রত্যয়নপত্র নেয়ার সুযোগ নেই।

    নবীগঞ্জ উপজেলা হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা নিশিকান্ত দেবনাথ বলেন, কাজ শেষ হয়েছে মর্মে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিলের সাথে প্রত্যয়ণপত্র সংযুক্ত থাকলে বিল পাস হবে। অগ্রিম বিলের ব্যাপারে আমার জানা নেই।

    নবীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আর্থিক কোন ফান্ড না থাকার কারনে কাজ না করেও সরকারি বিধি মোতাবেক অগ্রিম টাকা দেওয়া যেতে পারে বলে বিধান রয়েছে।

    নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার পাল বলেন, উপজেলা শিক্ষা কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে অগ্রিম ৫০% টাকা দেওয়ার জন্য। বরাদ্দপত্রে আছে কাজ শেষ করে টাকা নেবে। অগ্রিম নেয়ার সুযোগ নেই।

    উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান সেলিম বলেন ২০১৯ সনের প্রজ্ঞাপনে রাষ্ট্রপতির আদেশ রয়েছে প্রকল্প কাজের টাকা অগ্রীম দেওয়া যাবে আমারা মাহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশ বাস্তবায়ন করার জন্য অগ্রীম টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

    সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে উপজেলা “উপজেলা পরিষদেও চেয়ারম্যান সেলিমের স্ত্রীর ফেসবুক স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহুব তুলে ধরা হলো,
    সম্মানিত উপজেলা চেয়ারম্যান নবীগঞ্জ মহোদয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশ বাস্তবায়ন। গত ২১-০৬-২০২০ ইং তারিখ বেলা ২.০০ ঘটিকায় নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম মহোদয়ের সভাপতিত্বে প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির এক সভায় যুগান্তরকারী সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেরামতের কাজে এই প্রথম অগ্রিম টাকা প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয়ের সভাপতিত্বে যা প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম! মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এসএমসি গঠনের প্রজ্ঞাপনে স্বারক নং ৩৮.০০৮.০৩৫.০০.০০.০০৭.২০১২-৬৬৬ তারিখ ৬-১১-২০১৯ইং ৩.৬এর গ ও ঘ মোতাবেক সংস্কার ও মেরামত কাজের জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আয়ন ব্যায়ন কর্মকর্তা হিসেবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবেন এবং বরাদ্ধকৃত অর্থ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অনুকূলে অগ্রিম হিসেবে প্রধান করবেন এবং ৩.৬ এর ঙ মোতাবেক এসএমসি এর অনুমোদনক্রমে প্রধান শিক্ষক অর্থ উত্তোলণ ও ব্যয় করবেন।

    উল্লেখীত আদেশের বাস্তবায়নে সংস্কার ও মেরামত কাজ (২০০,০০০ও ১৫০,০০০) টাকা এর ৫০% টাকা ও অগ্রিম সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। উল্লেখিত যুগান্তকারী গ্রহনের জন্য প্রধান শিক্ষক সমিতি , নবীগঞ্জ উপজেলা শাখার পক্ষ থেকে সম্মানিত উপজেলা চেয়ারম্যান, সম্মানিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মহোদয়গণ, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির সকলকে ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করছি। বিঃদ্রঃ আমিও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।”