নবীগঞ্জে ধর্ষণ মামলা তদন্ত কালেই সন্তানের প্রসব ! 

    0
    199

    নবীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার পল্লীতে ধর্ষনের বিচার চেয়ে এলাকা ছাড়া হয়েছে একটি পরিবার। এলাকা থেকে পালিয়ে গিয়োও শান্তিতে নেই তারা, মামলা তুলে নিতে দেয়া হচ্ছে একের পর এক হুমকি ধামকির অভিযোগও উঠেছে। এছাড়া ধর্ষিতার ভাই ও মামলার স্বাক্ষীদের করা হয়েছে বিভিন্ন মামলার আসামী, তারাও এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এরই মধ্যে ধর্ষনের শিকার হত-দরিদ্র পিতার কণ্যার গর্ভে জন্ম নেয় এক শিশু সন্তান।

    এ অবস্থায় বিপাকে পরেছে একটি পরিবার। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই গ্রামে অন্তত ১০-১২ টি দাঙ্গা হাঙ্গামা ও মামলা মোকদ্দমা হয়েছে।  এমন ঘটনা ঘটেছে নবীগঞ্জ উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের হরিধরপুর গ্রামে।

    স্থানীয় ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বাউসা ইউনিয়নের হরিধরপুর গ্রামের হত-দরিদ্র মোঃ নাজিম উল্লার বাড়িতে প্রায়ই আসা-যাওয়া করতেন প্রতিবেশী মৃত কাচন মিয়ার ছেলে নজির মিয়া। দিন মজুর নাজিম উল্লা কাজের সন্ধানে প্রায়ই এলাকার বাহিরে থাকেন। বাড়িতে সংসারে কাজকর্ম করে তার মেয়ে এস আক্তার (ছদ্মনাম )। একা ঘরে থাকা এস আক্তার (ছদ্মনাম) এর উপর কু-নজর পরে নজির মিয়ার। এস আক্তার (ছদ্মনাম ) কে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে দৈহিক সর্ম্পক তৈরীর চেষ্টা করে নজির মিয়া। এ পর্যায়ে  এস আক্তার (ছদ্মনাম )কে ফাঁদে ফেলে দৈহিক মেলামেশা  করতে থাকে নজির মিয়া। এভাবে তাদের গভীর সর্ম্পক তৈরী হওয়ায় দৈহিক মিলন ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে। এক পর্যায়ে হত-হরিদ্র এস আক্তার (ছদ্মনাম ) অন্ত:সত্তা হয়ে পড়ে। তাকে বিয়ে করার জন্য চাপ দেয় নজির মিয়াকে।

    তখন সুলতানাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে বিয়ে করবে বলে আশ^স্থ করে নজির মিয়া। এভাবে কেটে যায় অনেক দিন, টালবাহানা করতে থাকে নজির মিয়া। এ অবস্থায় ঘটনাটি জানাজানি হয়ে যায় এলাকায়। স্থানীয় মুরুব্বীয়ানদের কাছে বিষয়টি জানান এস আক্তার (ছদ্মনাম ) এর পিতা নাজিম উল্লা। পরে তাদের বাড়িতে গ্রাম্য মুরুব্বীয়ানদের সমন্বয়ে বসে সালিশ বৈঠক। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়  এস আক্তার (ছদ্মনাম ) এর গর্ভের সন্তান নজির মিয়ার তাই  এস আক্তার (ছদ্মনাম ) কে  সে বিয়ে করতে হবে। কিন্তু নজির মিয়া সালিশের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বৈঠক থেকে চলে যায়। পরে সালিশ উপস্থিত মুরুব্বীদের পরমর্শে ২০১৮ সালের ৩ জুলাই হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন এস আক্তার (ছদ্মনাম ) এর পিতা।

    মামলায় স্বাক্ষী করা হয় সালিশ বিচারকদের। মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য নবীগঞ্জ থানাকে নির্দেশ দেন বিজ্ঞ বিচারক। মামলা তদন্তকালীন অবস্থায় এস আক্তার (ছদ্মনাম ) এর গর্ভে ভুমিষ্ঠ হয় এক পুত্র সন্তানের। শিশু সন্তানের বয়স এখন ১৯ মাস।

    উপরোল্লিখিত তথ্যগুলো মামলার এজাহার সূত্রে প্রকাশ।

    মামলার বাদি নাজিম উল্লা জানান, ওই মামলার তদন্তে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ সত্যতা পেয়ে আসামী নজির মিয়ার বিরুদ্ধে চার্জসীট দাখিল করে। ডিএনএ টেষ্টেও এস আক্তার (ছদ্মনাম ) এর গর্ভে জন্ম নেয়া শিশুর পিতা নজির মিয়া বলে রিপোর্ট এসছে। ওই মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগ করে মামলার প্রধান আসামী নজির মিয়া। এরপর জামিনে এসে আতশবাজীর মাধ্যমে এলাকায় আতংক সৃষ্টি করে বাড়িতে যায় নজির মিয়া।

    এক পর্যায়ে মামলার বাদীর বাড়িতে হামলা চালায় নজির মিয়া ও তার লোকজন। বাড়ি ঘর ভাংচুর করে তাদেরকে গ্রাম থেকে বিদায় করে দেয় ওই প্রভাবশালী মহল। এমনটাই বলছিলেন এই প্রতিনিধিকে নজির মিয়া।

    এ অবস্থায় নাজিম উল্লাহ  তার পরিবার নিয়ে পাশের্^র দৌলতপুর গ্রামে তাদের এক আত্মীয়র বাড়িতে আশ্রয় নেন। বর্তমানে আত্মীয়র বাড়িতেই বসবাস করেন।  নাজিম উল্লাহ আরো জানান, মামলার স্বাক্ষী গ্রামের নিরাপরাধ লোকদের এবং ভিকটিমের ভাইসহ তাদের আত্মীয়জনদের উপর একের পর এক মামলা দিয়ে ফাঁসাচ্ছে নজির মিয়াগংরা। এক সাক্ষীকে মারপিট করে তার হাত-পা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায়ও মামলা রয়েছে।

    অপরদিকে ১৯ মাস বয়সী বাচ্চাকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে এস আক্তার (ছদ্মনাম )। বাদী পক্ষের অভিযোগ, নজিরের চাচাতো ভাই আঃ নূর, অজুদ, জালাল, আবু ছালে ও জাহেদসহ একটি চক্র নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।  মামলা তুলে নেয়ার জন্যও তাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে। ওই মামলাকে কেন্দ্র করে গ্রামে একের পর এক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। বিষয়গুলো গড়াচ্ছে মামলা-মোকদ্দমায়ও। রিতিমত ওই এলাকা এখনোও উত্তপ্ত। প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন সচেতন মহল।
    ধর্ষণের ফলশ্রæতিতে সন্তান জন্মলাভ করলে এর ভরণপূষন কে করবে? এ সংক্রান্ত বিধানও রয়েছে।
    এ প্রসঙ্গে হবিগঞ্জের আইনজীবি শাহ ফখরুজ্জামান বলেন, এই ক্ষেত্রে যদি ডিএনএ টেস্ট হয় এবং বায়োলজিক্যলভাবে প্রমাণ হয় ধর্ষণকারী শিশুটির জন্মদাতা তাহলে ধর্ষণকারী শিশুটির দায়িত্ব নিবে। মা চাইলে নিজের কাছে বাচ্চা রাখতে পারবে এবং লালন পালন করতে পারবে। আর না হলে রাষ্ট্র শিশুর দায়িত্ব নিবে।