নবীগঞ্জে দু’ স্বামী মিলে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগঃআটক-১

    0
    213

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৪অক্টোবর,মতিউর রহমান মুন্নাঃ নবীগঞ্জে দু’ স্বামী মিলে পরিকল্পিতভাবে স্ত্রী মহিমা বেগম নামের এক গৃহবধুকে শ্বাসরোদ্ধ করে হত্যা করার চা ল্যকর খবর পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ গতকাল শুক্রবার সকালে পৌর এলাকার জয়নগর গ্রামে ভাড়াটিয়া বাসা থেকে মৃতদেহ উদ্ধার এবং কথিত স্বামী লালন মিয়াকে আটক করেছে।

    এ ব্যাপারে মৃতের পিতা মিন্নত আলী থানায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে। আটককৃত স্বামী লালন মিয়া আত্মহত্যা দাবী করলেও তার কথাবার্তায় অসংগতি রয়েছে। এবং ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে পুলিশ সুত্রে জানা গেছে।

    স্থানীয় সুত্রে জানাযায়, দীর্ঘদিন ধরে পৌর এলাকার আনমনু গ্রামের মিন্নত মিয়ার মেয়ে মহিমা বেগম নেত্রকোনা জেলার মদন থানার নোয়াপাড়া গ্রামের মৃত আরব আলীর ছেলে লালন মিয়ার সাথে পৌর এলাকার জয়নগর গ্রামের ভাড়াটিয়া বাসায় বসবাস করতো।

    গতকাল শুক্রবার মহিমা বেগমের পিত্রালয়ে খবর আসে মহিমা আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে মহিমার পিতা ও পরিবারের লোকজন ছুটে গিয়ে মাটিতে মহিমা বেগমের নিথড়দেহ দেখতে পেয়ে তাদের সন্দেহ হয়। এ সময় লালন মিয়া পালানোর চেষ্টা করলে তাকে আটক করে পুলিশে খবর দিলে এসআই সুধীন চন্দ্র দাশের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মৃতদেহ উদ্ধার এবং লালন মিয়াকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।

    আটককৃত লালন মিয়া মহিমা বেগমের স্বামী দাবী করলে মৃতের পিতা মিন্নত আলী তা মানতে নারাজ। তার দাবী মহিমা বেগমের স্বামী  নবীগঞ্জ উপজেলার বড় ভাকৈর (পূর্ব) ইউনিয়নের হরিনগর গ্রামের বাসিন্দা এবং নবীগঞ্জ শহরের ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়ালের ছেলে সরাজ মিয়া। মিন্নত আলী জানান, দীর্ঘদিন ধরে তার মেয়ে মহিমা বেগম (১৯) এর সাথে উক্ত সরাজ মিয়ার প্রেমের সর্ম্পক গড়ে তোলে।

    এক পর্যায়ে সরাজ মিয়া মহিমাকে নিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে ফাড়িঁ দেয়। এ ব্যাপারে তিনি প্রায় ২ বছর আগে সরাজ মিয়ার উপর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অপহরনের অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সরাজ মিয়া দীর্ঘদিন হাজত বাস করে এবং উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভ করে বাড়ি ফিরে।

    জামিনে এসেই সরাজ গোপনে মহিমা বেগমের সাথে পূণরায় যোগাযোগ স্থাপন করে এবং গোপনে প্রায়ই তাদের বাড়িতে আসা যাওয়া করতো। বিষয়টি মহিমার পরিবার আচঁ করতে পেরে মেয়েকে নানা বাড়ি উপজেলার ছোট সাকুয়া গ্রামে পাটিয়ে দেয়। বিষয়টি সরাজ মিয়ার পিতা আউয়াল মিয়াকেও জানানো হয়। এক পর্যায়ে সরাজ মিয়া প্রায় ১ বছর পুর্বে সাকুয়া গ্রামের নানা বাড়ি থেকে মহিমাকে ভাগিয়ে এনে চম্পট দেয়।

    কিছু দিন সিলেট শহরে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে অবস্থান করার পর মহিমা বেগমের পিত্রালয়ে খবর পাঠায় এবং তারা একে অপরকে ভালবেসে বিয়ে করেছে বলেও মহিমার পিতাকে জানানো হয়। তাদের প্রেম অতঃপর বিয়ে’র সর্ম্পক কোন ভাবেই মেনে নিতে রাজি নয় সরাজের পিতা ও পরিবার। অপর একটি সুত্রে জানাগেছে, পরিবারের ভয়ে সরাজ মিয়া তাদের বাসার কাজের বুয়ার ছেলে লালন মিয়াকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে শুধুমাত্র কাগজ কলমে শর্ত সাপেক্ষে মহিমা বেগমকে লালন মিয়ার নিকট বিবাহ দেয়।

    গোপনে সংসার করে সরাজ মিয়া এবং প্রকাশ্যে স্বামী পরিচয় দেয় লালন মিয়া। তাদের এমন খেলা শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে মহিমা বেগমের পরিবারের নিকট। ফলে মহিমার বাবা মিন্নত আলী কাবিনের কপি দেখানোর জন্য চাপ দেয় লালন মিয়াকে। কিন্তু কপি না দেখিয়ে পূণরায় কাবিন করার প্রস্তাব দেয় লালন। অবশেষে প্রায় ১৫ দিন আগে কাজী এনাম আহমদের মাধ্যমে লালন ও মহিমা বেগমের রেজিষ্ট্রারী কাবিন সম্পন্ন হয়।

    এছাড়া প্রায় কয়েক’দিন পুর্বে মহিমা বেগমের গর্ভে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। অযন্ত্র, অবহেলায় ৫ দিন পরে নবজাতক শিশুটিরও মৃত্যু ঘটে। গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে মহিমা বেগমের বাড়িতে তার বাবা এক আত্মীয়কে পাঠায় খোজঁ খবর নিতে। গৃহবধু মহিমা আত্মীয়কে সুস্থ অবস্থায় চা-নাস্তার আপ্যায়ন করে বিদায় করে দেয়। ঘটনার প্রেক্ষিতে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

    এ ব্যাপারে এসআই সুধীন চন্দ্র দাশ জানান, ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে স্বামী লালন মিয়াকে আটক করা হয়েছে। তার কথাবার্তায় অসংগতি রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাওয়াগেছে। জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে তবে তদন্তের স্বার্থে বলা যাচ্ছে না।

    এদিকে এলাকাবাসী মহিমা বেগমকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে দাবী করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান। এছাড়া গতকালই মৃত মহিমা বেগমের ময়না তদন্ত শেষে তার পরিবারের নিকট লাশ হস্তান্তর করলে বিকালে দাফন সম্পন্ন হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।