নদী সংযোগ দাও ও দূর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ কর:মানববন্ধন

    0
    646

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,৮সেপ্টেম্বর: চলমান কপোতাক্ষ খনন কার্যকালের মধ্যে উজানে মাথাভাঙ্গা-পদ্মার সাথে সংযোগদিয়ে ভৈরব সংস্কারের প্রস্তাবিত প্রকল্পও টিআরএম-এর ভাটিতে পলি অপসারণ ও কপোতাক্ষের অবশিষ্ট অংশ খনন যুগপৎ বাস্তবায়নের দাবিতে আজ ৮ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বেলা ১১ ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানব-বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পরিবেশবাদী সংগঠন, যশোর ও সাতক্ষীরা জেলা সমিতি, কপোতাক্ষ, ভৈরব ও মাথাভাঙ্গা অববাহিকার ক্ষতিগ্রস্ত জনগণ।

    সূচনা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের আহ্বায়ক অনিল বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রদত্ত স্মারকলিপি উপস্থাপন করেন সংগঠনের সমন্বয়ক এ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এমপি। আন্দোলন পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ। মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কোজ ভট্টাচার্য, সিপিবি উপদেষ্টাম-লীর সদস্য মঞ্জুরুল হাসান খান, পানি বিশেষজ্ঞ ম.এনামুল হক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের নেতা মহিদুল হক খান, যশোর সমিতির সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান,   সিপিবির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ জাফর আহমেদ, জাসদের কেন্দ্রীয় সহ সাধারণ সম্পাদক নজামুল হক প্রধান এমপি, এ্যাড. খান টিপু সুলতান এমপি (বরিশাল-৩), বাসদের কেন্দ্রীয় সদস্য বজলুর রশিদ ফিরোজ, ইউসি এল বি’র কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, জাতীয় কৃষক সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর সাহা দীপু, বাংলাদেশ যুব মৈত্রীর সভাপতি মোস্তফা আলমগীর রতন প্রমুখ। অনুষ্ঠান উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীর আলম ফজলু।

    নেতৃবৃন্দ বলেন, দর্শনা থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত কপোতাক্ষ অববাহিকার ৫০ লক্ষাধিক মানুষ প্রত্যক্ষ-অপ্রত্যক্ষ জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের দীর্ঘ দিনের দুঃসহ জলাবদ্ধতার নিরসন, জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা এবং সুন্দরবনে মিঠা পানির প্রবাহ আনতে উজানে নদী-সংযোগের দাবিতে ২০০৩ সাল থেকে জনগণ নানা পর্যায়ে নদী-সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছেন। সর্বশেষ গত আগস্টের ৩০ তারিখে কয়েক হাজার মানুষ যশোর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

    এলাকার জনগণের দীর্ঘ দিনের আন্দোলনের চাপে মধুকবির স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদ সংস্কারে ২৬২ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। যদিও ২০১১ –  ২০১৪ পর্যন্ত ৪ বছর মেয়াদি এই কাজের মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। শতকরা ১২ ভাগের বেশি এখনও শেষ হয়নি। এই কাজের অংশ হিসাবে সাতক্ষীরার তালায় পাখিমারা বিলে একটি টিআরএম (জোয়ারাধার) চালু হয়েছে। এর ফলে নদীতে ¯্রােতের গতি বেড়েছে। এরইমধ্যে নদীর গভীরতাও বেড়েছে ১০ থেকে ১২ ফুট। পলি উঠে বিল ২ ফুটের অধিক উঁচু হয়েছে।

    পরিতাপের বিষয়, সিডিউল অনুযায়ী কাজ হচ্ছেনা। যতখানি চওড়া ও গভীর করে নদ খনন করার কথা, তা হচ্ছেনা। অনেক ফাঁকি! খননের মাটি রাখা হচ্ছে পানির কাছাকাছি। বৃষ্টি হলেই মাটি খাদের মধ্যে পড়বে। সীমাহীন দুর্নীতি এবং অর্থলোপাটের ঘটনা ঘটছে।

    এরপরও যে সফলতা তা ধরে রাখতে উজানে নদী-সংযোগের বিকল্প নেই। উজানে সংযোগটা হলেই চলমান প্রকল্প সফল হবে। একটা স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যাবে। নতুবা জোয়ারের পলি উঠে পুনরায় নদ ভরাট হয়ে যাবে। শেষমেশ ২৬২ কোটি টাকার প্রকল্পটি ভেস্তে যাবে। প্রকল্পের জন্য বরাদ্দের পুরো টাকাটাই অপচয় হবে।

    উজানের সংযোগ হলে কপোতাক্ষে পুনরায় পাহাড়ি পানির প্রবাহ যুক্ত হবে। ১৯৩৯ সালে দর্শনায় নদীর বুক ভরাট করে কেরুর চিনিকল বসানোর পর থেকে এ অঞ্চলের নদীগুলোতে পাহাড়ি পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে আছে।

    উজান সংযোগ হলে অন্তত বর্ষাকালে ৪ থেকে ৬ মাস আমরা গঙ্গার পানি পাব। মিঠা পানির প্রবাহে নদীর অটোএক্সকাভেশন হবে। ঘটবে একটা চেইন রি-অ্যাকশান। বর্ষাকালে যে বিপুল জলরাশি দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যায়, প্রতি বছর ধ্বংস-যজ্ঞ ঘটায়, তার একটি অংশ কাপোতাক্ষ খাতে প্রবাহিত হবে। সেই বিপুল পরিমাণ পানি কপোতাক্ষ একা তা বহন করতে পারবেনা। তাই দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের অনেক নদী এতে জীবন ফিরে পাবে।

    কপোতাক্ষ খননে ২৬২ কোটি টাকার প্রকল্পে বাস্তবায়নের নামে এলাকায় এলাকায় প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটি (পিআউসি) গঠিত হয়েছে। সেই সব কমিটিতে এমন সব লোকেদের রাখা হয়েছে যারা কপোতাক্ষ সংস্কারের আন্দোলনে কখনই যুক্ত ছিলেন না; অথবা এই আন্দোলনের বিরোধিতা করে এসেছেন। তাদের অনেকেই নদীর সম্পত্তি  দখল করে আছেন। কেউ কেউ প্রজেক্টর অর্থ লোপাটে সম্পৃক্ত। তদন্ত করলেই সে সব বেরিয়ে আসবে।

    কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন উজানে নদী সংযোগ দিয়ে একটি স্থায়ী সমাধানের দাবি করে আসছে।  নেতৃবৃন্দ এই যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ব আহ্বান জানান।