নতুন স্বপ্নে বিভোর কৃষক চির চেনা গন্ধে মুখরিত হাওরপাড়

    0
    230

    সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জে হাওর জুড়ে বোরো মওসুমে সোনালী ধানের শীষ দেখে নতুন স্বপ্ন আর মৌ মৌ গন্ধে মাতুয়ারা হাওর পাড়ের কৃষকগন। বছরে একটি মাত্র ফসলকে ঘিরেই হাওরা লের মানুষের যত স্বপ্ন আশা। ভাল ফলন হওয়ায় সোনাঝরা হাঁসি ফোটেছে তাদের মুখে। বহু প্রত্যাশীত সোনালী ফসল ঘরে তুলতে কৃষকর-কৃষকরা ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজ অনেক জায়গায় শুরু হয়েছে। বোর ফসলের উপর নিভর্রশীল এ অ লের কৃষকরা বৈশাখ মাসে ধান গোলায় উঠাতে পারলে কৃষকদের পরিবার আনন্দময় হয়ে উঠবে। নতুবা বিষাদের ছায়া নেমে আসবে দেশের ধান ভান্ডার খ্যাত সুনামগঞ্জে।

    জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়,চলতি বছর সুনামগঞ্জ জেলায় ১১টি সুনামগঞ্জ,জামালগঞ্জ,ছাতক,জগন্নাথপুর,তাহিরপুর,ধর্মপাশা,দিরাই,শাল্লা,বিশ^ম্ভরপুরসহ ১১টি উপজেলার-মাটিয়ান হাওর,শনির হাওর,সোনামোড়ল হাওর,খরচার হাওর দেখার হাওর,পাকনা হাওর,হালির হাওর,আঙ্গারুলী হাওর,কালিকোট হাওর,ধারাম হাওর,ধানকুনিয়া হাওরসহ ছোঠ বড় ৪৬টি হাওরের বিস্তৃর্ণ ফসলী মাঠ এখন সোনালী ধানের শীষ বাতাশে দোল খাচ্ছে।

    উপজেলার ছোট বড় সবক’ টি হাওরে ২লাখ ২৪হাজার ৫শত ৫২হক্টর বোরো জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ১৬হাজার ৬৯হেক্টর,দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ২২হাজার ৩শত ২৯হেক্টর,জামালগঞ্জে ২৪হাজার ৬শত ৯হেক্টর,ধর্মপাশা ৩১হাজার ৭ শ ৯৬হেক্টর,তাহিরপুর ১৮হাজার ৩শত ৩৫হেক্টর,দিরাই ২৭হাজার ৯শত ৫৪হেক্টর,শাল্লা ২১হাজার ৯শত ৯৯,জগন্নাথপুর ১৫হাজার ৩৫হেক্টর,বিশ^ম্ভরপুর ১১হাজার ৩শত ৩৫হেক্টর,ছাতক ১৪হাজার ১শ ৯৯হেক্টর,দোয়ারাবাজার ১৩হাজার ৬শত ৩৯হেক্টর। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে হাওর থেকে প্রায় ৪হাজার কোটি টাকার ধান উৎপাদন হবে বলে ধারণা করছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এসব হাওর জেলার খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে দেশের অর্থনৈতিকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বছরের পর বছর ধরে।

    জেলার সচেতন হাওরবাসী জানান,গত ১৬-১৭সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লাগামহীন দূর্নীতি আর অনিয়মের কারণে মার্চের শেষ ও এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের বৃষ্টিতে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে একের পর এক হাওর ডুবে ফসল হারিয়ে এজেলার লাখ লাখ কৃষকরা স্বর্বশান্ত হয়েছিল। হাওর পারের মানুষ কাজের সন্ধানে ছুটে যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে। ফসল বিপর্যয়কে সামনে রেখে কৃষকদের আন্দোলনে ২০১৮সালে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় বাঁধ নির্মানে নতুন নীতিমালা করে ঠিকাদারী প্রথা বাতিল করে। সরাসরি সংযুক্ত করা হয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে। কিন্তু এতেও হাওর বাচাও সুনামগঞ্জ বাচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ও কৃষকরা বলেছেন গত বছরের চেয়েও এবার কাজের মান নিন্ম মানের হয়েছে অভিযোগ উঠেছে। ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে গাফিলতি হওয়ায় হাওর বাচাও,সুনামগঞ্জ বাচাও আন্দোলনের ব্যানারে জেলা-উপজেলায় মানব বন্ধন হয়েছে।
    হাওর পাড়ের কৃষক সাকিব মিয়া,সাইদুল,আহসান জানান,এবার ফসল ভাল হয়েছে। হাওরের সোনালী ধানের দিকে তাকালে সব কষ্ট দূর হয়ে যায়। কিন্তু মেঘলা আকাশ দেখলেই উৎবেগ,উৎকণ্ঠা আর বজ্রপাত,শীলাবৃষ্টির ভয়ে কৃষকগন থাকেন সারাক্ষন আতংকের মাঝে। এবারও বাঁেধ দূর্নীতি হওয়ায় আমরা কৃষকরা সারাক্ষনেই ভয়ের মাঝে আছি বাঁধ ভাঙ্গার আতœংক নিয়ে। কোন রখমে কষ্টের ফলানো বেরো ধান গোলায় তুলতে পারলেই হল।

    তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস ছালাম জানান,এবারও হাওরে সামন্য কিছু ক্ষতি হয়েছে শুধু সময় মত বৃষ্টি না হওয়ায় কারনে। আশা করি কৃষকরা তাদের কষ্টের ফলানো সোনালী ধান এবার ভাল ভাবেই তাদের গোলায় তুলতে পারবে। সবাইকে দ্রুত ধান কাটার জন্য বলা হয়েছে আবহাওয়ার অবস্থা বিবেচনা করে।

    জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবুবকর সিদ্দিক ভূঁইয়া বলেন,বাঁধের কাজ শেষ। সার্বিক দিক থেকে বলা যায় এবারো ভালো কাজ হয়েছে। বৃষ্টিতে প্রকল্পের কাজে মাটি লেভেলিং,ড্রেসিং,মজবুতকরনসহ দূর্বাঘাস লাগানো হচ্ছে। চলতি বছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে কাবিটা কর্মসূচির আওতায় সুনামগঞ্জের ৪২টি হাওরে ৫৭২টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে ৪৫০কিলোমিটার ফসল রক্ষাবাঁধ নির্মাণ করেছে। এতে ব্যয় হয়েছে ৯৭কোটি ৫৫লাখ টাকা।