নতুন আচরণবিধির খসড়ার কাজ এগিয়ে:ইসি

    0
    239

    আমার সিলেট  24 ডটকম,অক্টোবর১০ম নির্বাচনে সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, মন্ত্রী বা তাদের পদমর্যাদার কোনো প্রার্থী সরকারি গাড়ি ব্যবহার বা জনবল সঙ্গে নিয়ে প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির পদ এবং পদাধিকারবলে পাওয়া সামাজিক প্রতিষ্ঠানের পদও ছাড়তে হবে সকল এমপিদের। তবে এই সময়ে সরকারি দফতরের কাজের জন্য সরকারি গাড়ি ও জনবল ব্যবহারের সুযোগ পাবেন তারা। বিদ্যমান “রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা” পরিবর্তন করে এমন বিধি-নিষেধই আরোপ করা হচ্ছে।

    নির্বাচনী প্রচারে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশের আচরণবিধি পর্যালোচনার পাশাপাশি ও বাংলাদেশের প্রিভিলেজ অ্যাক্ট-১৯৭৩ পর্যালোচনা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দশম সংসদ নির্বাচনের সময় সরকার ব্যবস্থার ধরন নিয়ে নিশ্চিত না হলেও ইসি নতুন আচরণবিধির খসড়া প্রস্তুতের কাজ এগিয়ে রাখছে। ইসির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, আচরণবিধি নিয়ে আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু না হলেও প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে খসড়া প্রস্তুতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন ।

    নির্বাচন কমিশনার মো. আবু হাফিজ বলেন, বিদ্যমান সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আচরণবিধি তৈরি করা হবে। যে সরকারের অধীনেই নির্বাচন হোক, প্রচারে সব দলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে কমিশন বদ্ধপরিকর। কমিশনার বলেন, কমিশনের হাতে এখন শুধু আচরণবিধি প্রণয়নের কাজ বাকি রয়েছে। এর মাধ্যমে সব দলের জন্য যতটা সম্ভব সমান সুযোগ নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সংবিধান বা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ (আরপিও) সংশোধনের মাধ্যমে কোনো নতুন সুযোগ তৈরির বিষয়টি কমিশনের হাতে নেই। এজন্য দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সংসদের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে।

    তবে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে। শুধু আচরণবিধি দিয়ে তার সীমারেখা টানার চিন্তা অকল্পনীয়। সংবিধানে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভাকে যে ক্ষমতা দেওয়া আছে তা ইসি কোনোভাবেই আটকাতে পারবে না। নির্বাচনের সময় এই ক্ষমতার অপব্যবহার ঠেকাতে সংবিধান সংশোধনের কোনো বিকল্প নেই।

    নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, কমিশনের প্রস্তুত করা খসড়ার কাজ অত্যন্ত গোপনে করা হচ্ছে। এর আগে সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন ও আরপিও সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়া তৈরিতেও তারা গোপনীয়তা রক্ষার চেষ্টা করেছিলেন। সিইসি ও কমিশনার ছাড়া অন্য কাউকে এ খসড়া প্রস্তুতের কাজে রাখা হয়নি। সূত্র জানায়, বিভিন্ন দেশের আচরণবিধি পর্যালোচনা করে একমাত্র ভারত ছাড়া অন্য কোথাও সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনের নজির মেলেনি। কমিশনের একজন সদস্য জানিয়েছেন, তাদের প্রস্তাবিত খসড়া আচরণবিধি চূড়ান্ত হলে মন্ত্রী-এমপিদের জন্য নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়া অনেক কঠিন হবে।সূত্র জানায়, রাজনৈতিক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি মাথায় রেখে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা পরিবর্তনের খসড়া তৈরি করা হচ্ছে।

    খসড়া আচরণবিধি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, মন্ত্রী ও সমমর্যাদার ব্যক্তিরা রাষ্ট্রীয় কাজে সরকারি গাড়ি ও ব্যক্তিগত সহকারী ব্যবহার করতে পারবেন। তবে নির্বাচনী জনসভা বা গণসংযোগে রাষ্ট্রীয় সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন না। দেশব্যাপী নির্বাচনী প্রচারে দলের কতজন কেন্দ্রীয় নেতা অংশগ্রহণ করতে পারবেন সে বিষয়ে কমিশন এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বর্তমান এমপিদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির পদ ছাড়তে হবে।

    ইসি সচিবালয় জানিয়েছে, গত তিনটি জাতীয় সংসদের (সপ্তম. অষ্টম ও নবম) নির্বাচন হয়েছে অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। তখন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিদায়ী সরকারের পুরো মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করে নির্বাচনে অংশ নিতে হতো। বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা কার্যকর থাকবে। মন্ত্রিসভার সদস্যরাও স্বপদে বহাল থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। তবে বিদ্যমান আচরণ বিধিমালায় তাদের প্রচার ও নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই।

    খসড়া আচরণবিধিতে “নির্বাচন পূর্ব সময়” এর সংজ্ঞাতেও সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বিদ্যমান আচরণবিধিতে “নির্বাচন পূর্ব সময়” এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, সংসদের মেয়াদ উত্তীর্ণ বা সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের ফল সরকারি গেজেটে প্রকাশের তারিখ পর্যন্ত সময়। তবে প্রস্তাবিত আচরণবিধিতে, সংসদের মেয়াদ অবসান বা সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে এর পূর্ববর্তী ৯০ দিন হতে ফলাফল সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশের তারিখ পর্যন্ত সময়কে নির্বাচন-পূর্ব সময় বলা হয়েছে ।

    খসড়া আচরণ বিধিমালা অনুসারে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থী রাজনৈতিক দল বা জোটের প্রার্থী হলে তিনি তার জন্য বরাদ্দ প্রতীকের পাশাপাশি দলের বা জোটের প্রধানের ছবিও নির্বাচনী পোস্টার, ব্যানার, লিফলেট ও হান্ডবিলে ব্যবহার করতে পারবেন। প্রার্থীদের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারের সুযোগ থাকবে। ইন্টারনেট ব্যবহার করে ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো যাবে না। মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ, অশল্গীল ও মিথ্যা তথ্য প্রচার এবং ভোটার, প্রার্থী ও ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি দেখানো যাবে না।