ধর্ষন মামলার বিরুদ্ধে শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিক সম্মেলন 

    0
    241

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১০আগস্ট,জহিরুল ইসলামঃ বার বার চুরিতে ধরা পরার পর শ্রীমঙ্গল মোহাজেরাবাদ গ্রাম থেকে বের করে দেয়ায় চুরির অভিযুক্তকারীর মা জুলেখা বেগম স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ নিরিহ গ্রামবাসীর উপর তার মেয়েকে ধর্ষনের মিথ্যা অভিযোগে মামলা করেন।এর প্রতিবাদে সোমবার সকালে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন শ্রীমঙ্গল আশিদ্রোন ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নং ওয়ার্ডের সদস্য আবু তাহের। এসময় জুলেখা বেগমের দায়ের করা মামলাটি মিথ্যা মামলা হিসেবে আখ্যায়িত করে বক্তব্য দেন আশিদ্রোন ইউপি চেয়ারম্যান রনেন্দ্র প্রসাদ বর্ধনসহ ইউনিয়নের আরো ৫জন নির্বাচিত সদস্য ও একাধিক গ্রাম প ায়েত নেতৃবৃন্দ।

    সাংবাদিক সম্মেলনে আবু তাহের বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি মহল জুলেখার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে তার মানসম্মান ক্ষুন্ন করতে এ সকল হীন কর্মে তারা লিপ্ত হচ্ছেন। তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন আমি মো. আবু তাহের, মেম্বার, ৬নং ওয়ার্ড, ৬নং আশীদ্রোন ইউনিয়ন পরিষদ, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার। আমার গ্রামের বাড়ি উপজেলার পাহাড়ি গ্রাম মোহাজেরাবাদে।

    গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমি এলাকার সাধারণ মানুষের ভোটে বিপুল ভোটাধিক্যে নির্বাচিত হই। মোট প্রদত্ত ভোটের প্রায় ৮০ শতাংশ ভোটই আমি পাই। আমার প্রয়াত পিতা আলী আজগরও সমাজের একজন প্রতিষ্ঠিত সমাজকর্মী ছিলেন। আমি এলাকার বিভিন্ন স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসার সাথে জড়িত ছিলাম ও আছি। দীর্ঘ প্রায় দুই দশক আমি মোহাজেরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। বর্তমানে আমার বড়ভাই আবু ছাইদ ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এক সময় মোহাজেরাবাদ গ্রাম একটি প্রত্যন্ত পাহাড়ি ও অন্ধকারচ্ছন্ন গ্রাম ছিল। আমার পরিবার ও অন্যদের সহায়তায় মোহাজেরাবাদ গ্রামটি পুরো উপজেলায় একটি আলোকিত গ্রাম হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। ওই গ্রামে বেড়েছে শিক্ষার হার, হয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সরকারের উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে গ্রামে। গ্রামের অসংখ্য মানুষ আজ দেশে-বিদেশে সরকারি চাকুরীসহ বড়-বড় পদে কর্মরত।

    আমি আপনাদের সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে আমি দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত রোগী। প্রতি ৪/৫ মাস অন্তর অন্তর আমাকে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য ভারতে গমন করতে হয়। আমার স্ত্রীও আমার মতো দুরারোগ্য রোগী। আমরা দুজনই মৃত্যুর দোরগোড়ায়। যে কোন সময় আমাদের যে কেউ এই পৃথিবী ছেড়ে চিরবিদায় নিতে পারি। আমার প্রয়াত পিতা যতদিন বেঁচে ছিল ততদিন মানুষের সেবা করার জন্য আমাদের নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন। পিতার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এতে এলাকায় ও সমাজে আমাদের পরিবারের সুনামও বেড়েছে আবার পারিবারিক শত্র“ও তৈরি হয়েছে।

    আমি ও আমার পরিবার সমাজের হীতকর কাজ করতে গিয়ে এলাকার কতিপয় সমাজবিরোধী চক্রের ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছি প্রতিনিয়তই। অতি সম্প্রতি আমাকে এলাকার ওই সমাজবিরোধী চক্রটি প্রাণে হত্যার হুমকি দেয়। আমি এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল থানায় সাধারণ ডায়রী করার পর পুলিশি তদন্তে আমার অভিযোগের সত্যতা পেয়ে পুলিশ আসামীদের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন প্রেরণ করেন।

    এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ওই সমাজবিরোধী চক্রটি। আমার ও আমার পরিবারের ক্ষতি করার জন্য ওই সমাজবিরোধী চক্রটি মরিয়া হয়ে ওঠেছে। আমার এলাকা তথা মোহাজেরাবাদ গ্রামের একজন কুখ্যাত ও চি‎িহ্নত দেহজীবি জুলেখা বেগম ওরফে জলিকা বেগম। নানা অসামাজিক কাজের সাথে তিনি জড়িত। তার পিতা মোহাজেরাবাদ গ্রামের সম্পত্তি তারই সৎ ছেলে (জুলেখার সৎ ভাই) ইমান আলীর কাছে বিক্রি করে উপজেলার কালাপুর এলাকায় চলে যান। এরই মধ্যে হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার কুখ্যাত লতাই ডাকাতের সাথে তার বিয়ে হয়। লতাই ডাকাতের ঔরসে এবং জুলেখার গর্ভে এক ছেলে ও এক মেয়ের জন্ম হয়। লতাই ডাকাত অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে জুলেখা তাকে ছেড়ে মোহাজেরাবাদ গ্রামে ফিরে এসে তার সৎভাই ইমান আলীর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। কয়েকমাস সেখানে থাকার পর জুলেখা বেগমের ছেলে বিল্লাল হোসেন প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বার সে চুরির ঘটনায় ধরা ধরা পড়লে গ্রামবাসী এক সময় গ্রামবাসী অতিষ্ট হয়ে বিল্লালকে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেন। এ অবস্থায় জুলেখা তার মেয়ে রুমিকে নিয়ে পর্যায়ক্রমে গ্রামের ফজর আলী চাপরাশি, কাজী রকিব, মনু মিয়া, নুর মিয়া, খালেক রাড়ি, সোলেমান মিয়া মেয়ের বাড়ি, আলী আমজাদ, আবু তালেম প্রমুখদের বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এরই মাঝে একাধিকবার জুলেখা তার মেয়ে রুমিকে নিয়ে ঢাকার গার্মেন্টেসে কাজের কথা বলে চলে যান আবারো ফিরে এসে মানুষের বাড়িতে আশ্রয় নিতে থাকেন। গত বছরের অক্টোবর মাসের দিকে জুলেখা বেগম তার মেয়েকে এলাকার ইউনুছ মিয়ার পুত্র মাসুক মিয়া ও কাজী ইদ্রিস মিয়ার পুত্র কাজী রফিক ধর্ষণ করেছে বলে দাবি করে এলাকার মুরব্বীদের কাছে বিচার প্রার্থী হন।

    এলাকার মুরব্বীরা তাকে এ বিষয়ে আইনের আশ্রয় নিতে বলেন। কিন্তু জুলেখা বেগম এ বিষয়ে আইনের আশ্রয় না নিয়ে গত ২২ মার্চ মাসুক ও কাজী রফিককে আসামী করে মানবাধিকার সংগঠন আইন সহায়তা কেন্দ্র আসক ফাউন্ডেশনে সুবিচার পাওয়ার আবেদন করেন। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন তার মেয়ে রুমি আক্তার (১৪) কে মোহাজেরাবাদ গ্রামের ইউনুছ মিয়ার পুত্র মাসুক মিয়া ও কাজী ইদ্রিস মিয়ার পুত্র কাজী রফিক মাসে ধর্ষণ করে। উভয় বিবাদীর গণধর্ষণে তার মেয়ে রুমি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে তার অনুপস্থিতিতে উপরোক্ত আসামীগণ রুমিকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি জোরপূর্ব একটি সিএনজি-তে উঠিয়ে মৌলভীবাজারের একটি ক্লিনিকে নিয়ে জোরপূর্বক গর্ভস্থ বাচ্চাকে নষ্ট করেছে।

    ওই অভিযোগের প্রেক্ষিত মানবাধিকার সংগঠন আইন সহায়তা কেন্দ্র আসক ফাউন্ডেশন ঘটনাস্থল সরজমিন পরিদর্শণপূর্বক ঘটনার তদন্ত করেন এবং ব্যাপারটি রহস্যময় বলে অভিহীত করে একটি তদন্ত প্রতিবেদন ৬নং আশীদ্রোণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবরে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে প্রেরণ করেন।

    এরই মধ্যে গত ৯ এপ্রিল জুলেখা বেগম ওরফে জলিকা ৬নং আশীদ্রোণ ইউনিয়ন পরিষদের মাননীয় চেয়ারম্যান বরাবরে ইউনুছ মিয়ার পুত্র মাসুক মিয়া ও কাজী ইদ্রিস মিয়ার পুত্র কাজী রফিককে বিবাদী করে সুবিচারের নিমিত্তে আরো একটি আবেদন করেন। কিন্তু বিষয়টি গ্রাম্য আদালতে বিচার্য্য বিষয় নয় বিধায় মাননীয় চেয়ারম্যান বিচার কার্য পরিচালনা করা গেল না বলে জুলেখা ওরফে জলিকাকে লিখিতভাবে জানান।

    এরপরই ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়। আমার এলাকার সমাজবিরোধী কতিপয় লোকের পরামর্শে গত ২৯ জুলাই জুলেখা ওরফে জলিকা বাদি হয়ে আমাকে (মো. আবু তাহের, মেম্বার, ৬নং ওয়ার্ড, ৬নং আশীদ্রোণ ইউনিয়ন পরিষদ), আমার বড়ভাই মোহাজেরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শিক্ষানুরাগী আবু ছাইদ এবং আমাদের এলাকার রহিম বক্স এর পুত্র ইয়াছিন মিয়াকে বিবাদী করে আমি ধর্ষণ করেছি এবং বাকিরা আমার সাথে মেয়েটির গর্ভপাতে সহায়তা করেছেন উল্লেখ করে মৌলভীবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। মাননীয় জেলা ও দায়রা জজ বেগম তাবাসসুম ইসলাম ৭ কার্যদিবসের মধ্যে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য শ্রীমঙ্গল থানাকে নির্দেশ প্রদান করেছেন।

    যেখানে গত বছর থেকে ২৯ জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত মানবাধিকার সংগঠন থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত সর্বস্থানে মেয়েটির বক্তব্য অনুসারে আমার এলাকার ইউনুছ মিয়ার পুত্র মাসুক মিয়া ও কাজী ইদ্রিস মিয়ার পুত্র কাজী রফিককে বিবাদী করে অভিযোগ প্রদান করা হয়েছে সেখানে ২৯ জুলাই আকস্মিকভাবে আমি ধর্ষণ করেছি বলে মামলা দায়ের করা হলো। আমি একজন মৃত্যুপথযাত্রী দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত রোগী। আমার এলাকার কতিপয় সমাজবিরোধী লোকের কুপরামর্শে আমাকে এ অবস্থায়ও ধর্ষণের মতো ঘৃণিত একটি ঘটনার সাথে জড়িত করায় আমি মানসিক, শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি।

    এছাড়া মামলার ব্যাপারটি নিয়ে সিলেটের একটি অনলাইনে সংবাদ প্রকাশ করে ওই অনলাইনের প্রিন্টকপি আমার ইউনিয়নের সর্বত্র দেয়ালে দেয়ালে সাটানো হচ্ছে। কারা-কি উদ্দেশ্যে এসব করছে তা সহজেই অনুমেয়। আমি একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে জুলেখা ওরফে জলিকা, তার ছেলে ও মেয়েকে তাদের সম্পত্তি ফিরে পেতে সহায়তা করেছি। যদি জলিকা ওরফে জুলেখার মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়ে থাকে তবে তার ধর্ষণকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

    আর যদি এসব তার ব্যবসা হয়ে থাকে এবং এটিকে কেন্দ্র করে যারা বিষয়টি নিয়ে আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, আমার পরিবারের মানসম্মান ক্ষুুন্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন তাদেরও তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তির আওতায় আনার দাবি করেন আবু তাহের।