দেশে চিকিৎসক-নার্স ৭২৭,৩৯৫পুলিশ ও ১০কারারক্ষী আক্রান্ত!

    0
    207

    কোভিড-১৯ বা করোনা সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশে চিকিৎসক-নার্সসহ ৭২৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার এ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে।

    সংগঠনের মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী গতরাতে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসক ৩১৬ জন, নার্স ১৪৮ জন এবং মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন ২৬৩ জন। এতো বিপুল সংখ্যক চিকিৎসাকর্মী আক্রান্তের ঘটনায় সেবাদানকারীদের মধ্যেই দারুণ উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।

    বিএমএস মহাসচিব জানান, সর্বোচ্চ আক্রান্ত ঢাকায় ৫৪৮ জন। তাদের মধ্যে চিকিৎসক ২৩১ জন, নার্স ১২৪ জন এবং স্বাস্থ্যকর্মী ১৯৩ জন। বরিশালে চিকিৎসক ১৩ জন, নার্স ২ জন এবং স্বাস্থ্যকর্মী ৭ জন, চট্টগ্রামে চিকিৎসক ১৩ জন, স্বাস্থ্যকর্মী ৭ জন, খুলনায় চিকিৎসক ১০ জন এবং স্বাস্থ্যকর্মী ৫ জন, রংপুরে চিকিৎসক ৫ জন, নার্স ২ জন এবং স্বাস্থ্যকর্মী ৪ জন, সিলেটে চিকিৎসক ৭ জন, নার্স ২ জন এবং স্বাস্থ্যকর্মী ৭ জন, ময়মনসিংহে চিকিৎসক ৩৬ জন, নার্স ২১ জন এবং ৩৮ জন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এক চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে।

    এদিকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে এ পর্যন্ত চিকিৎসক-নার্সসহ ৩০ স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিন। পরিচালক জানান, আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসক ৮ জন, নার্স ১৬ জন, ওয়ার্ড মাস্টার ২ জন, ওয়ার্ড বয় ৩ জন এবং একজন আনসার সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের সংস্পর্শে থাকায় ১৫ চিকিৎসক ও ৩৭ নার্সকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে বলে জানান পরিচালক।

    প্রথম পুলিশ সদস্যের মৃত্যু

    ঢাকায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে জসিম উদ্দিন পাটোয়ারী (৪০) নামের একজন পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। আজ (বুধবার) সকালে আইইডিসিআর জানিয়েছেন, ওই কনস্টেবলের নমুনায় করোনা পাওয়া গেছে। বংলাদেশে এই প্রথম কোনো পুলিশ সদস্যদের করোনায় মৃত্যু হলো।

    মৃত জসিম উদ্দিন পাটোয়ারীর বাড়ি কুমিল্লার বুড়িচংয়ে। তিনি দুই মেয়ে ও এক ছেলের বাবা। জসিমউদ্দিন ওয়ারী পুলিশ বিভাগে কর্মরত ছিলেন। ওয়ারী ফাঁড়িতে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি করোনায় সংক্রমিত হন। তাঁর সঙ্গে আরও একজন সদস্য সংক্রমিত হলেও তাঁর অবস্থা ভালো।

    আক্রান্ত ৩৯২ পুলিশ

    করোনাভাইরাসে ঝুঁকির মধ্যে কাজ করতে গিয়ে পুলিশে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। গত ৫ দিনে সারাদেশে ১৭৪ জন পুলিশ সদস্য নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন করোনাভাইরাসে। গত ২৩ এপ্রিল আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২১৮। তা বেড়ে আজ বুধবার দাঁড়িয়েছে ৩৯২ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে কনস্টেবলদের সংখ্যাই বেশী।

    সবচেয়ে বেশি পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন ঢাকায়। তারপরেই রয়েছে গাজীপুর, গোপালগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ সদস্যরা আক্রান্ত হয়েছেন। ঢাকাতে আজ সকাল পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৮১। এর মধ্যে ১২ জন নারী সদস্য।

    পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীসহ সারাদেশেই টহলসহ সাধারণ মানুষের জান-মালের নিরাপত্তায় এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দিন-রাত কাজ করতে হচ্ছে পুলিশকে। দিন-রাত মহাসড়কে, শহরের অলি-গলিতে দাযিত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা। একই সাথে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করন ও কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতেও ছুটে যাচ্ছেন তারা। অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যুর পর লাশ উদ্ধার করে মর্গে নিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর পর যখন জানাযা, দাফন করাতে কেউ এগিয়ে যেতে চায় না তখনও এগিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।এর ফলে কখন কিভাবে কে আক্রান্ত হচ্ছে তা বোঝা দুষ্কর হয়ে যায়।

    আক্রান্ত ১০ কারারক্ষী

    ওদিকে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ১০ জন কারারক্ষী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। গত কয়েক দিনে তাদের একাধিকবার পরীক্ষা করা হলে ফলাফল পজিটিভ আসে।

    এই ১০ জন বর্তমানে জিঞ্জিরা ২০ শয্যা হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মিরপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

    ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুর ইসলাম গণমাধ্যম‌কে বিষয়‌টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি ব‌লেন, আক্রান্তদের ১০ জনই পুরান ঢাকার কারাগারে থাকতেন। তাদের দায়িত্ব ছিল অসুস্থ বন্দিদের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো। কিছুদিন আগে এক কারারক্ষী প্রথমে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এদের সংস্পর্শে যারা এসেছে তাদেরসহ পুরান ঢাকার কারাগারে থাকা আরও বেশ কয়েকজনের করোনা পরীক্ষা করা হলে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানায় করোনা পরীক্ষায় তাদের পজিটিভ এসেছে।পার্সটুডে